Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দুয়ার বন্ধ দুয়ারসিনির, ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকেরা

প্রায় বারো বছর হতে চলল, দুয়ারসিনি বন্ধ। পুরুলিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল ছিল এটি। ২০০১-এর ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গলের মধ্যে, সাতগুড়ুম খালের কাছে বন উন্নয়ন নিগম তিনটি কটেজ বানিয়েছিল।

রুদ্ধদ্বার: এখনও দরজা খোলেনি দুয়ারসিনির সেই পর্যটন আবাসের। নিজস্ব চিত্র

রুদ্ধদ্বার: এখনও দরজা খোলেনি দুয়ারসিনির সেই পর্যটন আবাসের। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

গেটের সামনে থামল গাড়ি। তালা ঝুলছে। উঁকি দিয়ে দুই খুদে প্রশ্ন করে, ‘‘ভিতরে যাওয়া যাবে না?’’ বাবা বললেন, ‘‘এখানে থাকব ভেবেই এসেছিলাম। কিন্তু কেউ তো নেই।’’ নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে সন্তানদের নিয়ে দুয়ারসিনিতে এসে এ ভাবেই ফিরতে হল কলকাতার দমদমের সপ্তর্ষি মণ্ডল ও মৌসুমি মণ্ডলকে।

প্রায় বারো বছর হতে চলল, দুয়ারসিনি বন্ধ। পুরুলিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল ছিল এটি। ২০০১-এর ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গলের মধ্যে, সাতগুড়ুম খালের কাছে বন উন্নয়ন নিগম তিনটি কটেজ বানিয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দুয়ারসিনি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র’। গালুডি, ঘাটশিলা বা পুরুলিয়া থেকে বাসে বান্দোয়ান। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে দুয়ারিসিনি। প্রচুর পর্যটক আসতেন।

এক সময়ে মাওবাদীদের ভয়ে সিঁটিয়ে যায় জঙ্গলমহলের এই সমস্ত এলাকা। ২০০৩-এর অক্টোবরে দুয়ারসিনির কাছে মাওবাদী হামলায় প্রাণ হারান বান্দোয়ানের ওসি নীলমাধব দাস। ২০০৫-এ ভোমরাগোড়া গ্রামে সস্ত্রীক খুন হন সিপিএমের প্রাক্তন সভাধিপতি রবি কর। ২০০৬-এর জানুয়ারিতে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ হয় দুয়ারসিনি হাটের কাছে পঞ্চায়েত সমিতির নির্মীয়মাণ অতিথি নিবাসে। সেই ইস্তক আস্তে আস্তে পর্যটক আসা কমতে শুরু করে। চুরি হয়ে যায় কটেজের
আলো, আসবাব, এমনকি, শৌচাগারের জিনিসপত্রও।

রাজ্যে পালাবদলের পরে মাওবাদী সক্রিয়তা ক্রমশ স্তিমিত হয়। ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে দুয়ারিসিনির তিনটি কটেজ নতুন করে গড়ে তোলার জন্য টাকা বরাদ্দ করে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ। কাজ শেষ হয়। কিন্তু কটেজ আর চালু হয়নি। বন দফতরের একটি সূত্র দাবি করেছে, গত বছর পুজোর সময়ে এক বার চালু করার চেষ্টা হয়েছিল। চলতি বছরের গোড়াতেও হয়েছিল। কোনও বারই শেষ পর্যন্ত তালা আর খোলেনি।

বন দফতরের কর্তারাও মনে করছেন, পর্যটনের ভরা মরসুমে কটেজগুলি চালু হয়ে গেলে জমজমাট ভিড় হবে। জেলা বন আধিকারিক (কংসাবতী দক্ষিণ) অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা দুয়ারসিনির কটেজ দ্রুত চালু করার চেষ্টা করছি। তবে কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে।’’ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কটেজ চত্বরে তিন দিকের পাঁচিল তৈরি, রান্না ঘরে আধুনিক পরিকাঠামো গড়া, গাড়ি পার্কিং-এর বন্দোবস্ত ইত্যাদি করতে কিছুটা সময় লাগবে। লাগোয়া আসনপানি গ্রামের বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের দেখভাল করার কথা। এ জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। চালু হওয়ার পরে পর্যটকেরা অনলাইনে কটেজ ‘বুক’ করতে পারবেন।

দুয়ারসিনির কটেজের দুয়ার খুলতে আর কত দিনের অপেক্ষা, প্রশ্ন করছেন সপ্তর্ষিবাবুর মতো অনেক পর্যটক। বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নিদেন পক্ষে আরও কয়েকটা মাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Duarsini Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE