দশম শ্রেণিতে সপ্তম হয়েছিল বীরভূমের মুরারইয়ের দাতুড়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র আয়ুব আলি মোল্লা।
স্কুল বন্ধ থাকাকালীন বাড়িতে থেকে পড়ার খরচ জোগাতে পারেনি পরিবার। তাই বিড়ি বাঁধতে হয়েছিল ‘ফার্স্ট গার্ল’কেও। বই ফেলে দিনমজুরি করতে হত মেধাবী ছাত্রকে। স্কুল খুলতে দু’চোখে স্বপ্ন নিয়ে পড়তে ফিরে এল তাদের অনেকেই।
দশম শ্রেণিতে সপ্তম হয়েছিল বীরভূমের মুরারইয়ের দাতুড়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র আয়ুব আলি মোল্লা। পরিবার বাড়িতে থেকে পড়ার খরচ দিতে পারেনি বলে মাঠে কাজ করতে হয়েছিল তাকে। মঙ্গলবার স্কুলে এসে সে বলল, ‘‘ধান পোঁতার কাজ করে কিছু রোজগার করে বাড়িতে দিতাম। বন্ধুরা অনেকে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছে। পড়াশোনা করতে চাই বলেই স্কুল খুলতেই এসেছি।’’
আরেক ছাত্র মহম্মদ নাসিম আখতার রেজার অভিজ্ঞতা, ‘‘সাত থেকে আট ঘণ্টা কাজ করে আড়াইশো টাকা রোজগার করেছি। বাবাও একই কাজ করেন। কতটা কষ্ট করতে হয় তা বুঝেই আবার বিদ্যালয়ে এসেছি। দিনরাত পড়ব। একদিন চাকরি করে বাবা মায়ের কষ্ট দূর করব।’’
ছাত্ররা কেউ দিনমজুরি, শ্রমিকের কাজ করত। অনেকে কাজ নিয়েছিল গ্যারাজে। বাদ যায়নি ছাত্রীরাও। পাইকর হাই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী মমতাজ বেগম ক্লাসে প্রথম হত। বাড়িতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার পড়া। তার কথায়, ‘‘বাবা দিনমজুরি করেন। করোনা পরিস্থিতিতে কাজই ছিল না। গৃহশিক্ষকের বেতন দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই বাধ্য হয়ে বিড়ি বাঁধতে শিখেছিলাম। স্কুল খোলায় আর বিড়ি বাঁধতে হবে না।’’ মাধ্যমিকে ভাল ফল করতে চায় বলে জানাল মমতাজ।
বিড়ি বাঁধতে হত একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী জামনাতুন নাইমাকেও। মাধ্যমিকে ৬৭২ পেয়েছিল সে। তার বাবা ভাগচাষি। এ দিন সে বলল, ‘‘অর্থের অভাবে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে পারিনি। স্কুল খুলে যাওয়ায় আর বিড়ি বাঁধব না বলে ঠিক করেছি। পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করব।’’
পড়ুয়ারা ফিরে আসায় খুশি শিক্ষকেরাও। তবে সকলে যে ফেরেনি তাও মানছেন তাঁরা। এ দিন পাইকর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক তাপস চট্টোপাধ্যায় তিন সহকর্মীর সঙ্গে বিভিন্ন পাড়ায় ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যারা স্কুলে আসেনি তাদের খোঁজ নেন। দাতুড়া হাই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ মিরাজ হোসেনও বলেন, ‘‘যারা আজ আসেনি তাদের সঙ্গে কথা বলে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy