Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
West Bengak News

‘চিনা’ মাদক! তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের ঢুকতেই দিল না রাজ্য পুলিশ

বড় বড় ট্রলি ব্যাগের মধ্যে খোপ করা। আর তার মধ্যেই রুপোলী প্যাকেটে মোড়া হাজার হাজার নানা মাপের ট্যাবলেট।পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরেই ধৃতদের একজন দাবি করেন, ট্যাবলেটগুলি ক্যানসারের ওষুধ।

কলকাতা স্টেশন থেকে মাদক ট্যাবলেট-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ চিনা নাগরিককে। নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা স্টেশন থেকে মাদক ট্যাবলেট-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ চিনা নাগরিককে। নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ১৬:৫১
Share: Save:

মাদক নিয়ে তদন্তের ক্ষেত্রেও পড়ল কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ‘প্রভাব’!

শুক্রবার রাতে কলকাতা স্টেশন থেকে মাদক ট্যাবলেট-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ চিনা নাগরিককে। বিপুল টাকার মাদক এবং ওই পাচারকারীদের নিয়ে তদন্ত নিয়েও চলল রাত ভোর টানাপড়েন।

বড় বড় ট্রলি ব্যাগের মধ্যে খোপ করা। আর তার মধ্যেই রুপোলি প্যাকেটে মোড়া হাজার হাজার নানা মাপের ট্যাবলেট।পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরেই ধৃতদের একজন দাবি করেন, ট্যাবলেটগুলি ক্যানসারের ওষুধ। চিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ক্যানসারে আক্রান্ত এক আত্মীয়ের জন্য। কিন্তু ট্যাবলেটের পরিমাণ দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। কিন্তু সেই ট্যাবলেট মাদক কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার উপায় ছিল না তাদের। কারণ তাদের কাছে মাদক চিহ্নিত করার কোনও প্রযুক্তি নেই। সেই সূত্রেই খবর দেওয়া নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র গোয়েন্দাদের।

আরও পড়ুন: মাদক চক্রেও চিন যোগ? কলকাতা স্টেশনে ২ কুইন্টাল ড্রাগ-সহ ধৃত ৫ চিনা নাগরিক

মাঝরাতেই মাদক পরীক্ষার কিট নিয়ে পৌঁছন তাঁরা। পরীক্ষা করে তাঁরা নিশ্চিত করেন, উদ্ধার হওয়া ট্যাবলেট সবই নিষিদ্ধ মাদক। দুই কুইন্টাল পার্টি ড্রাগ নিয়ে ধরা পড়েছে পাঁচ চিনা নাগরিক — এই তথ্য শোনার পরই ঘটনার গুরুত্ব বুঝে দমদম জিআরপি থানায় পৌঁছন এনসিবি-র আঞ্চলিক অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব। রেল পুলিশের সামনেই ধৃতদের সঙ্গে কথা বলেন এনসিবি-র গোয়েন্দারা। রেলপুলিশের এক আধিকারিক বলেন,“ধৃত চিনাদের মধ্যে একজন হঠাৎ সোজাসুজি প্রস্তাব দেয়, ওদের ছেড়ে দিলে ৫০লাখ টাকা দেবে।”

সেটা শুনেই গোয়েন্দারাই অবাক হয়ে যান। ধৃতদের একজন তখন প্রস্তাব দেন, তাঁকে ফোনে কথা বলার সুযোগ দিলে, গুরুগ্রামে নগদে ওই টাকা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন।

ধৃতদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত ফোন, পাসপোর্ট।

ধৃতদের এই কথা শুনে এনসিবি-র গোয়েন্দারা বুঝে যান এই চিনা মাদক কারবারীদের জাল ছড়িয়ে আছে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। আর মাদকের এই আন্তর্জাতিক যোগাযোগের হদিশ পেতে তদন্তকারী সংস্থারও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ প্রয়োজন, না হলে ধৃতদের পেছনে মূল মাথা কারা তার হদিশ পাওয়া সম্ভব নয়। রেল পুলিশের এক আধিকারিক বলেন,“এনসিবি-র গোয়েন্দারা স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই তদন্তে অংশগ্রহণ করতে চান।”

সেই খবর পৌঁছয় রেল পুলিশের শিয়ালদহ শাখার এক শীর্ষ আধিকারিকের কাছে। রাত আড়াইটে নাগাদ তিনি দমদম জিআরপি থানায় ছুটে আসেন। এনসিবি-র এক কর্তার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘক্ষণ কথাও হয়। রেল পুলিশের এক আধিকারিক জানান, তার পরেই রেল পুলিশের ওই শীর্ষ আধিকারিক এনসিবি কর্তাকে অনুরোধ করেন তদন্ত থেকে দূরে থাকতে। সূত্রের খবর, তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনসিবিকে দূরে থাকার পেছনে রেলপুলিশের ওই কর্তা নাকি কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনকেই কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন!

যদিও রেলপুলিশের এক আধিকারিক নিজেই স্বীকার করেছেন, তাঁদের মাদক নিয়ে তদন্তের দক্ষতা নেই, সেইসঙ্গে এরকম আন্তর্জাতিক চক্রের হদিশ পেতে যে লোকবল বা যোগাযোগ প্রয়োজন, সেটাও নেই।আর তাই বিপুল পরিমান পার্টি ড্রাগ কোথা থেকে নিয়ে আসছিলেন বা কোথায় নিয়ে যাচ্ছিলেন,চিনা নাগরিকদের গ্রেফতার করার পর ১২ ঘণ্টা কেটে গেলেও রেলপুলিশ বা রাজ্য সিআইডি অন্ধকারে।

আরও পড়ুন: কলকাতা থেকে দার্জিলিং, স্কুল পড়ুয়াদের হাতেও পৌঁছে যাচ্ছে এলএসডি

এনসিবি-র আঞ্চলিক অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘আমাদের অফিসাররা গিয়েছিলেন মাদক পরীক্ষার জন্য। রাজ্য পুলিশই আমাদের খবর দিয়েছিল।’’ টানাপড়েনের বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। অন্য দিকে, রেলপুলিশের এডিজি অধীর শর্মাকে একাধিক বার এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনও জবাব মেলেনি।

ধৃতদের মধ্যে চারজনই দাবি করেছে, তারা চিনা ভাষা ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানে না। আর তাই ওদের জেরা করতে গিয়েও বিপাকে পড়েছে পুলিশ। কারণ গ্রেফতার করার ১২ ঘণ্টা পরেও ধৃতদের জেরা করার জন্য কোনও চিনা দোভাষীর বন্দোবস্ত করতে পারেনি পুলিশ।ধৃতদের মধ্যে ওয়াং জিয়াংঝৌ ভাঙা ভাঙা ইংরেজি বলতে পারে। তার দাবি,ওরা নাকি শুক্রবার সন্ধ্যাতেই কলকাতা পৌঁছেছেন। অথচ ধৃতদের কাছ থেকে মিলেছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা যাতায়াতের শুক্রবারের টিকিট। একদিকে মাদকে চিন যোগ, অন্যদিকে বেলডাঙার টিকিট, সব মিলিয়ে চিনের সঙ্গে বাংলাদেশ যোগও ওড়াতে পারছেন না গোয়েন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drug Racket Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE