Advertisement
E-Paper

বর্মেই বিপদ! মেয়েদের মৃত্যু বেশি ডেঙ্গিতে

পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘চলতি বছরে মহিলাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গির তীব্রতা যে বেশি এবং তাতে মহিলাদের মৃত্যুহারও যে বেশি, সেটা পরিষ্কার।’’

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৫

১০৪-এর মধ্যে ৬৬!

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, পুরসভার রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি, অজানা জ্বরে মৃত্যু হয়েছে ১০৪ জনের। এবং তাঁদের মধ্যে ৬৬ জনই মহিলা!

পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘চলতি বছরে মহিলাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গির তীব্রতা যে বেশি এবং তাতে মহিলাদের মৃত্যুহারও যে বেশি, সেটা পরিষ্কার।’’

এই তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে এর অন্যতম সম্ভাব্য কারণটিও। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এ ক্ষেত্রে মহিলাদের বিপদ বাড়াচ্ছে তাঁদের বাড়তি ‘ইমিউনিটি’ বা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। অর্থাৎ বর্মই শত্রু!

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত এক এপিডেমিওলজিস্ট বা মহামারিবিদের কথায়, মহিলারাই যে ডেঙ্গিতে বেশি মারা যাচ্ছেন, বিভিন্ন চিকিৎসকের বয়ানে সেই তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে যে-অজানা জ্বর হচ্ছে, উপসর্গ দেখে মনে হচ্ছে, তার জন্য ডেঙ্গির মতো ব্যাধির জীবাণুই দায়ী। কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসকেরও দাবি, তাঁদের হাসপাতালে মাল্টি অর্গান ফেলিওর, সেপ্টিসেমিয়া কিংবা হেমারেজিক ফিভারে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে মহিলার সংখ্যাই বেশি।

আরও পড়ুন:ডেঙ্গি-মৃত্যু বাড়েনি ৩৫ দিনে!

কেন? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গবেষকের গবেষণাপত্রের সঙ্কলন একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। তাতে এই প্রশ্নের কিছু কিছু জবাব মিলেছে। যে-সব সম্ভাব্য কারণের কথা ‘অ্যাড্রেসিং সেক্স অ্যান্ড জেন্ডার ইন এপিডেমিক-প্রোন ইনফেকশাস ডিজিজেস’ নামক ওই পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে: l মহিলাদের শরীরে ‘ইমিউন সিস্টেম’ বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষদের তুলনায় বেশি। l মহিলাদের রক্তজালিকাগুলির ‘পারমিয়াবিলিটি’ বা ভেদ্যতাও পুরুষদের থেকে বেশি। অর্থাৎ যে-কোনও জিনিস সহজেই জালিকার পর্দা ভেদ করে যেতে পারে। ফলে হেমারেজিক ডেঙ্গিতে রক্তপাতের পরিমাণ খুব বেড়ে যায়। l হেমারেজিক ডেঙ্গির ক্ষেত্রে মহিলাদের অসময়ে ঋতুস্রাব হয়। তাতে প্রচুর পরিমাণে রক্ত বেরোনোয় তাঁরা দুর্বল হয়ে পড়েন। l উন্নয়নশীল দেশে মহিলারা অপুষ্টি ও রক্তাল্পতায় ভোগেন। তাঁরা নিজেদের যত্নও সে-ভাবে নেন না। l রোগ হলেও অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা তা বলতেই চান না। ভয়ঙ্কর রকমের বাড়াবাড়ি হলে তবেই
তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকদের কাছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত মহামারিবিদের মন্তব্য, এর মধ্যে প্রথম তিনটি কারণ শারীরবৃত্তীয়। বাকিগুলি সামাজিক। হু-র পুস্তিকায় যে-সব শারীরবৃত্তীয় কারণের উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। এ ব্যপারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে কোনও সমীক্ষা এখনও হয়নি বলে জানান তিনি।

কেন মহিলারা বেশি মারা যাচ্ছেন, অমিতাভবাবুর কাছে অবশ্য তার নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। হু-র পুস্তিকায় উল্লিখিত বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কারণ সম্পর্কে ওই চিকিৎসক-গবেষক বলেন, ‘‘মেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষদের থেকে বেশি। এই আশীর্বাদটাই তাঁদের কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে কি না, সেটা ভেবে দেখার সময় বোধ হয় এসেছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ইমিনিউটি বেশি থাকা মানে কোনও রোগজীবাণু ঢুকলে তাকে পরাভূত করার জন্য শরীরে খুব তাড়াতাড়ি যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া। বহিরাগত রোগজীবাণু বা অ্যান্টিজেনকে ধ্বংস করে ওই অ্যান্টিবডি। এই প্রক্রিয়ায় অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডির মিলিত যৌগ (ইমিউন কমপ্লেক্স) তৈরি হয়। ওই ইমিউন কমপ্লেক্স রক্তে ভেসে বেড়ায় এবং বিভিন্ন কোষের পর্দা ভেঙে কোষের ক্ষতি করে (ইমিউন কমপ্লেক্স মিডিয়েটেড কমপ্লিকেশনস)।

মেয়েদের অ্যান্টিবডি তৈরির প্রবণতা যে-হেতু বেশি, তাই তাঁদের ক্ষেত্রে এই জটিলতা বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে হু-র পুস্তিকায় দাবি করেছেন গবেষকদের অনেকেই।

অন্য যে-দু’টি শারীরবৃত্তীয় কারণের কথা ওই পুস্তিকায় বলা হয়েছে, অমিতাভবাবু সেই বিষয়ে বলেন, ‘‘মহিলাদের রক্তজালিকার ভেদ্যতা বেশি বলেই যে তাঁদের সঙ্কট বেশি, তা নিয়ে কোনও গবেষণা আমাদের এখানে এখনও হয়নি।’’ তবে হেমারেজিক ডেঙ্গির সময়ে ঋতুস্রাব হলে যে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, তা নিয়ে তাঁরা পরিবারের লোকেদের সতর্ক করে দেন। এটা মহিলাদের ডেঙ্গি-মৃত্যুর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Dengue Malaria Water pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy