Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee

প্রয়োজনে অভিষেককে প্রশ্ন করতে পারে ইডি-সিবিআই, কুন্তল-পত্র নিয়ে পর্যবেক্ষণ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের

কুন্তল ঘোষের অভিযোগ, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকেরা। জেলে বসে ইডি এবং সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে চিঠি লিখেছিলেন তিনি।

CBI and ED can interrogate Abhishek Banerjee if necessary, said Justice Abhijit Gangopadhyay in Kuntal Ghosh’s allegation on central agencies.

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শহিদ মিনারের সভা থেকে দেওয়া অভিষেকের বক্তৃতার অংশ তদন্তের বাইরে রাখা উচিত নয়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৫১
Share: Save:

নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় প্রয়োজনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি। এই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁর পর্যবেক্ষণ, চাইলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার বিরুদ্ধে লেখা ওই চিঠি নিয়ে অভিষেক এবং কুন্তলকে প্রশ্ন করতে পারবেন ইডি এবং সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।

নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল এখন জেলবন্দি। তাঁকে আদালতে হাজির করানোর সময় কুন্তল একাধিক বার বলেছেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করার জন্য ‘চাপ’ দিচ্ছে। জেল থেকে ইডি এবং সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ করে চিঠিও লিখেছিলেন কুন্তল। সেই চিঠিতেও হুগলির বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতার অভিযোগ ছিল, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকেরা। কুন্তলের অভিযোগপত্র প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল হেস্টিংস থানায়। সম্প্রতি নিম্ন আদালতের বিচারকের কাছেও একই মর্মে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কুন্তল। বুধবার কুন্তলের অভিযোগের বিষয়টি কলকাতা হাই কোর্টে তুলেছিল ইডি। সেই মামলাতেই বৃহস্পতিবার অভিষেক সংক্রান্ত এমন পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

গত ২৯ মার্চ শহিদ মিনারের সভা থেকে অভিষেক দাবি করেছিলেন, সারদা মামলায় হেফাজতে থাকার সময় মদন মিত্র এবং কুণাল ঘোষকে তাঁর নাম নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনাচক্রে, কুন্তলও তার পরে একই অভিযোগ করেন। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, একটি সভায় অভিষেক বলেছিলেন তাঁর নাম বলার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে চাপ দেওয়া হয়েছিল। অভিষেকের মন্তব্যের সঙ্গে কুন্তলের চিঠির কোথায় সাযুজ্য রয়েছে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে বলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আরও নির্দেশ, আদালতের অনুমতি ছাড়া রাজ্যের কোনও থানা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই এবং ইডির আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারবে না। কুন্তলের চিঠির প্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ ছাড়া হেস্টিংস থানাও কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শহিদ মিনারের সভা থেকে দেওয়া অভিষেকের বক্তৃতার অংশ তদন্তের বাইরে রাখা উচিত নয়। ২৮ এপ্রিল ইডি এবং সিবিআই এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেবে। প্রয়োজন মনে করলে তারা জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিয়ো রেকর্ডও করতে পারবে।

২১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের প্রবেশ এবং বাহিরপথের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরবর্তী শুনানিতে তা আদালতে আনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, ওই সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে কারা গিয়েছিলেন, তা জানতে ‘ভিজ়িটর্স’ খাতার আসল কপি জেল কর্তৃপক্ষকে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার আরও জানিয়েছেন, কুন্তলের চিঠির প্রেক্ষিতে ইডি আবেদন করায় তাদের রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে। তবে সিবিআই আবেদন না করলে রক্ষাকবচ দেওয়া যাবে না বলেও তিনি সিবিআইয়ের আইনজীবীকে জানান।

ইডি আদালতে জানায়, ২০ জানুয়ারি কুন্তলের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। ২১ জানুয়ারি তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সে দিনই তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। আদালত তাঁকে ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। তার পরের দফায় কুন্তলকে আদালতে হাজির করানো হয় ৩ ফেব্রুয়ারি। ইডি হেফাজতে থাকাকালীন ২৪ ঘণ্টা সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে ছিলেন কুন্তল। পাশাপাশি, প্রতি ৪৮ ঘণ্টায় তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়েছে। তখনও পর্যন্ত তিনি ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কোনও অভিযোগ করেননি। কুন্তলের অভিযোগের সূত্রপাত হয়েছিল গত ৩০ মার্চ। ওই দিনটি নজরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে ইডির আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন। ৩১ মার্চ নিম্ন আদালতে ইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে চিঠি পাঠানো হয় কুন্তলের তরফে। ১ এপ্রিল ওই চিঠি যায় হেস্টিংস থানায়। যদিও আদালতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, অভিযোগ করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি।

মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সওয়াল, ওই চিঠির বিভিন্ন অংশ দেখে তিনি নিশ্চিত যে, তার পিছনে ‘বাইরের কোনও হাত’ রয়েছে। চিঠির খসড়া বাইরের কেউ লিখেছেন বলেও তাঁর দাবি। বিকাশরঞ্জন আরও জানিয়েছেন, চিঠিতে লেখা হয়েছে ২১ মার্চ কুন্তলকে গ্রেফতার করে ইডি। অথচ গ্রেফতার করা হয়েছে ২১ জানুয়ারি। ২৯ মার্চ শহিদ মিনারে অভিষেকের সভার পরই এই চিঠি লেখার ঘটনা ঘটেছে বলে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিকাশরঞ্জন।

বুধবার কুন্তলের অভিযোগের কথা কলকাতা হাই কোর্টে তোলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। আদালতে ইডি জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের মাধ্যমে হেস্টিংস থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন কুন্তল। এর ফলে তাদের তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। তাদের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘এটা মারাত্মক প্রবণতা! তদন্তকারী আধিকারিকদের হুমকি এবং তদন্তের গতি স্তব্ধ করার জন্য এ সব করা হচ্ছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ সব বন্ধ করতে হবে। এই অতিচালাকি বরদাস্ত করা যাবে না।’’

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এ-ও জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, কুন্তলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইডির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না কলকাতা পুলিশ। বুধবার কুন্তলের অভিযোগ সংবলিত অভিযোগপত্রটি সিবিআই এবং ইডির হাতেও তিনি তুলে দিতে বলেছিলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE