E-Paper

কোথাও আকাল, কোথাও আবার চিন্তা ছোট ইলিশ

দিঘা মোহনায় জুলাইয়েও ইলিশের আমদানি স্বাভাবিকই ছিল। ছন্দপতন ঘটে অগস্টের গোড়ায়। ১ থেকে ৩ অগস্ট বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে সব ট্রলারকে ফিরতে বলা হয়।

কেশব মান্না, সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৫৯
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অবশ্য ইলিশের আমদানি ভালই।

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অবশ্য ইলিশের আমদানি ভালই। —ফাইল চিত্র।

দু’টি ঝুড়িতে মাত্র ১৬ কেজি ইলিশ নিয়ে ফিরেছে একটি ট্রলার। অথচ চার দিন গভীর সমুদ্রে খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। এ ক’টা ইলিশে পড়তায় পোষাবে কী করে— উদ্বেগে মৎস্যজীবীরা।

কাঁথির শৌলা মৎস্য বন্দরে ফিরেছে ওই ট্রলারটি। এই নিয়ে চার বার গভীর সমুদ্রে গেলেন মৎস্যজীবীরা। তবু লোকসানে চলছে কারবার। মৎস্যজীবী শম্ভু লায়ার আক্ষেপ, ‘‘ট্রলার মালিকের থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। জানি না, কী করে মেটাব।’’

দিঘা মোহনায় জুলাইয়েও ইলিশের আমদানি স্বাভাবিকই ছিল। ছন্দপতন ঘটে অগস্টের গোড়ায়। ১ থেকে ৩ অগস্ট বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে সব ট্রলারকে ফিরতে বলা হয়। দুর্যোগ কাটলে ৪ অগস্ট থেকে ফের সমুদ্র-যাত্রায় যায় কয়েকশো ট্রলার। তবে দু’-এক ঝুড়ির বেশি ইলিশ নিয়ে ফিরতে পারেনি কোনওটিই।

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অবশ্য ইলিশের আমদানি ভালই। মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রে খবর, এ বছর মরসুমের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানা, কাকদ্বীপ ও সাগর মিলিয়ে প্রায় ১১ হাজার টন ইলিশ মিলেছে। তবে এখানে চিন্তা ছোট ইলিশ। কাকদ্বীপ, নামখানা, ডায়মন্ড হারবার ও পাথরপ্রতিমার অধিকাংশ বাজারে ২০০-২৫০ গ্রামে মাছ বিকোচ্ছে ৪০০ টাকা কেজিতে। স্থানীয় মৎস্যজীবী সঞ্জয় দাস মানছেন, ‘‘এ বছর ইলিশ ভালই মিলেছে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ছোট জালের ফাঁস দিয়ে ছোট ইলিশ ধরে দেদার বিক্রি করছে।’’

অথচ ২৩ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। মৎস্য বন্দরে এ নিয়ে মাইকে প্রচার চলেছে। বড় আকারের জাল ব্যবহার-সহ একাধিক নির্দেশিকাও জারি হয়েছে। তা-ও কিছু দিন আগে ফ্রেজারগঞ্জে প্রশাসন ১০ টনের কাছাকাছি ছোট ইলিশ বাজেয়াপ্ত করে। জুলাইয়ের শেষে ডায়মন্ড হারবারে বিভিন্ন গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কুইন্টাল ছোট ইলিশ বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। এমনটা চললে আগামীতে বাঙালির পাতে আর ইলিশ পড়বে কি না, সেই আশঙ্কাও রয়েছে। কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতির অভিযোগ, ‘‘মৎস্য দফতর এক বারও সংঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেনি। ফলে সামনের বছর ফের ইলিশের ঘাটতি দেখা দেবে।’’ জেলার সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) পিয়াল সর্দার অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের সাহায্য নিয়ে ছোট ইলিশ বাজেয়াপ্ত করছি। বন্দরগুলিতে প্রচারও হচ্ছে।’’

এ বার সমুদ্রে মাছ ধরার মরসুম শুরু হয়েছে ১৫ জুন। তখন থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত ইলিশের মরসুম। দক্ষিণবঙ্গে এখন মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। গভীর সমুদ্রও উত্তাল। তবে কাঁথি, দিঘার মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, পুবালি বাতাস ও ঝিরঝিরে বৃষ্টি না হওয়ায় ইলিশের আকাল চলছে। এখানে চলতি মরসুমে দু’দিন ভাল ইলিশ ধরা পড়েছে। জুলাইয়ের শুরুতে এক দিন ১০ টন এবং ১৪ জুলাই ৩৫ টন। তার পর এক রকম খরাই চলছে। দামও চড়ছে। দিঘার বাজারে ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা কেজি দরে। ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের মাছের দাম ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামলের মতে, ‘‘৯০ মিলিমিটারের কম ব্যাসের ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা চলছে। এতে ছোট ইলিশ জালেই মারা পড়ছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূল বা নদীর ভেতরে আর এগোতে পারছে না।’’

ইলিশ বাঁচাতে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি তাই সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে পূর্ণিমা আর অমাবস্যার আগে-পরে পাঁচ দিন করে সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি তুলেছে। সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্তকুমার প্রধানের আশ্বাস, ‘‘কী পরিমাণ মাছ আমদানি হচ্ছে, সেই তথ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fishermen West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy