নিখোঁজ যুবক। —নিজস্ব চিত্র।
এক বছর আগে এক পরিচিতের হাত ধরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে বেঙ্গালুরু গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন বিদ্যুৎ বিশ্বাস নামে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের এক যুবক। তাঁর সন্ধানে হন্যে
পরিবার। কৃষ্ণনগর বা বেঙ্গালুরু পুলিশের সহযোগিতা মিলছে না বলে তাদের অভিযোগ। স্ত্রী-মেয়ের কষ্টে দিন কাটছে।
এই ঘটনায় ফের প্রশ্নে পরিযায়ী শ্রমিকের সুরক্ষা। বিদ্যুতের আত্মীয়েরা হুগলির চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইন সহায়তা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন। ওই সংগঠন নদিয়ার জেলাশাসক, কৃষ্ণনগরের এসপি, কল্যাণীর শ্রম দফতরে চিঠি দিয়েছে। সংগঠনের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি কতটা অবহেলিত, এই ঘটনায় ফের প্রমাণিত। প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে আদালতে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’’
কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, ‘‘বিস্তারিত খোঁজ না নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ কৃষ্ণগঞ্জ থানার বক্তব্য, আদালতের নির্দেশে মামলা রুজু করার পরে থানার এক আধিকারিক বেঙ্গালুরুতে তদন্তে গিয়েছিলেন। গিয়ে তিনি দেখেন, সেখানকার গোবিন্দপুরা থানায় ইতিমধ্যেই এফআইআর করা হয়েছে। সেখানকার পুলিশ তদন্তও করছে। কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’’ বিশ্বজিতের চিঠির প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে কী করণীয় তা রাজ্য শ্রম দফতরের কাছে জানতে চেয়েছে কল্যাণী শ্রম দফতর।
আত্মীয়েরা জানান, বিদ্যুৎ চাষবাস করতেন। পাশের টেংরা গ্রামের গোপাল প্রামাণিক ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে বেঙ্গালুরু নিয়ে যান। বিদ্যুতের ফোন ছিল না। গোপালের ফোনেই সপ্তাহে এক দিন বাড়িতে কথা বলতেন। স্ত্রী অণিমা জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্বামীর ফোন আসা বন্ধ হয়ে যায়। গোপালের বাড়িতে গেলে বলা হয়, বিদ্যুৎ নিখোঁজ। প্রশ্ন ওঠে, নিখোঁজ হলে, গোপাল কেন বিদ্যুতের বাড়িতে জানাননি?
বিদ্যুতের আত্মীয়দের দাবি, জুৎসই জবাব না-পেয়ে তাঁরা কৃষ্ণগঞ্জ থানায় গেলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। তখন তাঁরা কৃষ্ণনগর আদালতে যান। আদালতের নির্দেশে এপ্রিলে পুলিশ মামলা করে। ভাই উত্তমের দাবি, বিদ্যুৎকে খুঁজতে পুলিশ গোপালকে বেঙ্গালুরু যেতে বলেছিল। ট্রেনের টিকিটও কাটা হলেও গোপাল যাননি। বিষয়টি জেনে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। পরে বিদ্যুতের দুই আত্মীয় বেঙ্গালুরু গিয়ে সেখানকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু বেঙ্গালুরু পুলিশও গা-লাগায়নি বলে অভিযোগ।
অণিমা বলেন, ‘‘একটা বছর একসঙ্গে থাকার পরে স্বামী হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেল, অথচ গোপাল কিছুই জানেন না! উনি অসত্য বলছেন। পুলিশও ওঁর পক্ষে কথা বলছে। খুব দুরবস্থায় পড়েছি। মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। ওকে পড়াতে হবে। বাপের বাড়িও গরিব। কী যে করি! পুলিশ-প্রশাসন স্বামীকে খুঁজে দিক।’’ তাঁর অভিযোগ, বিদ্যুৎকে খুঁজে আনতে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন গোপাল।
অভিযোগ মানেননি গোপাল। তাঁর দাবি, জানুয়ারির শেষ রবিবার বিকেলে বিদ্যুৎ বাজারে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে আর ফেরেননি। রাতেই তিনি বিদ্যুতের বাড়িতে খবর দেন। বেঙ্গালুরুর স্থানীয় থানাতেও যান। তারা নানা নথিপত্র চাওয়ায় নিখোঁজ ডায়েরি করা যায়নি। গোপাল বলেন, ‘‘তিন দিন পরে আমার ফোন চুরি যাওয়ায় যোগাযোগ করতে পারিনি। কৃষ্ণগঞ্জ থানার ফোন পেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছি। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। দোষ করলে আসতাম? বিদ্যুতের বাড়ির লোকেরা আমাকে হুমকি দেন।’’ হুমকির অভিযোগ মানেনি বিদ্যুতের পরিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy