Advertisement
E-Paper

মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ভরাডুবি রুখল মাছই

প্রলয়কালে মৎস্যরূপে বেদ আর সৃষ্টি রক্ষা করেছিলেন বিষ্ণু। সেটা ছিল পুরাণের যুগ।এই কলিকালেও মাছ যে ত্রাণকর্তার ভূমিকা ভোলেনি, তার প্রমাণ পাচ্ছে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম। কেননা শেষ পর্যন্ত মাছই ভরাডুবির মুখ থেকে ফিরিয়ে আনল তাদের!

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০৪:১৬

প্রলয়কালে মৎস্যরূপে বেদ আর সৃষ্টি রক্ষা করেছিলেন বিষ্ণু। সেটা ছিল পুরাণের যুগ।

এই কলিকালেও মাছ যে ত্রাণকর্তার ভূমিকা ভোলেনি, তার প্রমাণ পাচ্ছে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম। কেননা শেষ পর্যন্ত মাছই ভরাডুবির মুখ থেকে ফিরিয়ে আনল তাদের!

নিগমের অতিথিশালা আছে রাজ্যের আট জায়গায়। পর্যটকের অভাবে ধুঁকছিল সব ক’টাই। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছিল যে, কয়েকটি অতিথিশালায় ঝাঁপ ফেলার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নিগমের ব্যবসার মরা গাঙে জোয়ার আনল মাছ।

বছরের বিভিন্ন মরসুমে হরেক মাছের জিভে জল আনা পদ সাজিয়ে প্রচার শুরু করতেই পরিস্থিতিটা বদলে গেল প্রায় ভোজবাজির মতো। মাছেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নিগমের এক কর্তা বলেন, ‘‘মৎস্যবিলাসী বাঙালি পর্যটক টানতে স্রেফ মাছকে অবলম্বন করেই আমরা বেঁচে গেলাম। শুধু বাঙালিরাই নন, মাছের টানে এখন আমাদের বিভিন্ন অতিথিশালায় এসে থাকছেন ভিন্‌ রাজ্যের অনেক পর্যটকও।’’ নিগমের অতিথিশালা রয়েছে ওল্ড দিঘা, বকখালির কাছে হেনরি আইল্যান্ড, বকখালি, নিউ দিঘা, বর্ধমানের যমুনাদিঘি, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, শিলিগুড়ি এবং ই এম বাইপাসের ক্যাপ্টেন ভেড়িতে। এবং প্রায় সর্বত্রই সুখবর।

পর্যটক-স্রোতের দরুন লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ পড়ছে নিগমের ভাঁড়ারেও। অতিথিশালা থেকে গত তিন আর্থিক বছরে আয়ের লাগাতার বৃদ্ধি দেখে নিগমের কর্তারা উৎসাহিত। মৎস্য দফতরের খবর, ২০১৪-’১৫ সালে নিগমের অতিথিশালা থেকে আয় হয়েছিল ৫৩ লক্ষ ৫৩ হাজার ৫০৪ টাকা। ২০১৫-’১৬ সালে তা বেড়ে হয় এক কোটি ১৫ লক্ষ ১৭ হাজার ৪০৫ টাকা। আর ২০১৬ থেকে ’১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয় দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। ’১৪-’১৫-র হিসেব ধরলে বৃদ্ধি সাড়ে তিন গুণ! সৌজন্য মাছ, মাছের হরেক পদ।

মাছের সাহায্য নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটক টানতে অতিথিশালায় ঘর বুকিংয়ের নিয়মও বদলেছে নিগম। কর্পোরেট হোটেলগুলির সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকতে ২০১৫ সাল থেকে অনলাইনে বুকিংয়ের ব্যবস্থা করেছে তারা। নিগমের ভাগ্যের চাকাটা ঘুরতে শুরু করে তার পরেই। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌম্যজিৎ দাস জানান, নিগমের অতিথিশালায় যাঁরা প্রথম বার ঘুরে গিয়েছেন, তাঁদের জন্মদিন ও বিবাহবার্ষিকীর মাসখানেক আগে এসএমএস পাঠানো হয়। জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীতে ১৫ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এই ছা়ড়ের সুযোগ দেওয়ায় গত দু’বছরে পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।

নিগমের মৎস্যমুখী আতিথেয়তার সুনাম মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ায় আয়ের রাস্তাটাও সুগম হয়েছে। রসনাতৃপ্তির এলাহি আয়োজন করতে প্রশিক্ষিত রাঁধুনির বন্দোবস্ত হয়েছে। ‘‘মাছের পদে তারতম্য আনতে অতিথিশালার রাঁধুনিদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি নামী বাঙালি রেস্তোরাঁর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে মৎস্য দফতর। মেনুতে যুক্ত হয়েছে ফিশ স্যান্ডউইচ, ফিশ পরোটা, গুগলি কাবাব, মাছের বিরিয়ানি, ফিশ তন্দুর, প্রন বিরিয়ানি ও মিক্সড বিরিয়ানি (চিংড়ি, মাছ ডিম),’’ বললেন এক নিগমকর্তা।

‘মৎস্য মারিব, খাইব সুখ’-এর আপ্তবাক্য মেনে মাছ শিকারের ব্যবস্থাও করেছে নিগম। ওই সংস্থার দাবি, সেখানকার বিভিন্ন পদ যে-সব মাছ দিয়ে সাজানো হয়, তার সবই তাদের নিজস্ব জলাশয়ের। আগ্রহী পর্যটকদের নিগমের জলাশয় থেকে মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ছিপে ওঠা মাছ ভেজে খাওয়ানোরও ব্যবস্থা থাকছে। এটা উপরি পাওনা।

‘‘অতিথিশালাগুলির কথা আগে কেউ এ ভাবে ভাবেনি। আমরা ভেবেছি। হাল ফেরানোর জন্য চেষ্টা চলছে নানা ভাবে। ফলও মিলছে,’’ বললেন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ।

Fisheries Development Corporation Fish Item
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy