E-Paper

মিডডে মিল নিয়ে চিন্তা, আশঙ্কা পড়াশোনা নিয়ে

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিডডে মিল পায় ছাত্রছাত্রীরা। স্কুলগুলিতে তা রান্নার দায়িত্ব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর। স্কুল কর্তৃপক্ষেরা জানান, মিডডে মিল বন্ধের সম্ভাবনা নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৫৬

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কোনও স্কুলের ১২ জন, কোনও স্কুলের ছয় বা আট জন শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের অনেকে স্কুলে মিডডে মিল তদারক করতেন। তাঁদের চাকরি যাওয়ায়, পঠনপাঠনের সঙ্গে পড়ুয়াদের দুপুরের খাওয়ার তত্ত্বাবধানও প্রশ্নের মুখে, দাবি নানা স্কুল কর্তৃপক্ষের। এই পরিস্থিতিতে, অনেক অভিভাবক আশঙ্কায় ভুগছেন, মিডডে মিল বন্ধ হয়ে যাবে না তো? তবে অভিভাবকদের আর এক অংশের দাবি, মিডডে মিলের থেকেও বেশি চিন্তা পঠনপাঠন নিয়ে। কারণ, অনেক স্কুলেই বিভিন্ন বিষয় পড়ানোর লোক নেই।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিডডে মিল পায় ছাত্রছাত্রীরা। স্কুলগুলিতে তা রান্নার দায়িত্ব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর। স্কুল কর্তৃপক্ষেরা জানান, মিডডে মিল বন্ধের সম্ভাবনা নেই। তবে তার হিসাব রাখা, রান্নার মান বা ছাত্রছাত্রীরা ঠিক মতো খেয়েছে কি না দেখার দায়িত্বে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। তাতে সমস্যা হতে পারে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় গার্লস হাই স্কুলে চাকরিহারা সাত শিক্ষিকার মধ্যে রয়েছেন মিডডে মিল দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্তও। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নূপুর শিকদার বলেন, “ওই শিক্ষিকা আর স্কুলে আসছেন না। সব হিসাব তাঁর কাছে রয়ে গিয়েছে। পঠনপাঠন থেকে মিডডে মিল চালানো, সবেই সমস্যা হচ্ছে।’’ এক অভিভাবক প্রণব দাস বলেন, “আমরা গরিব। মেয়ে স্কুলে মিডডে মিল না পেলে সারা দিন না খেয়ে থাকবে!” পাথরপ্রতিমার পশ্চিম শ্রীপতিনগর ডক্টর বিসি রায় মেমোরিয়াল হাই স্কুলেও চাকরি হারানো পাঁচ জনের মধ্যে আছেন মিডডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পার্থসারথি মিশ্রের বক্তব্য, “বুধবার থেকে পুরোপুরি স্কুল শুরু হলে, জানি না কী হবে!” অভিভাবক সুভাষ মণ্ডলের আর্জি, “এই দুর্নীতির জন্য ছেলে-মেয়েদের খাবার যেন বন্ধ না হয়।”

জলপাইগুড়ির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকও বলেন, “মিডডে মিল নিয়ে অভিভাবকেরা খোঁজ নিতে আসছেন।’’ হুগলির আরামবাগের ডিহিবাগনান কেবি রায় হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শুভেন্দু আদক জানান, প্রয়োজনে, কোনও শিক্ষকের ক্লাসের সময় কমিয়ে
মিডডে মিল দেখভালের দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভেবেছেন। পূর্ব বর্ধমানের নানা স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের দাবি, “বাজার, মুদির সামগ্রী আনা, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে সমন্বয়— এ সব শিক্ষাকর্মীরা করতেন। তাঁদের অনেকে চাকরি হারিয়েছেন।” বর্ধমানের কাঞ্চননগর দীননাথ হাই স্কুলের দৃষ্টিহীন শিক্ষক কেশবনাথ সাধু মিডডে মিল দেখভাল করতেন। চাকরিহারার তালিকায় থাকায়, সম্প্রতি স্কুলে এসে আর না আসার কথা জানালে, বেশ কিছু পড়ুয়া তাঁকে ঘিরে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

অভিভাবকদের অনেকে যদিও মনে করেন, মিডডে মিলের থেকেও বেশি চিন্তা, পঠনপাঠন চলবে কী ভাবে! বীরভূমের লাভপুরে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের বাবা সাইদুল আলম বলেন, ‘‘এত শিক্ষক এক সঙ্গে চলে গেলে পড়াশোনা কী করে হবে, সেটাই বেশি ভাবনা!’’ মুর্শিদাবাদে সীমান্ত এলাকা লোচনপুরের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানান, স্বনির্ভর গোষ্ঠী মিডডে মিল কোনও রকমে সামাল দিচ্ছে। কিন্তু ক্লাস চালানোই চিন্তা। নদিয়ার চর স্বরূপগঞ্জের অভিভাবক পঙ্কজ বর্মণের বক্তব্য, “মিডডে মিলে উপকার হয় ঠিকই। তবে খাবারের ব্যবস্থা কোনও ভাবে হয়ে যাবে। কিন্তু স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকলে, সে অভাব পূরণ হবে না।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mid Day Meal School students Bengal SSC Recruitment Case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy