আগামী বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে সমঝোতার মহড়া সেরে রাখতে চাইছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। নদিয়া জেলার ওই বিধানসভা আসনে প্রার্থী দিচ্ছে কংগ্রেসই। তাদের প্রার্থী হচ্ছেন কাবিলউদ্দিন শেখ। কংগ্রেসের দাবি মেনে বামেরা ওই আসন তাদের শেষ পর্যন্ত ছেড়েই দিচ্ছে। সূত্রের খবর, বামফ্রন্টের দ্বিতীয় দফার বৈঠকে এই অবস্থান ঠিক হয়ে গিয়েছে। এর পরে বামফ্রন্টের তরফে বিবৃতি দিয়ে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির স্বার্থে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এআইসিসি শুক্রবার রাতে কালীগঞ্জের প্রার্থী হিসেবে কাবিলউদ্দিনের নামে সিলমোহর দিয়েছে। পুলিশের চাকরি ছেড়ে পুরো সময়ের রাজনীতি বেছে নেওয়া কাবিলউদ্দিন এলাকায় পরিচিত মুখ। গত বছর লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী এস এম শাদি কালীগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় প্রায় ১৯% ভোট পেয়েছিলেন কংগ্রেসের সমর্থনে। সেই ভোট ধরে রাখা এবং যথাসম্ভব বাড়ানো এ বার উপনির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস জোটের প্রথম লক্ষ্য হতে চলেছে। প্রার্থী হিসেবে নাম চূড়ান্ত হওয়ার পরে কাবিলউদ্দিন বলেছেন, ‘‘এই উপনির্বাচনে সরকারের পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আগামী ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচন ধর্মীয় মেরুকরণ এবং সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। কালীগঞ্জের মানুষের কাছে আবেদন করব, তাঁদের যন্ত্রণার কথা বিধানসভায় বলার সুযোগ করে দিন।’’ ওই কেন্দ্রের প্রয়াত বিধায়ক নাসিরুদ্দিন (লাল) আহমেদের কন্যা আলিফা আহমেদকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
বামেদের সঙ্গে সমঝোতা করে নদিয়ার ওই আসনে ২০১৬ ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসই। এ বার অবশ্য আরএসপি বামফ্রন্টে তাদের পুরনো ভাগের আসন কালীগঞ্জে লড়ার দাবি করেছিল। পক্ষান্তরে, গত দু’বারের মতো উপনির্বাচনেও তাঁদের লড়াই করার দাবি বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে জানিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এ দিন সন্ধ্যায় ফ্রন্টের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সিপিএম নিজে বা আরএসপি কেউই ওই আসনে লড়বে না। আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গেই সমঝোতা করা হবে। এই সূত্রই আগের বৈঠকে দেওয়া হয়েছিল আর এক শরিক সিপিআইয়ের তরফে। বাম সূত্রের খবর, আপাতত মেনে নিলেও আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক তপন হোড় দাবি করেছেন, বিধানসভা ভোটের সময়ে আসন-ভাগের ক্ষেত্রে এই সূত্রই যেন চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া না হয়। বিমান ছাড়াও সিপিএমের তরফে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী ফ্রন্টের বৈঠকে ছিলেন। জেলায় থাকায় দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বৈঠকে থাকতে পারেননি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘বৃহত্তর লক্ষ্য মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, এর আগের দফায় রাজ্যে ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আলাদা লড়াই করে বাম ও কংগ্রেস, দু’পক্ষই শোচনীয় ফল করেছিল। শুভঙ্কর প্রদেশ সভাপতি হওয়ার পরে এই উপনির্বাচনেই প্রথম বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা হতে চলেছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)