Advertisement
E-Paper

‘২০২৪ সালের মধ্যে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেবেন তো’? কেন্দ্রীয় গেজেট বিজ্ঞপ্তি নিয়ে প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর

কেন্দ্রীয় সরকার গত ১ সেপ্টেম্বর একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে বা ধর্মীয় নিপীড়নের ভয়ে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে আসা, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৩৩
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

২০২৪ সালের মধ্যে যাঁরা এ দেশে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে তো? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন কয়েক পরে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নই তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে তিনি এই আশ্বাসও দিলেন যে, কারও নাগরিকত্ব তিনি কাড়তে দেবেন না। পাশাপাশি কটাক্ষ করে এ-ও জানালেন যে, ভোটের আগেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ‘ক্যা ক্যা’ (সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) শুরু করে।

২০২৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমে ভোট। তার আগে কেন্দ্রীয় সরকার ১ সেপ্টেম্বর একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে বা ধর্মীয় নিপীড়নের ভয়ে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে আসা, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে। এই নিয়েই বৃহস্পতিবার বিধানসভায় প্রশ্ন তুললেন মমতা। বাংলা ভাষার ‘অপমান’ এবং ভিন্‌রাজ্যে বাঙালিদের ‘হেনস্থা’র বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ছিল বিধানসভায়। সেই আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারকে প্রশ্ন করে বললেন, ‘‘২০২৪ সাল পর্যন্ত যাঁরা এসেছেন, তাঁদের রেশন, নাগরিকত্ব, সাংবিধানিক অধিকার দেবেন তো?’’ তার পরেই তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা কারও নাগরিক অধিকার কাড়তে দেব না।’’ তিনি ঠারেঠোরে এ-ও বোঝাতে চাইলেন যে, ভোটকে পাখির চোখ করেই এই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট এলেই ওরা (কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার) ক্যা ক্যা করে বেড়ায়।’’

কেন্দ্র যে নির্দেশনামা দিয়েছে, তার নিহিত অর্থ, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হয়ে বা ধর্মীয় উৎপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে যে সব হিন্দু বাঙালি মূলত পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ত্রিপুরায় পালিয়ে এসেছেন, তাঁদের কাছে বৈধ কাগজপত্র থাক বা না-থাক, যদি তাঁদের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়েও যায়, তাঁরা সকলেই শরণার্থীর মর্যাদা পাবেন। ভারতে থাকতে পারবেন। বিজ্ঞপ্তির সাব সেকশন ‘ই’-তে কেন্দ্র জানিয়েছে, ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু বাঙালিদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে। তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না। পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমের হিন্দু জনগণের একটা বড় অংশের মধ্যে ‘পুশব্যাক’ আতঙ্ক কাজ করছিল। মনে করা হচ্ছে তা দূর করতে চাইল কেন্দ্রীয় সরকার। আর সেই নিয়েই প্রশ্ন তুললেন মমতা। তিনি সংশয় প্রকাশ করে জানালেন, এ রকম আদৌ হবে তো? তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা ক্যা ক্যা করে চিৎকার করে, কাউকে নাগরিকত্ব দেয়নি। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড গেম।’’ তার পরেই তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘কোচবিহারের রাজবংশী ভাই কেন হেনস্থার শিকার হলেন? কেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজনের উপর অত্যাচার হল?’’

সম্প্রতি দিনহাটার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে এনআরসি নোটিস পাঠিয়েছে অসমের বিজেপি সরকার। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম নথি তুলে ধরে জানান, ১৯৬৬ সালে প্রথম ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত হয়েছিল উত্তমের। এর পরে কোচবিহারের আরও এক জনকে এনআরসি নোটিস পাঠানো হয়। তাঁর নাম নিশিকান্ত দাস। এই প্রসঙ্গে মমতা অভিযোগ করেন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার আবার বিধানসভায় কটাক্ষ করেন মমতা।

অন্য দিকে, মহারাষ্ট্রের এক মতুয়া পরিবার হেনস্থার মুখে পড়েছিল বলে অভিযোগ। রাজ্যের শাসকদল অভিযোগ করে, হেনস্থার মুখে যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা মতুয়া। তাঁদের কাছে বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের সই করা কার্ডও রয়েছে। তার পরেও তাঁরা মহারাষ্ট্রের পুণেতে পুলিশের হেনস্থার মুখে পড়েছেন। এই প্রসঙ্গই বৃহস্পতিবার উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে। তিনি জানান, বাংলাভাষীদের অপমান করছে বিজেপি। তিনি বা তাঁর সরকার কোনও ভাষার বিরোধী নন। তিনি বিজেপির উদ্দেশে বলেন, ‘‘বাংলাকে অসম্মান করছেন কেন? এরা বাংলা জানে না। বাংলার আন্দোলন জানে না। বাংলা জাতীয় সঙ্গীত তৈরি করেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় এদের জন্ম হয়নি। এরা ইংরেজদের দালালি করেছিল। এরা বাংলার কিছু জানে না।’’

Mamata Banerjee CAA NRC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy