সিএপিএফ (সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স) নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন জওয়ান মহেশ চৌধুরীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক কোটি টাকার হদিস মিলেছে বলে আদালতে দাবি করল সিবিআই। তাদের আরও দাবি, ভুয়ো নথি (ডোমিসাইল শংসাপত্র) তৈরি করে ভিন্রাজ্যের বাসিন্দাদের এ রাজ্য থেকে আধাসেনায় চাকরি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মহেশ। সে কারণে মহেশকে নিজেদের হেফাজতে রেখে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সিএপিএফ নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গত ৩১ জানুয়ারি মহেশকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। ৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবার পর্যন্ত তাঁকে সিবিআই হেফাজতে পাঠিয়েছিল আদালত। বুধবার হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে তাঁকে সিবিআই বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয়। সিবিআই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে রেখে দেওয়ার আবেদন জানায়। তারা দাবি করেছে, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের প্রার্থীদের ভুয়ো ডোমিসাইল শংসাপত্র তৈরি করিয়ে দিতেন মহেশ। আর সেই ভুয়ো নথির ভিত্তিতেই সিএপিএফে চাকরি পাইয়ে দিতেন তিনি।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ যে হেতু সীমান্ত লাগোয়া রাজ্য, তাই আধাসেনা বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এখানকার বাসিন্দারা কিছু ছাড় পান। অভিযোগ, সে কারণে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের চাকরিপ্রার্থীরা নিজেদের এ রাজ্যের বাসিন্দা দেখিয়ে আধাসেনার নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এ রাজ্যে বাসের প্রমাণ দিতে ভুয়ো শংসাপত্র (ডোমিসাইল সার্টিফিকেট)-ও দাখিল করেন তাঁরা। সিবিআইয়ের দাবি, এই ভুয়ো ডোমিসাইল শংসাপত্রই তৈরি করিয়ে দিতেন মহেশ। এ জন্য মাথাপিছু চার থেকে ছয় লক্ষ টাকা নিতেন তিনি। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে এক কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেছে সিবিআই।
আরও পড়ুন:
যদিও অভিযুক্তের আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য আদালতে জানিয়েছেন, সম্পত্তি বিক্রি করে ওই টাকা পেয়েছেন তাঁর মক্কেল। তিনি আরও বলেন, ‘‘জাল শংসাপত্র কারা তৈরি করেছেন? যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁরা কোথায়? প্রতিবেশী রাজ্যের লোকও চাকরি পেয়েছে, বলা হচ্ছে। তা হলে তাঁরা কোথায়?’’ সিবিআই দাবি করেছে, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের প্রার্থীদের ভুয়ো ডোমিসাইল শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী জানিয়েছেন, জেরার সময় অভিযুক্ত মহেশ আরও কয়েক জন সন্দেহভাজনের নাম প্রকাশ করেছেন। তাই তাঁকে হেফাজতে রেখে আরও জেরার প্রয়োজন।
সিএপিএফ-এর কনস্টেবল নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। অভিযোগ, ২০২১ এবং ২০২২ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু প্রার্থী ভুয়ো ডোমিসাইল শংসাপত্র ব্যবহার করেছেন। তাঁরা এ রাজ্যের বাসিন্দা না হয়েও তা হওয়ার দাবি করেছেন। দু’জন চিহ্নিত অভিযুক্ত-সহ অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে সিবিআই। চিহ্নিত দুই অভিযুক্তের মধ্যে অন্যতম মহেশ। তিনি এক কেন্দ্রীয় বাহিনীতে সেপাই পদে কর্মরত ছিলেন। এখন উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং স্টোর ডিপোয় কর্মরত।