Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
State News

তৃণমূল বিধায়ক খুনে এফআইআর মুকুলের বিরুদ্ধেও, গ্রেফতার ২, সন্দেহ সুপারি কিলার দিয়ে খুন

এই ঘটনায় বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন তৃণমূল মুকুল রায়-সহ সুজিত মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল এবং এলাকার এক বাসিন্দা অভিজিৎ পণ্ডারীর নামে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। 

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বিধায়কের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস হালদার। —নিজস্ব চিত্র। ইনসেটে বিজেপি নেতা মুকুল রায়।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বিধায়কের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস হালদার। —নিজস্ব চিত্র। ইনসেটে বিজেপি নেতা মুকুল রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:০৬
Share: Save:

সুপারি কিলার দিয়েই খুন করা হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসকে। এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। এই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সুজিত মণ্ডল এবং কার্তিক মণ্ডল নামে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া, এখনও পর্যন্ত এক জনকে আটক করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন তৃণমূল মুকুল রায়-সহ সুজিত মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল এবং এলাকার এক বাসিন্দা অভিজিৎ পণ্ডারীর নামে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের দেহ শ্মশানে নিয়ে আসা হয়।

তদন্তকারীদের ধারণা, এলাকা সম্পর্কে আততায়ী রীতিমতো ওয়াকিবহাল। কারণ, ওই এলাকার পরিচিতি না থাকলে এ ভাবে অনুষ্ঠানের ভিতরে ঢুকে সত্যজিৎবাবুকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে খুন করে এত দ্রুত পালানো সম্ভব হত না।

শনিবার রাতে নদিয়ার হাঁসখালিতে সরস্বতী পুজোর একটি অনুষ্ঠানে খুন হন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। ফুলবাড়ি এলাকায় নিজের বাড়ির সামনে পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠান চলাকালীন পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে সত্যজিৎবাবুর কপালে গুলি করে আততায়ী। ঘটনায় আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে যান উপস্থিত সকলে। আর সেই সুযোগে পালায় আততায়ী।

আরও পড়ুন: অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল আমারও

ঘটনার তদন্ত সিআইডি আধিকারিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরই ওই অনুষ্ঠান থেকে সুজিত এবং কার্তিককে পালিয়ে যেতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ছাড়া, খুনের পর থেকে এখনও এলাকাছাড়া অভিজিৎ পণ্ডারী নামে স্থানীয় এক যুবক। খুনের তদন্তে নেমে রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সিআইডি-র একটি দল। এই খুনের পিছনে কে বা কারা জড়িত, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সত্যজিৎবাবুর স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস হালদার দাবি করেছেন, এর পিছনে স্থানীয় কোনও যুবক জড়িত থাকতে পারে। তাঁর কথায়, “স্বামীর কাছ থেকে শুনেছিলাম, ক’দিন আগেই একটি ছেলে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছে। এ ঘটনার পিছনে তার হাত থাকতে পারে।”

আরও পড়ুন: ‘হঠাৎ করে গুলির শব্দ, কিছু বোঝার আগেই দেখি রক্তে ভেসে যাচ্ছে’

ময়নাতদন্তের পর সত্যজিৎবাবুর দেহ নিয়ে আসা হয় হাঁসখালিতে। —নিজস্ব চিত্র।

খুনের কারণ নিয়েও নানা তত্ত্ব উঠে আসছে। এরই মধ্যে এই খুন নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিজেপি-ই সত্যজিৎবাবুকে খুন করিয়েছে। বিশেষ করে এর পিছনে বিজেপি নেতা, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়ের হাত রয়েছে বলে তাঁদের দাবি। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকে আঙুল তুলেছেন মুকুল রায়।

তৃণমূল নেতৃত্ব একে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করলেও বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

প্রথমত, এই এলাকাটি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে গরু পাচার থেকে শুরু করে একাধিক সংগঠিত অপরাধ হয়। ফলে এলাকায় সংগঠিত অপরাধীদের দলেরও রমরমা রয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকার অপরাধের সঙ্গেও এই খুনের ঘটনা যোগ থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে। বছর দেড়েক আগে এই হাঁসখালিতেই দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে খুন করা হয় আর এক তৃণমূল নেতা দুলাল বিশ্বাসকে।

সত্যজিৎ বিশ্বাসকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

দ্বিতীয়ত, এই এলাকায় তৃণমূলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে চাপা দ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে এই খুনের ঘটনার কারণ হিসাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্বকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি, বছর খানেক ধরে এলাকায় বিজেপি-র সংগঠনও জোরাল হয়েছে। ফলে এটি রাজনৈতিক রেষারেষির জের কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ কৃষ্ণনগরে যান তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সকালেই ময়নাতদন্তের পর সত্যজিৎবাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় হাঁসখালিতে। যে মঞ্চের সামনে খুন হন সত্যজিৎবাবু, তার উপরে দেহ এনে রাখা হয়। তাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল-সহ এলাকার মানুষজন। গোটা ঘটনাটি বিজেপি-র ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, “খুনের ঘটনায় জড়িত দোষীরা শাস্তি পাবে।”

(দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের খবর পেয়ে জান আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE