Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উত্তমকুমারের স্মৃতি ধরে রাখতে চায় গোহালপোতা

উত্তমকুমারের গ্রাম। গ্রামীণ হাওড়ায় এই নামেই পরিচিত হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের গোহালপোতা। এই গ্রামে কলকাতার চলচিত্র নির্মাণ ও পরিবেশন সংস্থা চণ্ডীমাতা ফিল্মসের কর্ণধার প্রয়াত সত্যনারায়ণ খানের বাড়ি রয়েছে।

শ্যুটিং-এ এলেই এই বাড়িতে থাকতেন উত্তমকুমার।— সুব্রত জানা

শ্যুটিং-এ এলেই এই বাড়িতে থাকতেন উত্তমকুমার।— সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৪
Share: Save:

উত্তমকুমারের গ্রাম।

গ্রামীণ হাওড়ায় এই নামেই পরিচিত হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের গোহালপোতা।

এই গ্রামে কলকাতার চলচিত্র নির্মাণ ও পরিবেশন সংস্থা চণ্ডীমাতা ফিল্মসের কর্ণধার প্রয়াত সত্যনারায়ণ খানের বাড়ি রয়েছে। সত্যনারায়ণবাবুর ব্যক্তিগত সখ্যতা ছিল উত্তমকুমারের সঙ্গে। সেই সূত্রেই চণ্ডীমাতা ফিল্মসের অনেকে সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন উত্তমকুমার এবং সেই সব ছবির অনেক দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছিল গোহালপোতায়। এই গ্রামের মাঠ, গাছপালা, নদীর ছবি তোলা রয়েছে ধন্যি মেয়ে, সন্ন্যাসী রাজা, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, কমললতা, হার মানা হার, বনপলাশীর পদাবলির মত অনেক ছবিতে। কিন্তু উত্তমকুমারের মৃত্যুর ৩৬ বছর পরেও সেই গ্রামকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বার সেই দাবিতেই সরব হলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর মহনায়কের জন্মদিনে ওই গ্রামে অনুষ্ঠান করল জগৎবল্লভপুর সংস্কৃতি মঞ্চ। সেখানেই দাবি উঠল, সিনেমাকেন্দ্রিক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠুক গোহালপোতায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, উত্তমকুমারের থাকার জন্য গোহালপোতায় বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছিলেন সত্যনারায়ণবাবু। তাঁর পুত্রবধূ মৃদূলা খান জানান, তিনতলা ওই বাড়িতে প্রথম শ্রেণীর হোটেলের মতো সুবিধা ছিল। সত্যনারায়ণবাবু এবং তাঁর দুই পুত্র মারা গিয়েছেন। বড় পুত্রবধূ মৃদূলাদেবী এখন কলকাতায় থাকেন। তবে গোয়ালপোতার ওই বাড়ি এখনও খান পরিবারের মালিকানায় রয়েছে। মৃদুলাদেবীর কথায়, ‘‘উত্তমকুমার টানা তিরিশ বছর আমাদের বাড়িতে এসে়ছেন। শেষ বার এসেছিলেন ১৯৮০ সালের ‘প্রতিশোধ’ ছবির শ্যুটিং করতে। আমি বিভিন্ন সময়ে তাঁর জন্য সরবত করে নিয়ে গিয়েছি। তিনি বেশিরভাগ সময়ে অভিনয়ের চিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকতেন। ডাকলে মনে হল হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠলেন।’’ মহানায়কের স্মৃতি এখনও টাটকা স্থানীয় বাসিন্দা সরস্বতী পালের মনে। তিনি কথায়, ‘‘১৯৭৪ সালে এখানেই হয়েছিল বনপলাশীর পদাবলী সিনেমার শ্যুটিং। আমার তখন সদ্য বিয়ে হয়েছে। পাড়ার অন্য মহিলাদের সঙ্গে উত্তমকুমারকে দেখতে এসেছিলাম।’’ সত্যনারায়ণবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁদের ব্যবসায় কিছুটা ভাটা পড়ে। কমে আসে ছবির শ্যুটিং। এখন সেটা একেবারেই বন্ধ।

শনিবার উত্তমকুমারের জন্মদিনের অনুষ্ঠানটি হয় ওই বাড়ির সামনে। সেখানে হাজির ছিলেন শ’দুয়েক গ্রামবাসী। কলকাতা থেকে এসেছিলেন মৃদুলাদেবী। উদ্যোক্তাদের পক্ষে আশিস দাস এবং সৌমেন পাত্র বলেন, ‘‘এই গ্রামে উত্তমকুমারের জন্মদিন পালন প্রথম। এই গ্রামে সিনেমাকেন্দ্রিক পর্যটনকেন্দ্র তৈরির দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা। আমরা তাঁদের সেই দাবির কথা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে পৌঁছে দেব।’’ হাওড়া জেলা পরিষদের পর্যটন এবং বনভূমি কর্মাধ্যক্ষ মানস বসু বলেন, ‘‘এটি খুবই ভাল প্রস্তাব। সম্প্রতি পর্যটনমন্ত্রী হাওড়া জেলা পরিষদের কাছে জেলায় সম্ভাব্য পর্যটনকেন্দ্রগুলির ঠিকানা জানতে চেয়েছেন। লিখিত প্রস্তাব পেলে আমরা সেটি পর্যটনমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE