Advertisement
E-Paper

সেই বাড়িছাড়াই হল নিহত ছাত্রীর পরিবার

মামলা না তুললে শাসকদল তাঁদের ভিটে ছাড়া করবে, এই আশঙ্কার কথা শনিবারই শোনা গিয়েছিল ধূপগুড়িতে নিহত-নির্যাতিত ছাত্রীর পরিবারের মুখে।তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ধূপগুড়ি পুরসভা এলাকার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, নিহতের বাড়িতে তালা। পড়শিরা জানালেন, কিলোমিটার দেড়েক দূরে মেয়েটির মামাবাড়িতে চলে গিয়েছেন নিহত মেয়েটির বাবা, মা আর ভাইবোন। কেন বাড়ি ছাড়লেন?

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৪
রবিবার স্কুল ছুটি। তা-ও স্কুলের পোশাক পরে, ছাত্রীকে ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে পথে নামল পড়ুয়ারা। রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

রবিবার স্কুল ছুটি। তা-ও স্কুলের পোশাক পরে, ছাত্রীকে ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে পথে নামল পড়ুয়ারা। রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

মামলা না তুললে শাসকদল তাঁদের ভিটে ছাড়া করবে, এই আশঙ্কার কথা শনিবারই শোনা গিয়েছিল ধূপগুড়িতে নিহত-নির্যাতিত ছাত্রীর পরিবারের মুখে।

তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ধূপগুড়ি পুরসভা এলাকার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, নিহতের বাড়িতে তালা। পড়শিরা জানালেন, কিলোমিটার দেড়েক দূরে মেয়েটির মামাবাড়িতে চলে গিয়েছেন নিহত মেয়েটির বাবা, মা আর ভাইবোন। কেন বাড়ি ছাড়লেন? এ দিন ছাত্রীটির বাবা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে বসে বলেন, “আমাদের মানসিক অবস্থা ভাল নয়। তাই ঘর তালাবন্ধ করে চলে এসেছি। এখন এর বেশি কিছু বলছি না।” যা বললেন না (বা বলতে চাইলেন না), তাতেই ইঙ্গিতটা অবশ্য স্পষ্ট। ‘চাপ’ আছে তাঁদের উপরে। এবং সে কথাটাই এ দিন পরিষ্কার করে দিয়েছেন নিহতের দিদিমা। বলেছেন, “ওদের উপরে এখন প্রচণ্ড চাপ। সে জন্য আমাদের এখানে ওরা কিছুদিন থাকবে।”

শনিবার নিহত ছাত্রীর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় (রবিবার প্রকাশিত ‘ধূপগুড়িতে রাজনীতি করছে...’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ভুল করে তাঁর পদবি ভট্টাচার্য লেখা হয়েছে)। তাঁর কাছে বাড়ির লোকেরা অভিযোগ করেন, মামলা না-তুললে ভিটেছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন এলাকার কিছু তৃণমূল নেতা। আর তার পরেই এ দিন তাঁদের বাড়ি ছেড়ে যাওয়া নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এমনকী, এলাকার বাসিন্দার একাংশও বলছেন, ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় সব অভিযুক্ত ধরা পড়লে হয়তো ঘরদোরে তালা দিয়ে ওই পরিবারের চলে যেতে হত না। জলপাইগুড়ির তৃণমূল সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন বলেন, “ওই ছাত্রীর পরিবার কেন চলে গিয়েছে তা খোঁজ নেব। সত্যি কোনও চাপের ব্যাপার থাকলে আমাদের যা করণীয় করব।”

গত সোমবার রাতের সালিশি সভাতেও নিহত ছাত্রীর বাবাকে বাড়িছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে মারধরও করা হয়। সেই ঘটনারই প্রতিবাদ করেছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্রী তাঁর মেয়ে। প্রতিবাদের পরে সেই সালিশি সভাতেই হুমকির মুখে পড়তে হয় ছাত্রীকে, ‘থুতু চাটানো’র হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই সভা থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় মেয়েটি। পরদিন ভোরে এলাকার রেললাইনে পোশাকহীন দেহ উদ্ধার হয় ছাত্রীর। প্রতিবাদের কারণেই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী চন্দ্রকান্ত রায়-সহ শাসক দলের কিছু নেতা-কর্মী মিলিয়ে ১৩ জনের নামে ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রীর বাবা। অভিযোগ, সেই থেকেই শুরু হয় মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি।

তবে, মেয়েটি পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন অনেকেই। দোষীদের শাস্তি দাবি করে রবিবার বিকেলেও মিছিল হয় ধূপগুড়িতে। এ দিন স্কুল ছুটি থাকা সত্ত্বেও স্কুলেরই পোশাক করে মিছিলেন পা মিলিয়েছিল অনেক পড়ুয়া। ছিলেন এলাকার বাসিন্দারাও। তাঁদের মুখ ঢাকা ছিল কালো কাপড়ে। হাতে ধরা কোনও প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। কোনওটিতে লেখা, ‘আমরা কোনও দল নই। প্রতিবাদী ভাবনা মাত্র’। এ দিন মিছিল করে বিজেপি-ও। রবিবার শিলিগুড়ির ঘোঘোমালি হাইস্কুল ময়দানের সভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তার রূপরেখা তৈরি হচ্ছে।”

ঘটনার পাঁচ দিন পরেও কিন্তু এফআইআর-এ নাম থাকা ১৩ জনের মধ্যে এক নাবালককে ছাড়া আর কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। অন্য যে দু’জনকে সন্দেহভাজন হিসাবে ধরা হয়েছে, তাঁদের নামে কোনও অভিযোগই তাঁরা করেননি বলে ছাত্রীর বাবা-মা জানিয়েছেন। তবে, ওই সালিশি সভায় যে তাঁর স্বামী হাজির ছিলেন, তা স্বীকার করেছেন ধূপগুড়ি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নমিতাদেবী। তাঁর দাবি, “আমার স্বামী সালিশিতে ছিলেন। কিন্তু, কোনও দোষ করেননি। তিনি এলাকা ছেড়ে বাইরে চলে গিয়েছেন। অথচ রাতবিরেতে পুলিশ এলাকাবাসীর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে। এলাকা প্রায় পুরুষশূন্য অবস্থায় রয়েছে। এলাকার মহিলারা আমার কাছে এসে নিজেদের এই ভীতির কথা জানাচ্ছেন।”

এলাকার সিপিএম নেতা-কর্মীদের আবার পাল্টা দাবি, তৃণমূলের লোকেদের যাতে পুলিশ না ধরে, সেই উদ্দেশ্য পুলিশের উপর চাপ তৈরির জন্য আগেভাগে এমন অভিযোগ তুলছেন তৃণমূল কাউন্সিলর। পুলিশ তল্লাশির নামে বাড়াবাড়ি করছে বলে কাউন্সিলর অভিযোগ করলেও, চন্দ্রকান্তবাবুকে খুঁজতে যে পুলিশ রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর বাড়িতে হানা দেয়নি বলেও নমিতাদেবী স্বীকার করেছেন। ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত আর এক তৃণমূল নেতা তহিদুল ইসলামের স্ত্রী আলিজা খাতুন দাবি করেছেন, তাঁর স্বামী কোথায় রয়েছেন তিনি জানেন না। তাঁর মোবাইল নম্বরও নাকি জানা নেই!

dhupguri municipality school student murder girl state news online state news without house student family
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy