Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
elephant attack

হাতির ভয়ে পড়তে যাওয়া বন্ধ, সঙ্কটে পরীক্ষার্থীরা

২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। ফলে পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রস্তুতির বিশেষ সময় নেই। এ দিকে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিদের উপদ্রব থেমে নেই।

Students

জঙ্গল-পথে হাতির ভয়। তাই দল বেঁধেই স্কুলে যাওয়া। বড়জোড়ার দধিমুখায়। নিজস্ব চিত্র

তারাশঙ্কর গুপ্ত
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৮
Share: Save:

পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ৮২টি হাতি আসার পরে গত কুড়ি দিনে বাঁকুড়া জেলায় দাঁতালের হানায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মুহূর্তে জেলায় রয়েছে ৭২টি হাতি। দলে ‘খুনে’ হাতি থাকার আশঙ্কায় সন্ধ্যার পরে গ্রামবাসীকে বাড়ির বাইরে বেরোতে বারণ করে প্রচার শুরু করেছে বন দফতর, পুলিশ-প্রশাসনও। এই পরিস্থিতিতে বাঁকুড়ার বড়জোড়া ও বেলিয়াতোড় রেঞ্জের জঙ্গল লাগোয়া এলাকার ছেলেমেয়েদের অনেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে। সকাল-সন্ধ্যায় টিউশনে যাওয়াও বন্ধ হয়েছে। ফলে, আতান্তরে পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাও। যদিও রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলান ডেইভালের আশ্বাস, ‘‘হাতিগুলিকে বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকে অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা নিয়েছি।’’

২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। ফলে পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রস্তুতির বিশেষ সময় নেই। এ দিকে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিদের উপদ্রব থেমে নেই। ১০ জানুয়ারি রাতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বড়জোড়া ব্লকের দুই গ্রামে দু’জন হাতির হানায় মারা যান। ১৮ জানুয়ারি ভোরে বেলিয়াতোড়ের জঙ্গলের পথে এক গ্রামবাসীকে হাতি পিষে মারে। ৩০ জানুয়ারি সোনামুখীতে হাতি তাড়াতে গিয়ে হাতির পায়ের আঘাতেই এক হুলা কর্মীর মৃত্যু হয়।

তাই হাতি উপদ্রুত এলাকায় সূর্য ডুবলেই আতঙ্ক নেমে আসছে। সকালেও কুয়াশা ভাল ভাবে না কাটা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে বেরোতে অনেকে সাহস পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় সন্তানদের ঘরের বাইরে টিউশনে ছাড়তে বুক কাঁপছে অভিভাবকদের। বড়জোড়ার রাউতরা গ্রামের এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বাবা উৎপল সিংহ বলেন, ‘‘কয়েক দশক ধরেই এলাকায় হাতিদের আনাগোনা। কিন্তু এ বার দলে খুনে হাতি রয়েছে। ভয়ে মেয়েকে গ্রামের বাইরে টিউশনে যেতে দিচ্ছি না।’’ আর এক অভিভাবক শ্রীনেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘কোনও কোনও গৃহশিক্ষক অনলাইনে পড়াচ্ছেন। কিন্তু গরিব পড়ুয়াদের অনলাইনে পড়ার সামর্থ্য কোথায়?’’

বেলিয়াতোড়ের দধিমুখা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মুন্না প্রামাণিক জানায়, হাতির ভয়ে সকাল-সন্ধ্যার টিউশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বড়জোড়ার ভূষতোড়ার গৃহশিক্ষক লালমোহন আখুলির আক্ষেপ, ‘‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের টিউশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওদের খুব অসুবিধা হয়ে গেল।’’

প্রভাব পড়ছে স্কুলের হাজিরাতেও। এবিটিএ-র বড়জোড়া আঞ্চলিক শাখার সম্পাদক মহসিন মণ্ডল জানান, এলাকার ১৭টি হাই স্কুলের প্রায় হাজার পাঁচেক ছাত্রছাত্রীর হাতির আতঙ্কে স্কুলে আসা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। গদারডিহি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্নেহাশিস পান জানান, অনেকেই মিড-ডে-মিলের পরেই বাড়ি ফিরতে চাইছে। কোচকুণ্ডা গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্র মিলন বাগদি বলে, ‘‘পাড়ার সবাই দল বেঁধে স্কুলে যাই। রাস্তায় হাতি থাকলে কারও না কারও নজরে পড়বে। কিন্তু একা পড়ে গেলে স্কুলে যাই না।’’

মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলান ডেইভাল বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের রাস্তায় বন দফতরের গাড়ি ও কর্মীরা থাকছেন। সমস্যা বুঝলে রেঞ্জ আধিকারিককে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

elephant attack barjora bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE