গ্রীষ্মে এ বার তাপপ্রবাহের দাপট বৃদ্ধির পাশাপাশি কম বৃষ্টিপাতের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিল আবহাওয়া দফতর। তবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এসে সেই আশঙ্কা এখনও সত্যি হয়নি বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, ১ মার্চ থেকে ৫ মে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সামগ্রিক ভাবে ১৬ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। তবে এই ঘাটতিকে ‘স্বাভাবিক’ গোত্রেই ফেলছে হাওয়া অফিস। ওই পরিসংখ্যান থেকে এ-ও বোঝা যাচ্ছে যে এ বার উত্তরবঙ্গের তুলনায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি বেশি হয়েছে। ১ মার্চ থেকে ৫ মে পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে ১৩ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ১৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই বলছেন, কম বৃষ্টির পূর্বাভাসের জেরে কৃষির উপরে যে কুপ্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল, তাও অনেকাংশে দূর হয়েছে। তবে সাধারণত দক্ষিণের তুলনায় উত্তরে বৃষ্টি বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে উত্তরের বদলে দক্ষিণে বৃষ্টি কি প্রকৃতির খেয়ালে কোনও বদলের ইঙ্গিত? যদিও মৌসম ভবনের এক আবহবিদের বক্তব্য, ‘‘প্রকৃতির নিজস্ব খামখেয়ালিপনা থাকে। কোনও এক বছরের তথ্যের ভিত্তিতে প্রকৃতির নিয়মে কোনও স্থায়ী বদলকে চিহ্নিত করা যায় না।’’
আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে এ বার তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ‘লালমাটির দেশ’ বাঁকুড়ায়, স্বাভাবিকের থেকে ৭৯ শতাংশ বেশি। পুরুলিয়া, ঝাড়়গ্রাম, বীরভূমেও স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে, উপকূলবর্তী জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে স্বাভাবিকের থেকে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির বড় ঘাটতি আছে নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদে। উত্তরবঙ্গে কোচবিহার এবং দুই দিনাজপুরে বৃষ্টির পরিমাণে বড় ঘাটতি আছে। ১ মার্চ থেকে ৫ মে-র মধ্যে রাজ্যে সব থেকে কম বৃষ্টি হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলায়। সেখানে ঘাটতির পরিমাণ ৭৩ শতাংশ। উত্তরবঙ্গে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে তরাইয়ের জেলা আলিপুরদুয়ারে।
এ বার পশ্চিম দিক থেকে শুকনো গরম হাওয়া ঢুকে তাপপ্রবাহের দাপট দেখাবে বলে মনে করছিল হাওয়া অফিস। তবে আবহবিদেরা বলছেন, এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয় পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে থিতু হওয়ায় জলীয় বাষ্পের জোগান যথাযথ ছিল। তার ফলে নিয়মিত ঝড়বৃষ্টি মিলেছে। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে নিয়মিত বৃষ্টি এবং কালবৈশাখী হয়েছে। তার ফলে একদিকে যেমন স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, তেমনই মাত্রাতিরিক্ত গরমের দাপট এখনও দেখা যায়নি। তুলনায় উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির দাপট এ বার কিছুটা কম ছিল বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানীর বক্তব্য, ‘‘গত বছর বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয় পশ্চিমবঙ্গ উপকূল থেকে দূরে ছিল বলেই শুষ্ক, গরম হাওয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছিল। এ বার সেই পরিস্থিতি হয়নি। তার ফলে এখনও গরমে তেমন নাকাল হতে হয়নি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)