Advertisement
E-Paper

সংক্রমিত রক্ত নিয়ে এইচআইভি, ক্ষতিপূরণের নির্দেশ কোর্টের

কোচবিহারের অভিযুক্ত নার্সিংহোম, ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মোটা টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে ওই গৃহবধূ রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছিলেন।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষা না করে গৃহবধূকে দেওয়ায় ‘এইচআইভি’-র শিকার হন তিনি। বিষয়টি সামনে আসতেই এক সন্তানের মা বছর চৌত্রিশের ওই তরুণী তিন বছর ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অভিযোগ, রক্তের নমুনা যাচাই না করে ওই মহিলাকে রক্ত দেওয়া হয়েছিল।

কোচবিহারের অভিযুক্ত নার্সিংহোম, ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মোটা টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে ওই গৃহবধূ রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছিলেন। গত ১৪ নভেম্বর আদালত প্রত্যেককে দশ লক্ষ দশ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

কোচবিহারের বাসিন্দা রমা দে (নাম পরিবর্তিত) স্ত্রীরোগের সমস্যা নিয়ে ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ চিকিৎসক দীপঙ্কর দত্তের কাছে যান। দীপঙ্করবাবু তাঁর রক্ত ও ইউএসজি পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট দেখে জানান, তিন ইউনিট রক্ত লাগবে। ওই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো মহিলার স্বামী কোচবিহার পুরসভার ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত নিতে যান। স্বামী কমল দে-র (নাম পরিবর্তিত) অভিযোগ, ‘‘তিন ইউনিটের মধ্যে আমি এক ইউনিট দিয়েছিলাম। কিন্তু রক্ত নেওয়ার আগে বলা সত্ত্বেও কারও রক্তের নমুনা পরীক্ষা এবং ক্রস ম্যাচ হয়নি।’’

আরও পড়ুন: লেগিংস-কাণ্ডে তদন্ত কমিটি

কমলবাবুর অভিযোগ, ‘‘নার্সিংহোমে রক্ত দেওয়ার পরদিন থেকেই স্ত্রীর জ্বর, পেটের সমস্যা শুরু হয়। তা সত্ত্বেও ১৯ মার্চ ওকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’’ বাড়ি এসে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে রমাদেবীকে কলকাতায় আনা হয়। একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাঁর রক্তপরীক্ষায় এইচআইভি-১ ধরা পড়ে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনও রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট তেমনই জানায়।

বর্তমানে মহিলা উত্তরবঙ্গের একটি গ্রামে একা থাকেন। তাঁর এগারো বছরের মেয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছে। মহিলার আক্ষেপ, ‘‘নার্সিংহোম, ব্লাড ব্যাঙ্ক ও চিকিৎসক মিলে সাজানো সংসার ভেঙে দিল। ২০১৬-য় আমার এইচআইভি ধরা পড়ার পর থেকেই স্বামী আর মেয়ের থেকে দূরে থাকছি।’’

রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দুই বিচারক সমরেশ প্রসাদ চৌধুরী ওবং দীপা সেন মাইতি রায়ে বলেন, ‘‘চিকিৎসক, নার্সিংহোম, ব্লাড ব্যাঙ্কের চরম ভুলের মাসুল দিচ্ছেন ওই গৃহবধূ। মেয়ের পরিচর্যা করতে পারছেন না মা। পরিবার ও সমাজ থেকে এই বঞ্চনা টাকায় পূরণ করা যায় না।’’ রায় বেরোনোর তিন মাসের মধ্যে অভিযুক্ত নার্সিংহোম, ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং চিকিৎসকের প্রত্যেককে দশ লক্ষ দশ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের আইনজীবী সুমন সেহানবীশ বলেন, ‘‘রায়ের কপি হাতে পাইনি। মক্কেলদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’’ কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান ভূষণ সিংহ বলেন, ‘‘এক তরফা রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জাতীয় ক্রেতা আদালতে মামলা করব।’’ আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নন কমলবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘তিন পক্ষের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা করেছিলাম। বেতনের প্রায় অর্ধেক স্ত্রীর চিকিৎসায় খরচ হয়। ফের জাতীয় ক্রেতা আদালতে মামলা করব।’’

Health Medical Negligence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy