Advertisement
০২ মে ২০২৪
Partha Chatterjee

Partha Chatterjee: পার্থের ‘অতি পরিচিত’ মোনালিসা কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না, ছুটিতে না আড়ালে

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, মোনালিসা এখন আর বাংলা বিভাগের প্রধান নন। তিনি বছর দুয়েক ওই পদে নেই বলেই দাবি কলা বিভাগের ডিনের।

কোথায় মোনালিসা দাস?

কোথায় মোনালিসা দাস?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ১৯:১০
Share: Save:

মোনালিসা দাস কোথায়? পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মহলের আলোচনায় যে গুটিকয়েক নাম চর্চিত হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম মোনালিসা। কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষিকা। পার্থকে নিজের ‘অভিভাবক’ বলে ব্যাখ্যা করা মোনালিসার কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন ধরছেন না। হোয়াট্সঅ্যাপে পাঠানো বার্তাও তিনি দেখছেন না। গুঞ্জন, তাঁকে নাকি ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করছে! কিন্তু তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে আবার তেমন কিছু জানানো হয়নি।

গত শুক্রবার পার্থের বাড়িতে যখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদ করছে তাঁকে, তখন ‘খবর’ ছড়িয়ে পড়ে, মোনালিসার শান্তিনিকেতনের একাধিক বাড়িতে ইডি ইতিমধ্যেই তল্লাশি চালিয়েছে। কয়েকটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছিল, মোনালিসার উপরেও নাকি ‘নজর’ রেখেছে ইডি। গত এক সপ্তাহ ধরে আলোচনায় এসেছে মোনালিসার শিক্ষকজীবন এবং তাঁর উত্থানের কাহিনি। সব কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে পার্থের নাম।

প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ‘অনুগ্রহ’তেই নাকি মোনালিসার এই ‘বেড়ে ওঠা’। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পদোন্নতি, মোনালিসার তত্ত্বাবধানে পিএইচডি করা ছাত্রছাত্রীদের ‘সুবিধা’ পাইয়ে দেওয়া, তাঁদের চাকরির ক্ষেত্রেও ‘অনুচিত অগ্রাধিকার’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেখানেও পার্থের নাম জোড়া হয়েছে। অনেকের মতে, পার্থের সঙ্গে নিজের ‘পরিচিতি’-কে ব্যবহার করে মোনালিসা নিজেকে ‘প্রভাবশালী’ করে তুলেছিলেন।

অনেকে বলতে শুরু করেছেন, শান্তিনিকেতনের একাধিক বাড়িতে সপ্তাহান্তে যেতেন পার্থ-মোনালিসা। যদিও এ সব অভিযোগ শুনে সপ্তাহখানেক আগে মোনালিসা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, এর পুরোটাই ‘অসত্য’। তাতে জল্পনা থামেনি। বরং তাঁর পদোন্নতি, সম্পত্তি, ছাত্রছাত্রীদের চাকরি পাওয়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক, বিদেশভ্রমণ— সব কিছু নিয়ে চুলচেরা আলোচনা চলেছে। সেই আলোচনায় এমন কথাও উঠে এসেছে যে, পার্থের কাছে ‘সুপারিশ’ করেই তিনি এ সব ‘বাগিয়েছিলেন’।

এর মধ্যে এক বারের জন্যেও মোনালিসাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। মুখ খোলেননি সংবাদমাধ্যমেও। শুক্রবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু মোনালিসার ফোন বেজে গিয়েছে একাধিক বার। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করলেও সেটিতে ‘ব্লু টিক’ পড়েনি। অর্থাৎ তিনি শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই বার্তা দেখেননি। তবে দু’দিন আগে হোয়াটসঅ্যাপে ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার) পাল্টেছেন। আগে কালো শাড়ি পরা নিজের একটি ছবি ছিল সেখানে। এখন গাছ-সহ একটি লাল প্রস্ফুটিত জবা ফুল।

শুক্রবার কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীকে মোনালিসার বিষয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘‘কোন শিক্ষক কবে কখন আসেন, তা আমার জানার বিষয় নয়। আমি জানিও না। ওটা ডিন দেখেন। আর এখন তো ক্লাস চলছে না। সামনেই পরীক্ষা। সব বিষয় অনলাইনেই হয় আজকাল। গবেষণার কাজ থাকলে তবেই আসতে হয়। না হলে নয়। তবে মোনালিসাদেবীর ব্যাপারটা আলাদা করে বলতে পারব না।’’

কলা বিভাগের ডিন শান্তনু ঘোষ বলেন, ‘‘আমি আসলে বিজ্ঞান বিভাগের ডিন। আমাকে উপাচার্য কলা বিভাগটা সাময়িক ভাবে দেখতে বলেছেন। আমি চার্জে আছি। মোনালিসাদেবী আজকালের মধ্যে আসেননি। ছুটিতে আছেন। কত দিন, সেটা ওঁর বিভাগের প্রধান বলতে পারবেন।’’ কিন্তু মোনালিসাই তো বাংলা বিভাগের প্রধান! শান্তনুর জবাব, ‘‘কে বলল! এখন তো উত্তম মণ্ডল বাংলা বিভাগের প্রধান। মোনালিসাদেবী বছর দুয়েক আর ওই পদে নেই।’’

আদতে নদিয়ার পায়রাডাঙার বাসিন্দা মোনালিসা কর্মসূত্রে থাকতেন আসানসোল শহরের শশিভূষণ গড়াই রোডের বরফকল মোড়ের একটি ভাড়াবাড়িতে। সেই বাড়ির মালিক সরোজ বর্মণ বলেন, ‘‘প্রতি মাসের ১০ তারিখে ম্যাডাম অনলাইনে বাড়িভাড়াটা দিয়ে দেন। আজ তো সবে ২৯। আরও দিন বারো বাকি। তবে উনি এ সপ্তাহে আমাদের এই বাড়িতে আসেননি।’’ অন্য কোথাও গিয়েছেন কি না, তা সরোজ বলতে পারেননি।

পায়রাডাঙার বাসিন্দা সুপ্রতীক চক্রবর্তী সম্পর্কে মোনালিসার মামা। তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ সবের মধ্যে আমার ভাগ্নি কোনও ভাবেই জড়িত নয়। তাই এ নিয়ে কিছু বলব না।’’ মোনালিসা কোথায় আছেন? সুপ্রতিক প্রথমে বলেন, ‘‘খড়দহ।’’ তার পর বললেন, ‘‘জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee Monalisa Das ED
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE