শমসেরগঞ্জ: সিপিএম শমসেরগঞ্জের হিংসাত্মক ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করল রবিবার। শুধু খুনের ঘটনা নয়। উমরপুর থেকে শমসেরগঞ্জ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনাকে এই তদন্তের আওতায় আনতে হবে। তবে নিহতদের পরিবারের কাছে তাঁরা মানসিক ভাবে কতটা পৌঁছতে পারলেন, সেই প্রশ্ন থেকেই গেল।
জাফরাবাদের নিহত পরিবারের বৃদ্ধ এক সময় সিপিএমের দলীয় সদস্য ছিলেন। ১৯৭৮ সালে এলাকায় সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে জয়ী হন। শমসেরগঞ্জের সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তোয়াব আলি কিন্তু বলেন, “দীর্ঘ দিন দলের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই। তাঁর পরিবারের লোকজনও কেউ আর দলের সঙ্গে যুক্ত হননি। রাজনীতিও করতেন না।”
এর পরেই আসে পরিবারটিকে অর্থ সাহায্যের প্রশ্ন। রবিবার রাজ্য সরকারের সাহায্য গ্রহণ করার জন্য তৃণমূল নেতাদের আর্জি যেমন ফিরিয়ে দিয়েছে মৃতের পরিবার, ঠিক তেমনই বিগ্রেড সমাবেশ থেকে সিপিএম যে সাহায্য দেওয়ার নামে অর্থ সংগ্রহ করেছে, তারও বিরোধিতা করেছে। নিহত পুত্রের স্ত্রী এ দিন জানান, কোনও রাজনৈতিক দলের কাছে কোনও আর্থিক সাহায্য তারা চাননি। তা নেবেনও না। বিজেপি নেতারা এখনও ওই পরিবারের সঙ্গে সে ভাবে দেখা করেননি। তবে প্রথম থেকেই তাঁরা জনসমক্ষে বার্তা দিয়েছেন, তাঁরা পরিবারটির পাশে রয়েছেন।
পরিবারের দাবি, অর্থ সাহায্যের থেকেও তাঁদের কাছে বেশি জরুরি, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। শনিবার জাতীয় মহিলা কমিশনের দুই প্রতিনিধি পরিবারের সঙ্গে দেখা করলে, পরিবারের তরফে বলা হয়, এলাকায় যেন বিএসএফ ক্যাম্প বসে ও এনআইএ যেন তদন্তে নামে। কমিশনের সদস্যেরা আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি তাঁরা দিল্লিতে জানাবেন।
কলকাতার বিগ্রেড সমাবেশে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী ও সমর্থকেরা যোগ দিলেও এলাকার পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে শমসেরগঞ্জ ও ধুলিয়ানের নেতা ও কর্মীদের এ দিন এলাকা ছাড়তে নিষেধ করা হয়। সিপিএম নেতা তোয়াব আলি বলেন, “এখনও এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। আশ্চর্যের কথা, প্রায় ১০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে, একটি সর্বদলীয় সভাও করতে পারেনি এলাকায়। তৃণমূল ও বিজেপির এক নেতার উপস্থিতিতে যে বৈঠক হয়েছে, তাতে কংগ্রেস বা সিপিএম ডাক পায়নি।’’ তোয়াবের আরও বক্তব্য, “এনআইএ বা সিট করে কী হবে? তাই আমরা দাবি করেছি, বর্তমান কোনও বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক।’’ বিজেপির মালদহ দক্ষিণের সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ বলেন, “এখনও শমসেরগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। আমরা শেষ পর্যন্ত এনআইএ তদন্ত করানো চেষ্টা করব। সর্বদলীয় বৈঠক করা উচিত ছিল প্রশাসনের।” তৃণমূলের শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম পাল্টা বলেন, “আস্থা ফিরছে বলেই রবিবার ধুলিয়ানে বেতবোনা পল্লিতে ফিরে এসেছেন ২৯৩ জন মানুষ।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)