E-Paper

দল বেহাল, তবু নেতা হওয়ার দৌড়ে সিপিএমে জট দুই ২৪ পরগনায়

কলকাতা লাগোয়া দুই ২৪ পরগনায় মোট বিধানসভা আসনের সংখ্যা ৬৪। এই দুই জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন যারা পায়, তাদের হাতেই রাজ্যে সরকার গড়ার চাবিকাঠি থাকে— বাংলার রাজনৈতিক শিবিরে প্রচলিত তত্ত্ব এটাই।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:১৭

— প্রতীকী চিত্র।

দক্ষিণে ১৭। উত্তরে ২৭। দুই ২৪ পরগনার সম্মেলনে এই ১৭ এবং ২৭ ‘বিদ্রোহী’র গেরোয় আটকে গেল সিপিএম!

কলকাতা লাগোয়া দুই ২৪ পরগনায় মোট বিধানসভা আসনের সংখ্যা ৬৪। এই দুই জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন যারা পায়, তাদের হাতেই রাজ্যে সরকার গড়ার চাবিকাঠি থাকে— বাংলার রাজনৈতিক শিবিরে প্রচলিত তত্ত্ব এটাই। সেই দুই জেলায় আসন তো পরের কথা, ভোটের হার, সংগঠনের হাল এবং রাস্তার আন্দোলনে দুর্দশার পরেও দলের ভিতরের বিভাজন উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে সিপিএমের। দলের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশের মতে, নানা কারণে জেলা নেতৃত্বের প্রতি বাকি সংগঠনের আস্থার অভাবই ফুটে উঠেছে এ বারের সম্মেলনে। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগের বছরে যা সিপিএমের কাছে গোদের উপরে বিষফোঁড়ার শামিল!

এ বার সিপিএমের জেলা সম্মেলনের পর্বে শুরুর দিকে ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার পালা। সেখানে চার জন সর্বক্ষণের কর্মী ও তরুণ মুখকে জেলা কমিটি থেকে বাদ রাখায় সম্মেলনে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রতিবাদে নতুন কমিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ১৭ জন। শেষ জেলা সম্মেলন ছিল উত্তর ২৪ পরগনায়। সেখানে আবার সমস্যা অন্য রকম। কেন তাঁদের নাম জেলা কমিটিতে থাকবে না, এই প্রশ্ন তুলে বেঁকে বসেছিলেন ২৭ জন। শেষমেশ ২৫ জন সম্মেলনের শেষ রাতেই নাম তুলে নিয়েছেন। রয়ে গিয়েছেন দু’জন। সেই কারণেই আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি বারাসতে সিপিএমের জেলা দফতরে আবার জেলা সম্মেলনের শ’চারেক প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছে। এর মধ্যে ওই দু’জন নাম তুলে নিতে রাজি হয়ে গেলে ভোটাভুটি আর হবে না। প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই জেলা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চালাতে হবে। তবে দলের রাজ্য নেতৃত্বের ধারণা, ওই দু’জনের নাম প্রত্যাহারের সম্ভাবনা কম, তখন গত বারের সম্মেলনের মতো ভোটাভুটিই ভবিতব্য। দলের এক তরুঁণ নেতার কথায়, ‘‘বুথে লড়ার লোক নেই, রাস্তার আন্দোলনে জোর নেই। তবু নেতা হওয়ার দৌড়ে সবাই থাকতে চান!’’

সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে ৭৪ জনের নতুন জেলা কমিটির ‘অফিসিয়াল প্যানেল’ পেশ হয়েছিল। বয়সের কারণে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাবুল কর ও রমেন আঢ্য-সহ ১০ জন বাদ গিয়েছেন আগের কমিটি থেকে। কমিটিতে জায়গা বেড়েছে পাঁচটি। নতুন ১৪ জনের নাম আছে তালিকায়, পরে এক জনকে নেওয়ার কথা। এর পরে জেলা কমিটিতে নাম তুলতে চেয়েছিলেন ২৭ জন! শিল্পাঞ্চলের এক নেত্রীর অনুগামীরা উঠে দাঁড়ালে তার পাল্টা অন্য শিবিরের প্রতিনিধিরাও সক্রিয় হন। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মানস মুখোপাধ্যায় তখন বলেন, সম্ভবত এটাই তাঁর শেষ জেলা সম্মেলন। সেখানে ভোটাভুটি করে কমিটি হোক, এটা চান না। এর পরে নাম তুলে নেওয়া শুরু হয়। মধ্যমগ্রামের এক নেতা ও বিধাননগরের এক জন বাদে ২৫ জনই তুলে নিয়েছেন নাম।

দলের অন্দরেই চর্চা হচ্ছে, আন্দোলনের ঝাঁঝ এবং সংগঠনের সক্রিয়তা নিয়ে যেখানে গুরুতর প্রশ্ন আছে, সেখানে কমিটি নিয়ে এমন বিবাদ হবে কেন! দলেরই একাংশের মতে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তা-ও কমিটিতে আপত্তির কারণ ছিল, উত্তরে কাউকে নিয়ে তেমন কিছু নেই। শুধু ‘ও থাকলে আমিও কেন নই’— এই প্রবণতা উঠে এসেছে! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের মতে, ‘‘দুই জেলায় পরিপ্রেক্ষিত আলাদা। তবে জেলা নেতৃত্বের উপরে দলের বড় অংশ যে ভরসা রাখতে পারছেন না, বোঝা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি বাঞ্ছনীয় নয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPM Internal Conflict

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy