Advertisement
E-Paper

রাজ্য বিজেপির মনের কথাই তুলে ধরেছেন অভিজিৎ? প্রচ্ছন্ন সায় মুখপাত্রের! মন্তব্যে নারাজ শমীক জানালেন, ‘কথা বলব’

তমলুকের সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে সব মন্তব্য করেছেন, তা কি রাজ্য বিজেপিতে আরও অনেকেরই মনের কথা? অভিজিতের মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও বিজেপির তরফ থেকে তার সমালোচনা বা বিরোধিতা করা হয়নি। বরং রাজ্য বিজেপির এক মুখপাত্র বলেই দিলেন, রাজ্য জুড়ে যে ধরনের আলোচনা চলছে, সাংসদ আবেগের বশে তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৫ ২১:০৭
Did Tamluk MP Abhijit Ganguly’s remarks match Bengal BJP’s sentiments? Samik says, will speak to him

(বাঁ দিকে) অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, শমীক ভট্টাচার্য (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্যের বিরোধিতা করল না পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকার আদৌ পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বদলাতে চায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তমলুকের বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ। সেই বক্তব্য নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে যখন জোর আলোচনা, তখন রাজ্য বিজেপির অবস্থান অনেককেই অবাক করছে। তমলুকের সাংসদের মন্তব্যের বিরোধিতা করে কোনও বিবৃতি বিজেপি দেয়নি। উল্টে রাজ্য বিজেপির এক মুখপাত্র আনন্দবাজার ডট কমকে বলেছেন, ‘‘গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে মানুষ যে রকম কথাবার্তা বলছেন, অভিজিৎবাবুর মুখ থেকে সেই কথাগুলোই বেরিয়ে এসেছে।’’ দলীয় শৃঙ্খলার ‘আইন’ বাঁচিয়েও তিনি বুঝিয়েই দিলেন, বাংলার সংগঠনের ‘মনের কথাই’ বলে দিয়েছেন অভিজিৎ। রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য এড়িয়েছেন। তবে সাংসদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

এবিপি আনন্দকে দেওয়া যে সাক্ষাৎকার নিয়ে এত চর্চা, তাতে অভিজিৎ দাবি করেন, বিজেপির হয়ে তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে সরানো। তবে সেই ‘নিশানার ধারেকাছে’ পর্যন্ত তিনি পৌঁছোতে পারেননি। এর দায় কেন্দ্রীয় সরকারের বলেও অভিজিৎ মন্তব্য করেন। তাঁর নিশানায় ছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সি থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘‘কেন যে পশ্চিমবঙ্গের মতো একটা শাসনহীন, প্রশাসনহীন রাজ্যে অন্তত ৩৫৫ ধারা জারি করা হবে না, সেটা তো আমার কাছে একটা বিরাট প্রশ্ন।’’ অভিজিৎ মনে করেন, রাজ্যে পালাবদল করতে হলে পুলিশকে কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় নিয়ে এসে ভোট করাতে হবে। তা হলেই তৃণমূল ভোট দিতে যাওয়ার সময় কাউকে ‘বাধা’ দিতে পারবে না বা কোনও রকম অশান্তি তৈরি করতে পারবে না।

নির্বাচন কমিশনের ‘কাজকর্ম’ নিয়েও ওই সাক্ষাৎকারে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেছিলেন অভিজিৎ। তাঁর দাবি, ভোটার তালিকায় ‘গন্ডগোল’ করার জন্য বেশ কয়েক জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। তাঁদের সাসপেন্ড করা হলেও কারও বিরুদ্ধে এফআইআর করেনি রাজ্য সরকার। তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ কেন কমিশন করেনি, অভিজিৎ সেই প্রশ্ন তোলেন। বিজেপি-র পক্ষে তৃণমূলকে সরানো সম্ভব নয়, না কি বিজেপি তৃণমূলকে সরাতে চায় না, এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে অভিজিতের জবাব, ‘‘বিজেপি সরাতে চায় কি চায় না— এটা অনেক গভীর প্রশ্ন। সেই প্রশ্নে আজ যাব না।’’ তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য ‘‘কিছু দিন বাদে হয়তো যাব।’’

এটুকুতেই থামেননি কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি। বাংলায় ‘অবাঙালি বিজেপি নেতৃত্বের দাপট’ নিয়েও ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেন। উত্তর ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের চিন্তাভাবনা মেলে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘হিন্দি বলয় থেকে এখানে নেতা এনে ভোট করানো যাবে না।’’ কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন, মেজাজ, তাঁদের অভিমান, এ সব দিল্লিওয়ালা নেতারা বোঝেন না।’’

অভিজিতের এই মন্তব্য রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের জন্য কতটা অস্বস্তিকর, তা নিয়েই চর্চা চলছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজেপি মুখপাত্র এবং শমীক-ঘনিষ্ঠ দেবজিৎ সরকার আনন্দবাজার ডট কমকে বললেন, ‘‘তৃণমূল যে অত্যাচার দেখাচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে গোটা পশ্চিমবঙ্গেই যে এই ধরনের আলোচনা চলছে, সে কথা তো অস্বীকার করা যাবে না। সমাজে যে কথা চলছে, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখ থেকে সেই কথাগুলোই বেরিয়ে এসেছে।’’ দেবজিতের কথায়, ‘‘উনি (অভিজিৎ) এমনিতে আবেগপ্রবণ মানুষ। আবেগ না-থাকলে বিচারপতি পদ বা সেই পেশায় আরও উন্নতির সম্ভাবনা ছেড়েছুড়ে দিয়ে রাজনীতিতে নামতেন না। আবেগের বশে উনি অনেক কিছুই করতে পারেন, তা প্রমাণিত। এ ক্ষেত্রেও তেমনই ঘটেছে।’’

রাজ্য বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কেউ এখনও পর্যন্ত অভিজিতের মন্তব্য নিয়ে মুখ খোলেননি। শুক্রবার সন্ধ্যায় শমীক শুধু বলেছেন, ‘‘আমি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলব।’’ কিন্তু ‘শৃঙ্খলাভঙ্গ’ বা ‘দলবিরোধী মন্তব্য’ গোছের কোনও শব্দবন্ধ এখনও পর্যন্ত বিজেপির রাজ্য নেতাদের মুখ থেকে বেরোয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আইন বা সংবিধান সব সময় তো আমাদের আইনের ছন্দে চলে না। তাই তমলুকের সাংসদ কেন্দ্রের তরফ থেকে যে ধরনের পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন, তা পুরোপুরি সম্ভব কি না, সে সব তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু সব ক্ষেত্রে আইনের দোহাই দিয়ে আবেগের প্রকাশ আটকে রাখাও সম্ভব নয়।’’

Abhijit Ganguly BJP MP West Bengal Politics Samik Bhattacharya West Bengal BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy