E-Paper

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি মাপবে ষোড়শ অর্থ কমিশন

বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির প্রশ্নে কেন্দ্র-রাজ্যের হিসাবে ফারাক তৈরি হয় প্রতি বার। অর্থাৎ, রাজ্য যে ক্ষয়ক্ষতির দাবি করে, কেন্দ্রের বর্তমান মূল‍্যায়ন পদ্ধতিতে তা অনেকটা কম হয়।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:০৭
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে হওয়া আর্থিক ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের বিষয়টি নবগঠিত ষোড়শ অর্থ কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত (টার্মস অব রেফারেন্স বা টিওআর) করার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই বিষয়টি ওই অর্থ কমিশন যে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এখন চালু থাকা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের আমলে এই আর্থিক ক্ষতিপূরণের পদ্ধতি ও বকেয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের অভিযোগ— ক্ষয়ক্ষতির যা আর্থিক পরিমাণ হয়, তার থেকে অনেক কম টাকা পাওয়া যায়। নতুন ব্যবস্থাকে তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির প্রশ্নে কেন্দ্র-রাজ্যের হিসাবে ফারাক তৈরি হয় প্রতি বার। অর্থাৎ, রাজ্য যে ক্ষয়ক্ষতির দাবি করে, কেন্দ্রের বর্তমান মূল‍্যায়ন পদ্ধতিতে তা অনেকটা কম হয়। যা নিয়েই বিতর্ক এবং রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়। নতুন মূল্যায়ন ব‍্যবস্থা সেই বিতর্কে রাশ টানতে পারে।

বস্তুত রাজ্যের দাবি, একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হয় বিপুল। অতীতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হোক বা ভিন্ন কোনও মঞ্চ— এই খাতে কেন্দ্রের থেকে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যায় না বলে দাবি করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ষোড়শ অর্থ কমিশনের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিদলের কাছেও এ নিয়ে সরব ছিলেন মমতা। এমনকি, কেন্দ্রের ডাকা প্রাক্-বাজেট বৈঠকেও এ ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল রাজ্য।

এখন পঞ্চদশ অর্থ কমিশন কাজ করছে। ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য অরবিন্দ পানাগাড়িয়ার পৌরহিত্যে গঠিত ষোড়শ অর্থ কমিশন স্থির করবে, দেশের মোট রাজস্বের থেকে কোন খাতে কত পরিমাণ অর্থ রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। সেই কমিশনের টিওআর-এর আওতায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খাতে বরাদ্দের বিবেচনাকেও রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় বর্তমান আর্থিক বন্দোবস্ত পুনর্বিবেচনা করে তার সংশোধিত রূপ প্রস্তাব আকারে পেশ করতে পারে কমিশন।

রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “এর অর্থ, বর্তমান ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের খাতে যত পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায়, সংশোধিত প্রস্তাবে তার থেকে বেশি পরিমাণ অর্থ পেতে পারে রাজ্য। কারণ, যে রাজ্যগুলিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি বেশি, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম।” প্রসঙ্গত রাজ্যের দাবি, ২০১৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ১৪৯.৩৭ কোটি টাকা। যদিও ‘ডিজ়াস্টার রিলিফ ফান্ড’-এর বিধির বিচারে তা প্রায় ৪৯ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, গত ২০ ডিসেম্বর কেন্দ্রের ডাকা প্রাক্-বাজেট বৈঠকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নানা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তুলে ধরে রাজ্য। ক্ষতির অনুপাতে আর্থিক সহায়তা কেন্দ্রের থেকে যথাযথ ভাবে যে পাওয়া যাচ্ছে না, তা-ও উল্লেখ করেছিলেন রাজ্যের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সূত্রের দাবি, বৈঠকে বলা হয়েছিল, রাজ‍্যের প্রায় ৪২% এলাকা নানা ভাবে প্রভাবিত হয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে। তার পরেও কেন্দ্রের তরফে যথাযথ অনুদান মিলছে না। বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তিনি জানিয়েছিলেন, কেন্দ্র যে দীর্ঘমেয়াদী সুদবিহীন ঋণ নেয়, তার ৫০% রাজ‍্যগুলির মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতিপূরণ খাতে ভাগ করে দেওয়া হবে। এই সূত্রে নতুন অর্থ কমিশনের বিবেচনাতেও এ ব‍্যাপারে যথাযথ মূল্যায়ন আশা করছে রাজ‍্য।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sixteenth Finance Commission Natural Disasters natural calamities compensation Central Government PM Narendra Modi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy