Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

দুঃসময়ে অক্সিজেন নিয়ে দুয়ারে অমিত

মূলত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো ও তার যাবতীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ করেন অমিত।

অমিত চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

অমিত চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
চিত্তরঞ্জন শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ ০৬:৪৫
Share: Save:

অক্সিজেন না পেয়ে রোগী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এমন খবর পেলে সিলিন্ডার, অক্সি-ফ্লো মিটার আর মাস্ক নিয়ে পৌঁছে যান তিনি। অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া— কোনও কাজেই পিছ-পা হচ্ছেন না। দিন-রাতের ফারাকও করছেন না পশ্চিম বর্ধমানের চিত্তরঞ্জন পঞ্চমপল্লির অমিত চক্রবর্তী।

মূলত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো ও তার যাবতীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ করেন অমিত। এই মুহূর্তে হাতে তেমন কাজ নেই। তাই করোনা-রোগীদের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বছর চল্লিশের ওই যুবক জানান, চিত্তরঞ্জন ও লাগোয়া এলাকায় তাঁর অনেক পড়শি অক্সিজেনের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এলাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সি-ফ্লো মিটারের ‘কালোবাজারি’র খবরও কানে এসেছে তাঁর। বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকা সম্ভব নয়।’’

সোশ্যাল মিডিয়া ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে নিজের ফোন নম্বর দিয়েছেন অমিত। কারও অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে তাঁর দু’টি মোবাইল। দিন হোক বা রাত— যখনই সাহায্য চেয়ে ফোন আসছে, তখনই সব জোগাড়যন্ত্র করে পৌঁছচ্ছেন অমিত।

চিত্তরঞ্জনের সিমজুড়ির বাসিন্দা অসিত দাস জানান, করোনা-সংক্রমিত এক আত্মীয়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। রাত তখন ৩টে। অমিতকে ফোন করেন তিনি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই গাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার চাপিয়ে রোগীর বাড়িতে হাজির হন অমিত। রূপনারায়ণপুর লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মিহিজামের বাসিন্দা প্রতীক সাহা বলেন, ‘‘এখানে এখন লকডাউন চলছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ পরিবারের কোভিড-সংক্রমিত এক জনের শরীর খুব খারাপ হয়। দিশাহারা হয়ে অমিতবাবুকে ফোন করি। উনি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে
হাজির হন।’’

অমিত জানিয়েছেন, প্রতিদিন কম-বেশি ১৫ জনের বাড়িতে তাঁকে যেতে হচ্ছে। প্রতি তিন জন পিছু ১০ লিটারের একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগছে। তিন জন রোগী পিছু খরচ হচ্ছে প্রায় ১,৭০০ টাকা। এ রকম গোটা ছ’য়েক সিলিন্ডার রয়েছে তাঁর কাছে, যেগুলি পালা করে ‘রিফিল’ করাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘সব খরচ নিজেই করছি। কারণ, মনে করি, অসময়ের বন্ধুই হলেন প্রকৃত বন্ধু।’’

অমিতের কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সালানপুর ব্লক পিঠাইকেয়ারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক অমরেশ মাজি বলেন, ‘‘করোনা-আক্রান্ত রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অস্বাভাবিক কমে গেলে, তাঁকে দ্রুত অক্সিজেন দিতে হয়। অমিতবাবু সে কাজটি করে আমাদের চাপ অনেক হাল্কা করে দিচ্ছেন। প্রত্যন্ত গ্রামের রোগীদের পক্ষে রাতে গাড়ি ভাড়া করে হাসপাতালে আসা সম্ভব হয় না সব সময়। দুয়ারে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে তাঁদের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন উনি।’’

অমিতের বাবা শিশির চক্রবর্তী ও মা উমাদেবী বলেন, ‘‘ছেলের কথা ভেবে চিন্তা হয়। কিন্তু ভাল কাজ করলে বিপদ হয় না— এই বিশ্বাসে মনের জোর পাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE