E-Paper

শুদ্ধকরণে গতি আনতে ‘ছাঁকনি’ বাড়াচ্ছে সিপিএম

কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশিকা মেনে ‘ত্রুটি সংশোধন অভিযান’ সংক্রান্ত ১২ দফা প্রশ্নমালা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে সিপিএমের কর্মীদের কাছে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৩
Md. Selim.

মহম্মদ সেলিম। —ফাইল চিত্র।

দক্ষিণের কেরল ছাড়া দল কোথাও ক্ষমতায় নেই। তবু এই পরিস্থিতিতেও দলের মধ্যে শুদ্ধকরণ অভিযানের গতি বাড়াতে চাইছে সিপিএম। এরিয়া কমিটি থেকে একেবারে পলিটব্যুরো পর্যন্ত দলের সদস্যদের কাজকর্ম, আচরণ ও জীবনযাপন এ বার যাচাই করে নেওয়া হচ্ছে বহুস্তরীয় প্রক্রিয়ায়।

কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশিকা মেনে ‘ত্রুটি সংশোধন অভিযান’ সংক্রান্ত ১২ দফা প্রশ্নমালা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে সিপিএমের কর্মীদের কাছে। ত্রুটি চিহ্নিত করা এবং তার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিয়ে এগোনোর ক্ষেত্রে যে শিথিলতা চলবে না, সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে দলের রাজ্য কমিটিতে। বি‌ভিন্ন রাজ্য থেকে ত্রুটি সংশোধন সংক্রান্ত যা তথ্য আসছে, তার ভিত্তিতে আগামী ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর পলিটব্যুরোর বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। তার পরে অক্টোবরের শেষের দিকে রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। শুদ্ধকরণ অভিযানের প্রাথমিক পর্যায় খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় কমিটিতেই পরবর্তী রূপরেখা ঠিক হতে পারে বলে দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত।

আত্মমূল্যায়নের প্রক্রিয়া সিপিএমে দীর্ঘ দিন ধরেই চালু। এ বারে ‘ছাঁকনি’র ব্যবস্থা আরও আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। যেমন, এরিয়া কমিটির এক জন সদস্য ত্রুটি সংশোধন সংক্রান্ত তাঁর উত্তর জমা দেবেন এরিয়া কমিটিতে। সেই কমিটির কাছ থেকে নির্যাস যাবে জেলা কমিটর কাছে। জেলা কমিটির মূল্যায়ন রিপোর্ট দেখবে রাজ্য কমিটি। রাজ্য স্তরে গঠিত সাংগঠনিক কমিটি রাজ্য কমিটির মূল্যায়ন রিপোর্ট পর্যালোচনা করবে। যাঁরা একই সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, তাঁরা দুই স্তরেই তাঁদের আত্মমূল্যায়নের রিপোর্ট দেবেন। সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, যৌথ কার্যধারার মধ্যেই রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে দলের কর্মীদের ‘দায়বদ্ধতা’র উপরে নজরদারি রাখতে চাওয়া হচ্ছে।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘ত্রুটি সংশোধন আমাদের দলে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। নতুন নয়। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট-সহ নানা তথ্য প্রতি বছর আমাদের জমা দিতে হয় দলের কাছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকলেও হিসেব দিতে হয়। দলের মধ্যে এই প্রক্রিয়া আছে বলেই ইডি, সিবিআইয়ের কাছে গিয়ে আমাদের জবাবদিহি করতে হয় না!’’ এই সূত্রেই তাঁর মত, বিভিন্ন সংস্থা যে ভাবে তাদের কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করে, অনেকটা সেই কায়দাতেই সিপিএম তার সদস্যদের ‘সঠিক পথে’ রাখতে চাইছে।

দলের দেওয়া দায়িত্ব এক জন সদস্য কী ভাবে পালন করছেন, যৌথ কার্যধারায় কী ভাবে অংশগ্রহণ করছেন, গণফ্রন্টের কাজ কী ভাবে করছেন— দলীয় ভূমিকা সম্পর্কিত এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হচ্ছে ত্রুটি সংশোধন অভিযানে। জনজীবনে ও পারিবারিক
জীবনে কমিউনিস্ট মূল্যবোধ কতটা মেনে চলছেন এক জন সদস্য, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে ধর্মীয় আচার থেকে কতটা ‘মুক্ত’ থাকতে পেরেছেন,
পারিবারিক জীবনে পুরুষতান্ত্রিকতা ও আধিপত্যবাদী মানসিকতা থেকে মুক্ত কি না, বিবাহ-সহ সামাজিক অনুষ্ঠানে ‘বিলাসবহুল ব্যয়’ বর্জন করে চলার অভিজ্ঞতাও জানতে চাওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পরিসরে ধর্মীয় আচার থেকে ‘মুক্ত’ থাকার কথা জানতে চাওয়া ব্যক্তি পরিসরে ‘অনুপ্রবেশ’ কি না কিংবা ‘বিলাসবহুলে’র মাপকাঠি কী, এই রকম কিছু প্রশ্ন অবশ্য দলের অন্দরে আছে। তবে দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, ধর্মাচরণকে রাজনীতির সঙ্গে কোনও ভাবে মিলিয়ে না ফেলার সাফ বার্তা দিতেই ব্যক্তিগত স্তরেও ‘সংযত’ আচরণ চায় দল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPM Md Selim

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy