নবান্ন অভিযানে অশান্তি নিয়ে সক্রিয় হাই কোর্ট। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বিজেপির নবান্ন অভিযানে পুলিশি হামলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাই কোর্ট। বিজেপি এবং রাজ্য সরকারের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী সোমবারের (১৯ সেপ্টেম্বর) মধ্যে এই ঘটনার রিপোর্ট দিতে হবে স্বরাষ্ট্রসচিবকে।
পাশাপাশি, প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, বিজেপির রাজ্য দফতরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্যকে। নবান্ন অভিযানের মিছিলকে কেন্দ্র করে অপ্রয়োজনীয় ভাবে যে কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি, তা-ও রাজ্যকে নিশ্চিত করতে বলেছে হাই কোর্ট।
বিজেপির সুবীর স্যানাল এবং সুস্মিতা সাহা দত্তের দ্রুত শুনানির আবেদন গ্রহণ করে মঙ্গলবার বিকেলে মামলা ফাইল করার অনুমতি দেন প্রধান বিচারপতি। বিজেপির তরফে প্রাথমিক অভিযোগ শোনার পরে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শুনানি মুলতুবি ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ৫টার পরে ফের শুরু হয় শুনানি।
বিজেপির আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, পূর্ব ঘোষিত একটি কর্মসূচিতে পরিকল্পনা মাফিক আক্রমণ করেছে পুলিশ। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বেআইনি ভাবে আটক করা হয়েছে। কোনও কারণ ছাড়াই বিজেপি কর্মীদের মারধর করার পাশাপাশি পুলিশ রাজ্য বিজেপির দফতরে ঢুকে নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে অভিযোগ করেন, বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে।
রাজ্যের তরফে সওয়াল করতে গিয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আদালতে বলেন, ‘‘বিজেপির কর্মসূচির নাম ‘নবান্ন অভিযান’। নবান্নের চারিদিকে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। ফলে সেখানে অবৈধ জমায়েত বা মিছিলে পুলিশ বাধা দেবে সেটাই স্বাভাবিক। আন্দোলনকারীদের পুলিশ বার বার পিছিয়ে যেতে বলেছে।’’
পাশাপাশি, বিজেপির আইনজীবীদের ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের যুক্তি’ খারিজ করে তিনি বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ মিছিলের কথা বলা হচ্ছে। প্রচুর সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। ইট ছোড়া হয়েছে। কলকাতার এমজি রোড, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর হয়েছে। রাস্তার বাতিস্তম্ভ, পুলিশের কিয়স্ক ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি পুলিশ কর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে অনেক বেশি পুলিশ। এটাই কি শান্তিপূর্ণ মিছিলের নমুনা? শান্তি বজায় রাখার জন্যই পুলিশ আটক করেছে।’’
তখন সুবীর এবং সুস্মিতা আদালতের কাছে জানতে চান, কেন আটক করা হল বিজেপি কর্মীদের? তাঁদের অভিযোগ, যে এলাকার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল হাওড়া পুলিশ। সেই এলাকায়ই তো মিছিল প্রবেশই করতে পারেনি। আটক তখনই করা যায় যখন ওই এলাকায় প্রবেশ করা হবে। এখানে তো কেউ যেতেই পারেনি। তাঁদের যুক্তি, তিনটি ট্রেন ভাড়া করে কর্মী-সমর্থকরা আসছিলেন কোথায় কিছু হয়নি। এখানেই কেন ঘটল তা-ও দেখা দরকার। আমরা জানি কী ভাবে সরকারি সম্পত্তির যত্ন নিতে হয়।’’
এর পর প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এজির কাছে জানতে চায়, রাজ্য দফতরে পুলিশ ঢুকে হামলা চালানোর যে অভিযোগ উঠেছে রাজ্য এ নিয়ে কী বলবে? ঘটনা নিয়ে সোমবারের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেন তাঁরা। আটক প্রত্যেককে ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হবে আদালতকে আশ্বস্ত করেন এজি। সন্ধ্যায়, লালবাজার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে আমাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর বিরুদ্ধে ফের আবেদন জানাব আদালতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy