Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Coronavirus

করোনা: মেডিক্যালে আক্রান্ত মা, সতর্কতা

গত বুধবার ভোরে প্রসূতি বিভাগে নারকেলডাঙার বাসিন্দা ওই মহিলাকে ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যার দিকে কাশির উপসর্গ দেখা দেওয়ায় রাতে লেবার রুমে উপযুক্ত রক্ষাকবচ পরে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইডেন বিল্ডিং। —ফাইল চিত্র।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইডেন বিল্ডিং। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০৪:২৫
Share: Save:

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে করোনা-উদ্বেগ বহাল রইল সোমবার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, নাইসেড এবং বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে এ দিন স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ছ’জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। উদ্বেগ মেডিক্যালে করোনা-আক্রান্ত এক মাকে নিয়েও। সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫ থেকে হয়েছে ১১০ এবং মৃতের সংখ্যা সাতই রয়েছে।

রাতে আইডি হাসপাতাল সূত্রের খবর, আরজি কর থেকে সেখানে স্থানান্তরিত এক করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। তবে করোনাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ করবে রাজ্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি। সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘ওই মানুষটি আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁকে আমরিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করছিলাম। সেই সুযোগ পেলাম না। উনি অবশ্য ক্রনিক হাঁপানির রোগী ছিলেন।’’ এক তৃণমূল সাংসদের বাবার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ হয়েছে বলেও পারিবারিক সূত্রে রাতে জানা যায়। যদিও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।

এ দিকে, স্বাস্থ্য দফতরের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (সিএমসি) সন্তান প্রসবের পরে মায়ের করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ার ঘটনা। ওই হাসপাতালের পূর্ত বিভাগের এক কর্মীও আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন। গত বুধবার ভোরে প্রসূতি বিভাগে নারকেলডাঙার বাসিন্দা ওই মহিলাকে ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যার দিকে কাশির উপসর্গ দেখা দেওয়ায় রাতে লেবার রুমে উপযুক্ত রক্ষাকবচ পরে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। পর দিন তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রবিবার রাতে রিপোর্টে করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ে। সিএমসি-র উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানান, প্রসবের পরে ওই মহিলাকে ‘আইসোলেটেড’ রোগী হিসেবে ডালহৌসি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। সেই ওয়ার্ডে আরও চার জন রোগিণী ছিলেন। তাঁদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। সদ্যোজাতকে নিওনেটাল বিভাগে ‘আইসোলেটেড’ রেখে করোনা-পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মাকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে এমআর বাঙুর হাসপাতালে।

আরও পড়ুন: করোনা-সঙ্কটে মনুষ্যত্বের বোধন

আরও পড়ুন: রাজ্যের কিছু হাসপাতাল কি হয়ে উঠছে সংক্রমণের ‘হটস্পট’?

উপাধ্যক্ষ জানান, সদ্যোজাতের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তাকে নিওনেটাল বিভাগেই রাখা হবে বলে ঠিক হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, প্রসূতির অস্ত্রোপচারের সময় সকলে সতর্কতা মেনে কাজ করেছিলেন। তাই আপাতত শুধু চার জন নার্সকে নজরদারিতে রাখার কথা ভাবা হয়েছে। সাত দিন পরে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে ৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। এ দিন মাস্ক-সহ সুরক্ষার দাবিতে উপাধ্যক্ষের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান নার্সদের একাংশ।

রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজি বলেন, ‘‘ডালহৌসি ওয়ার্ড, লেবার রুম-সহ ইডেন বিল্ডিংয়ের যেখানে প্রয়োজন, সেই সব জায়গা জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। মাস্ক, গ্লাভস নিয়ে নার্সদের একাংশ ভুল বুঝেছিলেন। এখন আর সমস্যা নেই। ক’জনের কোয়রান্টিন হবে, নমুনা পরীক্ষা ক’জনের হবে, সেই বিষয়ে স্বাস্থ্য ভবন সিদ্ধান্ত নেবে।’’

নাইসেডের (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়) আক্রান্ত তরুণী ল্যাব টেকনিশিয়ান শুক্রবার থেকে অসুস্থ বোধ করছিলেন। নমুনা সংগ্রহের পরে রবিবার তরুণীর করোনা-রিপোর্ট পজ়িটিভ হয়। তিনি এখন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। আরজি কর থেকে আইডিতে আরও এক জন করোনা-পজ়িটিভ ভর্তি হয়েছেন। নাইসেডের অধিকর্ত্রী শান্তা দত্ত বলেন, ‘‘কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, প্রত্যেককে সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কী ভাবে ওই কর্মী আক্রান্ত হলেন, বুঝতে পারছি না।’’ তরুণীর বাড়ি বেলঘরিয়ায়। সেখান থেকেও সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি নাইসেড-প্রধান। আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ছ’জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। তাঁদের রিপোর্ট নেগেটিভ।

এ দিন চিনার পার্ক সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালের আরও এক চিকিৎসক, নার্স এবং দু’জন ফ্লোর ম্যানেজারের করোনা ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে তাঁদের কোভিড হাসপাতাল— চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রবিবার হাওড়া জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছিল। সেই ঘটনায় ১২ জনকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে বলে জানান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বীরেন্দ্রপ্রসাদ সাহু। হাওড়ার গোলাবাড়ি অঞ্চলে একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার জানান, তাঁদের হাসপাতালে এখন ১৪ জন করোনা পজ়িটিভ চিকিৎসাধীন।

তবে স্বস্তির খবরও রয়েছে। এ দিন আইডি থেকে চার জনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার আশিস মান্না জানান, তাঁদের মধ্যে তেহট্টের মা এবং তাঁর ১১ বছরের ছেলে রয়েছেন। এক জন নিজামুদ্দিন-যোগে আক্রান্ত পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। অন্য জন আলিপুরের সেনা হাসপাতালের আক্রান্ত চিকিৎসকের গাড়ির চালক। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকেও চার জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE