Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪

‘গান’ ছেড়ে জীবনের গানে প্রাক্তন মাওবাদীরা

প্রাক্তন মাওবাদীদের ঝুমুর গান শেষ হতেই হাততালি দিয়ে উঠলেন দর্শকাসনে উপস্থিত জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা।

নাচে-গানে মঞ্চ মাতালেন প্রাক্তন মাওবাদীরা। —নিজস্ব চিত্র।

নাচে-গানে মঞ্চ মাতালেন প্রাক্তন মাওবাদীরা। —নিজস্ব চিত্র।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১২
Share: Save:

বদলে গিয়েছে জীবন। একটা সময় ‘গান’ অর্থাৎ বন্দুক হাতে জীবন কাড়ার হুমকি দিতেন। এখন ওঁরাই গাইছেন জীবনের গান।

ওঁরা প্রাক্তন মাওবাদী। শনিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর শহরের প্রদ্যোত স্মৃতি সদনে শ্যামাপদ মাহাতো, বিকাশ মাহাতো, সুনীল মাহাতো, দীপালি মাহাতোরা সমবেত কণ্ঠে গাইলেন— ‘পিন্দারে পলাশের বন, পলাব পলাব মন, নেংটি ইন্দুরে ঢোল কাটে, হে কাটে হে, বতরে পিরিতির ফুল ফোটে’। প্রাক্তন মাওবাদীদের ঝুমুর গান শেষ হতেই হাততালি দিয়ে উঠলেন দর্শকাসনে উপস্থিত জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা।

জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতর আয়োজিত তিনদিনের ‘একতাই সম্প্রীতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে রবিবার। সেই মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার অনুরোধ গিয়েছিল পুলিশের কাছে। সম্মতিও মেলে। তবে জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার পরামর্শ ছিল, দলে স্পেশ্যাল হোমগার্ডদেরও রাখতে হবে। প্রাক্তন মাওবাদীদের অনেকেই এখন স্পেশ্যাল হোমগার্ড। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁদেরই জনা ১৬ মিলে জমিয়ে দিলেন অনুষ্ঠান।

আরও পড়ুন: ‘ভোট এক্সপ্রেসে’ রাজা উজির, রোষে মামা

জঙ্গলমহলে মাওবাদী হিংসা পর্বে বিস্ফোরণ, হামলা-সহ নানা অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল ওঁদের বিরুদ্ধে। হাতে থাকত বন্দুক, বোমা। বন্দুক এখনও ধরেন তাঁরা। তবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, সুরক্ষায়। মেদিনীপুর গ্রামীণের চাঁদড়ার শিরষির বাসিন্দা শ্যামাপদ মাওবাদী নেতা বাদল মাহাতোর দলের সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি গুড়গুড়িপাল থানায় কর্মরত। সমবেত সঙ্গীত তো বটেই শ্যামাপদ শনিবার ঝুমুরের সুরে গেয়েছেন স্বরচিত গান, ‘'দাদা ধীরে গাড়ি চালা, দাদা হেলমেটটা লাগা। এত সাধের মানব জীবন, কেন করিস হেলা’। ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে গান বেঁধেছেন প্রাক্তন এই মাওবাদী। মাস কয়েক আগে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় সন্ধ্যার দিকে অবসরে গান লিখে তাতে সুর দেন তিনি। শ্যামাপদের কথায়, ‘‘পুলিশ লাইনের পুজোতেও গানটা গেয়েছি। সকলে প্রশংসা করলে ভালই লাগে।’’ পুলিশ সুপারও মানছেন, ‘‘ওঁদের (প্রাক্তন মাওবাদী) অনেকে সত্যিই ভাল নাচ- গান করেন। ওঁদের সব রকম ভাবেই উৎসাহ দিই।’’

আরও পড়ুন: দরজা খুলতেই ছররা হিবার চোখে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত নীতি ছিল, মাওবাদীরা অস্ত্র ছেড়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এলে তাঁদের ভার সরকার নেবে। এই সময়ের মধ্যে অনেকেই আত্মসমর্পণ করে পেয়েছেন ‘পুনর্বাসন প্যাকেজ’, পুলিশে চাকরিও। ২৪-৩০ নভেম্বর প্রতি বছরের মতো এ বারও ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালন করছে মাওবাদীরা। প্রাক্তনীরা অবশ্য সে সব থেকে অনেক দূরে। ফেলে আসা জঙ্গল-জীবনের কথা মনে পড়ে না? বিকাশ মাহাতো, সুনীল মাহাতোদের জবাব, ‘‘পুরনো দিনের কথা আর মনে রাখতে চাই না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Maoist Singers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE