Advertisement
E-Paper

চা শ্রমিকের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট, বহু লক্ষের লেনদেন শিলিগুড়িতে

পেশায় চা-শ্রমিক, নিরক্ষর আদিবাসী মহিলার সাপ্তাহিক আয় বড়জোর হাজার টাকা। অথচ, তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে মাস আটেক ধরে ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি লেনদেন করার অভিযোগ উঠেছে দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে লেনদেনের হিসেব (স্টেটমেন্ট) ওই মহিলাকে পাঠানো হয়।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০৩:১০

পেশায় চা-শ্রমিক, নিরক্ষর আদিবাসী মহিলার সাপ্তাহিক আয় বড়জোর হাজার টাকা। অথচ, তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে মাস আটেক ধরে ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি লেনদেন করার অভিযোগ উঠেছে দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে লেনদেনের হিসেব (স্টেটমেন্ট) ওই মহিলাকে পাঠানো হয়। সেই সূত্রেই বিষয়টি জানাজানি হয়। শনিবার চা-বাগানের কর্মীদের সঙ্গে শিলিগুড়ির স্টেশন-ফিডার রোডের ওই ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে হইচই করেন মহিলা।

নকশালবাড়ির মারাপুর চা বাগানের শ্রমিক সুগান ওঁরাও নামে ওই মহিলার অভিযোগ, কোনও এক দুষ্টচক্র কোনও ভাবে তাঁর সচিত্র পরিচয়পত্র জোগাড় করে ওই অ্যাকাউন্ট খুলে বহু টাকার লেনদেন করেছে। শুধু তা-ই নয়, এর পরেই বাগানের চা শ্রমিক নেতাদের অনেকের কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে যে, নকশালবাড়ির মাঞ্ঝা চা বাগানের একাধিক মহিলা শ্রমিকের নামেও আরও কয়েকটি ব্যাঙ্কে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ির এসএফ রোডের ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কে সুগান ওঁরাওয়ের নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। বিধি অনুযায়ী, অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে অন্তত এক বার গ্রাহককে সশরীরে ব্যাঙ্কে হাজির হতে হয়। তিনি অন্তত ওই ব্যাঙ্কে এর আগে কখনও আসেননি বলে সুগানের দাবি।

ওই মহিলা জানান, সম্প্রতি ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে একটি লেনদেনের হিসেব পেয়ে তিনি বাগানের অফিসে হেড-ক্লার্ক উদয়ন চক্রবর্তীর কাছে যান। উদয়নবাবু বলেন, ‘‘দেখি, ওই অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ি। কারণ, সুগানের আয় তো আমাদের অজানা নয়।’’ সুগানকে নিয়ে উদয়নবাবুরা ব্যাঙ্কে যান। উদয়নবাবুর দাবি, ‘‘প্রথমে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আমল দিচ্ছিলেন না। পরে আমরা চাপাচাপি করায় কোথায় গাফিলতি হয়েছে তা খুঁজে বার করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।’’

সুগান বলেন, ‘‘কখনও এক সঙ্গে এক লক্ষ টাকা দেখিনি। কাজেই কে বা কারা এ কাজ করল, কোনও খারাপ কাজের টাকা আমার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন হল কি না সেটা জানতে ব্যাঙ্কে যাই। পুলিশকে মৌখিক ভাবে ব্যাপারটা জানিয়েছি। লিখিত ভাবেও জানাব।’’

ব্যাঙ্কের ওই শাখার ম্যানেজার জানান, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে, কার মাধ্যমে ওই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে—তা খতিয়ে দেখা হবে। দেখা হবে ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্টদের ভূমিকাও। হিসেবমতো ওই মহিলার আরও আগেই ব্যাঙ্ক-স্টেটমেন্ট পাওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে তিনি তা পেলেন না কেন, তা-ও দেখা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক সূত্রের দাবি, খোঁজখবর করে তাঁরা জেনেছেন, একটি চাল কলের টাকার লেনদেন হয়েছে ওই অ্যাকাউন্টে।

এ ভাবে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা লেনদেনে জড়িতদের চিহ্নিত করে কড়া আইনি পদক্ষেপের দাবি উঠেছে চা বাগানের অফিসার-কর্মী-শ্রমিকদের তরফ থেকে। ব্যাঙ্কটির কর্মীদের নজর এড়িয়ে কী ভাবে এমন করা সম্ভব, সে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সভাপতি তথা চা শ্রমিক সংগঠনের অন্যতম নেতা অলক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কে জানে কোথাকার টাকা এ ভাবে লেনদেন করা হচ্ছিল। ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে চিহ্নিত করা উচিত। মহিলার কাছে ব্যাঙ্ক-স্টেটমেন্টটা পৌঁছেছিল ভাগ্যিস।’’

kishor saha bank money siliguri tea garden naxalbari police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy