অনিতা বসু পাফ।
জীবনের শুরুতেই কাছছাড়া বাবায় ভরে আছে কন্যার জীবন।
এখন ভোট-বাজারে তাঁর পিতার ঐতিহ্য বহন করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হুড়োহুড়ি সম্পর্কেও বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল সেই কন্যা—অনিতা বসু পাফ।
শনিবার দুপুরে জার্মানি থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে কথা বলছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর কন্যা। অনিতা হাসছিলেন, ‘‘বেশ তো, আমার বাবার নাম বা আদর্শ বহন করে সব দলের ভাল কাজের প্রতিযোগিতা হোক না!’’
তখনও কলকাতায় নেতাজি-জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে দেখা হয়নি নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অনিতা বলছিলেন, ‘‘ভোটের বছরে, সব দলই আমার বাবার নামে কর্মসূচি পালন তো করতেই পারে!’’ ভোট-বাজারে নেতাজি কোন দলে যোগ দিচ্ছেন? এমন রসিকতা চললেও ভারতের সমকালীন রাজনীতির আবহে সুভাষচন্দ্রের ছায়া পড়া অস্বাভাবিক বলে দেখছেন না অনিতা। তবে তিনি স্পষ্ট বলছেন, ‘‘আমার বাবা সব ধর্মের মানুষ, সব ভারতীয়কে সঙ্গে নিয়ে দেশপ্রেমের আদর্শ মেলে ধরেছিলেন। বিজেপি-র মধ্যে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার আদর্শের ঘাটতি আমার বাবার আদর্শের সঙ্গে মেলে না।’’
শুধু ভারত নয়, বাংলার সংস্কৃতির মূল সুরও হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ের উপরে দাঁড়িয়ে বলেই সুভাষ-কন্যার অভিমত। তাঁর কথায়, ‘‘আমার জেঠামশাই (শরৎচন্দ্র বসু) দুই বাংলার বিভাজনের বিরুদ্ধে ছিলেন। শিল্প, সঙ্গীতে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মিল চোখে পড়ার মতো। এই মিলটাই বাংলার সংস্কৃতি। সুভাষচন্দ্রের নামে কোনও অবস্থায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ চলতে পারে না।’’
তবু সুভাষচন্দ্র কোনও দলেরই মৌরসিপাট্টা নন বলে মনে করেন তাঁর প্রবীণ কন্যা। অনিতার কথায়, ‘‘আমার বাবার সঙ্গে তো ফরোয়ার্ড ব্লক এবং কংগ্রেসের যোগ ছিল। কেউ বলতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস ভেঙেই হয়েছে! তবে কংগ্রেস সব সময়ে আমার বাবার স্মৃতি রক্ষায় দারুণ উৎসাহী ছিল, তা বলতে পারি না! এখন যে কোনও দলই আমার বাবার নামে ভাল কাজ করলে আমার কিছু বলার নেই।’’ পরাক্রম দিবস, দেশপ্রেম দিবস, বা দেশনায়ক দিবস— এ দেশের সুভাষ-আরাধনার রকমফেরের খুঁটিনাটি খবর রাখেন অনিতা। তাঁর কথায়, ‘‘কোনওটাই ভুল বলব না! সুভাষচন্দ্রকে দেশনায়ক তো রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, আমার বাবার লড়াইয়ের পরাক্রম প্রশ্নাতীত, আর আমার বাবার থেকে বেশি দেশপ্রেমিক ভারতে আর কেউ ছিলেন বলে আমার জানা নেই।’’
জার্মানির ছোট্ট শহর স্তাদবারগেনে অশীতিপর স্বামী মার্টিন পাফ এবং বড় নাতির সঙ্গে থাকেন অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা অনিতা। দুই পুত্র জার্মানিতে, কন্যা দক্ষিণ আফ্রিকায়। বাড়িবন্দি জীবন। তবে জ়ুম বা হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিয়ো কলে কলকাতা, লন্ডন বা অন্যত্র সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে আকছার পারিবারিক বৈঠক লেগেই থাকে অনিতার। করোনাকালের পটভূমিতে তাঁর বাবার জন্মের ১২৫ বছরে ভারতে পা রাখা অবশ্য দূর অস্ত্ বলেই মনে করেন সুভাষ-কন্যা।
তবে ভারতের কাছে একটা আর্জিও আছে সুভাষ-কন্যার। তিনি মনে করেন, ‘‘তাইহোকুতে ১৯৪৫এর বিমান দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যুই আমার সব থেকে প্রামাণ্য বলে মনে হয়। তাই রেনকোজি মন্দিরে আমার বাবার ভস্ম নিয়ে বিতর্কে এ বার দাঁড়ি টানা হোক।’’ ডিএনএ পরীক্ষায় বিষয়টির নিষ্পত্তি চান অনীতা। তাঁর ইচ্ছে, ‘‘আমার সন্তানেরা এই ঝক্কি থেকে রেহাই পাক্! এর জন্য কোথাও যেতেও আমার আপত্তি নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy