Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Farmer

Arambag: গ্রামে স্কুল গড়তে চার কাঠা জমি দান চাষির

মঙ্গলবার দুপুরে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতরের ব্লক পরিদর্শক কৌশিক মালিকের হাতে স্ট্যাম্প পেপারে জমিদানের অঙ্গীকারপত্র তুলে দেন তিনি।

জমিদানের অঙ্গীকারপত্র।

জমিদানের অঙ্গীকারপত্র। নিজস্ব চিত্র।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২২ ০৬:২৯
Share: Save:

নিজে প্রান্তিক চাষি। বিঘা চার জমিতে তিন বার ফসল ফলিয়ে সংসার টানেন। আরামবাগের সালেপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রাধানাথ শাসমল নামে বছর একষট্টির সেই চাষি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের ৭ শতক (৪.২৫ কাঠা) জমি দান করলেন।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতরের ব্লক পরিদর্শক কৌশিক মালিকের হাতে স্ট্যাম্প পেপারে জমিদানের অঙ্গীকারপত্র তুলে দেন তিনি। বুধবার সেই অঙ্গীকারপত্র জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে জমা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে কৌশিকবাবু বলেন, “গ্রাম থেকে স্কুল গড়ার দাবিতে মাস পিটিশন ছিল। গ্রামবাসীকে জমির কথা বলা হয়েছিল। মাস খানেক আগে পরিদর্শনে মৌখিক সম্মতি মিলেছিল। এ দিন রাধানাথবাবু প্রাথমিক জমিদানের অঙ্গীকার পত্র দিলেন।”

দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধের ভিতরে প্রায় বিচ্ছিন্ন আরামবাগের সালেপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামটিতে কোনও স্কুল নেই। ছোটদের বেনা বন, জলাভূমি পার হয়ে প্রায় দু’কিলোমিটার উজিয়ে সালেপুরের প্রহ্লাদ স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয়। প্রায় দু’শো পরিবারের গ্রামটির ৯০ শতাংশ মানুষই কৃষিজীবী বা শ্রমজীবী। গত ৬০ বছর ধরে গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাবি জানাচ্ছিলেন বাসিন্দারা।

১৯৬৮ সাল নাগাদ গ্রামের কিছু মানুষ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। উদ্যোক্তাদের মধ্যে বছর আটাত্তরের জয়দেব সামন্ত বলেন, “গ্রামে স্কুল খুব দরকার। ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ছোটদের স্কুল যাওয়া-আসা নিয়ে পরিবারগুলো আতঙ্কে থাকে। সে সময় মহাদেব সামন্ত নামে এক প্রতিবেশীর সদর বাড়িতে স্কুল শুরু করে গ্রামে স্কুল গড়ার আন্দোলন শুরু করেছিলাম আমরা কয়েকজন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’’

সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন জমিদাতা রাধানাথবাবু। তিনি বলেন, “গ্রামের ছেলে মেয়েদের কষ্ট করে স্কুল যেতে হয়। বন্যার সময় তো বটেই সারা বর্ষায় স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়। নিজে খেটে পৈতৃক বিঘা তিনেক জমি বাদেও এক বিঘা জমি কিনেছি। স্কুল গড়তে নিজের কেনা থেকেই ৭ শতক স্কুলের জন্য দিচ্ছি। চাইছি দ্রুত স্কুলটা হোক।” তাঁর নিজের দুই মেয়ে বিবাহিত। একমাত্র ছেলে বিএ পাশ করা চন্দন মামার সঙ্গে কীটনাশকের দোকান চালান। চন্দন বলেন, “গ্রামে শিক্ষার প্রসারে বাবার এই সিদ্ধান্তে আমরা ভাই-বোনেরা গর্বিত”।

স্কুলের জন্য জমিদানের অঙ্গীকারপত্র গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দীপক মাজি। তিনি বলেন “গত ডিসেম্বর মাসের গোড়ায় শিক্ষা স্থায়ী সমিতিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, গ্রামের কেউ জমি দিলে শিক্ষা দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হবে। অবশেষে জমি পেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হল। দ্রুত স্কুলটি যাতে গড়া যায়, জেলা এবং রাজ্য স্তরে সেই তদবির করছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Arambag
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE