Advertisement
E-Paper

মমতার ‘লুকোচুরি’ নিয়ে প্রশ্ন কংগ্রেসের

কংগ্রেস নেতৃত্বের যুক্তি, বিরোধী শিবিরে থেকে তৃণমূলের এই ‘লুকোচুরি খেলা’ চলতে পারে না। কংগ্রেসের এই মমতা-বিরোধী অবস্থানে বিরোধী শিবিরের ঐক্য নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১৫
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ফাইল চিত্র।

সিবিআই-ইডির ‘রাজনৈতিক অপব্যবহার’ নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ায় আজ সর্বভারতীয় কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লুকোচুরি খেলা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলল।

এত দিন পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা নরেন্দ্র মোদী-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে গোপন আঁতাঁতের অভিযোগ তুলছিলেন। কিন্তু গত কাল মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর বিষয়ে মোদীকে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ায় আজ জাতীয় কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে— মোদীকে কেন ‘ক্লিনচিট’ দিচ্ছেন মমতা? কংগ্রেস নেতৃত্বের যুক্তি, বিরোধী শিবিরে থেকে তৃণমূলের এই ‘লুকোচুরি খেলা’ চলতে পারে না। কংগ্রেসের এই মমতা-বিরোধী অবস্থানে বিরোধী শিবিরের ঐক্য নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, কংগ্রেসের বক্তব্য শোনার পরে তৃণমূলও পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে।

সিবিআই-ইডির ‘রাজনৈতিক অপব্যবহার’ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত কাল বিধানসভায় বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ সব করাচ্ছেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার অভিযোগ পুরোটাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপরে চাপিয়ে দেন মমতা।

প্রধানমন্ত্রীর জন্য মমতার এই ‘শংসাপত্র’ নিয়ে আজ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও অবস্থান স্পষ্ট করতে হয়েছে। কারণ, খোদ মোদীর সঙ্গে মমতার বোঝাপড়ার বার্তা গেলে দলের কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হবে। পশ্চিমবঙ্গের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় বলেন, ‘‘বিজেপিতে কারও এবং অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে শংসাপত্রের প্রয়োজন নেই। মমতার গোটা সরকার, শীর্ষ মন্ত্রী, দলের পদাধিকারী, পরিবারের সদস্যরা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার রেডারে রয়েছে। কারণ, আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ওঁকে লুটের জবাবদিহি করতেই হবে।’’

মোদীকে মমতার শংসাপত্র নিয়ে আজ সর্বভারতীয় কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘‘আমি জানি না উনি মোদীজিকে ছেড়ে কেন অমিত শাহকে আক্রমণ করতে চাইছেন। জানি না, উনি কিভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন যে মোদীজি খুব ভাল। আমি ওঁর কথা নিয়ে মন্তব্য করব না। কিন্তু একটা কথা বলা দরকার। দিল্লিতে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোদীর ছাড়পত্র ছাড়া পাখিও ডানা ঝাপটায় না। উনি যদি মোদীকে ক্লিনচিট দেন, তা হলে প্রশ্ন ওঠে, গোটা দেশ যে সব বিষয়ে প্রশ্ন করছে, তার সব অভিযোগ থেকেই কি উনি মোদীকে ছাড়পত্র দিচ্ছেন?’’ মমতার নাম না করে শ্রীনতে বলেন, ‘‘যদি আপনি লুকোচুরি খেলেন, তা হলে আপনার নীতি, উদ্দেশ্য ও তাতে কালিমা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’’

মমতার এই মোদীকে ছেড়ে শাহকে নিশানার নীতি নিয়ে আজ দিল্লিতে আসা তৃণমূলের সাংসদদেরও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় প্রথমে বলেন, ‘‘সিবিআই তো প্রধানমন্ত্রীর দফতরেরই অধীনে। মমতা হয়তো বোঝাতে চেয়েছিলেন, ওঁর দফতরে কী হচ্ছে, তা মোদী জানেন না।’’ তারপর তিনি বলেন, ‘‘মমতা আমাদের দলের সুপ্রিমো। সুতরাং তিনি যা বলেছেন, তা নিয়ে আমার মন্তব্য করা সাজে না।’’ কংগ্রেসের আক্রমণের জবাবে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘সনিয়া গান্ধী কী বলবেন না বলবেন, তা তৃণমূল ঠিক করে দেয় না। তেমনই মমতা কী বলবেন, তা নিয়ে কংগ্রেসেরও কথা বলার এক্তিয়ার নেই। এ সব অর্বাচীনের মতো উক্তি। কী খেলা হবে না হবে, তা নিয়ে ওঁরা নির্দেশ দেওয়ার কে!’’

কংগ্রেস অবশ্য সুর নরম করতে রাজি হয়নি। উল্টে মমতার বিপরীতে রাহুল গান্ধীর উদাহরণ তুলে ধরে কংগ্রেসের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধী নির্ভয়ে কাজ করেন। আমরা বাকি বিরোধীদের মতো লুকোচুরি খেলি না। একটু সরব হও, আবার পিছিয়ে যাও, এখন ওদের পক্ষে ভোট করা, তারপরে উল্টো অবস্থান নেওয়া, রাজনীতিতে এই লুকোচুরি খেলা চলে না।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী গতকালই বলেছিলেন, মমতা-মোদীর পুরনো আঁতাঁত। ভোটের সময় মোদীর বিরুদ্ধে সরব হলেও এখন মমতা সিবিআই-ইডির থেকে বাঁচতে মোদী-বন্দনা করছেন। আজ আরও সুর চড়িয়ে সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘‘আপনি বিরোধী শিবিরে থাকলে এই লুকোচুরির খেলা চলতে পারে না। আমাদের রণনীতি স্পষ্ট। আমরা সমস্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলব। আমাদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই পাঠান, মিথ্যে প্রচার করুন, ট্রোল সেনা ছেড়ে দিন, আমাদের কিছু যায় আসে না। নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে।’’

মোদী সম্পর্কে মমতার মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। আজ জলপাইগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে এনিয়ে তাঁর মন্তব্য,

‘‘উনি অনেকবার দিল্লিতে গিয়ে বলে আসেন— ‘আমাকে বাঁচাও সাধুবাবা। আমাকে বাঁচাও না হলে আমার ভাইপোকে বাঁচাও সাধুবাবা।’ এই চলছে জপ। বিরোধীদের মধ্যে অটলজি ভাল, আডবাণীজি খারাপ। আডবাণীজি ভাল, মোদী খারাপ। মোদী ভাল, অমিত শাহ খারাপ। তৃণমূলের কিছু নেতা এক সময়ে আমাকে খারাপ বলত। এখন বলে, আমি ভাল। তৃণমূলের মধ্যে আমার এত সমর্থক আছে জানতাম না।’’ দিলীপ বলেন, ‘‘সাধুবাবা কেন, এ বার ভগবানও বাঁচাতে পারবে না। যে অন্যায় করেছে, যে ফাঁদে পড়েছে, বাংলার মানুষ ফুঁসছে, সুযোগ পেলে ছুড়ে ফেলে দেবে।’’

Congress Mamata Banerjee PM Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy