Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Damodar river Sold

‘বিক্রি’ দামোদরের চর, উঠছে পাঁচিল

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরটি দীর্ঘ দিন স্থানীয় মণ্ডল পরিবারের দখলে ছিল। ওই পরিবারের সদস্য, পেশায় শিক্ষক পরিমল মণ্ডলের বক্তব্য, পূর্বপুরুষেরা চর দখল করেছিলেন।

শ্যামপুরে দামোদরের চরে পাঁচিল দেওয়া হচ্ছে।

শ্যামপুরে দামোদরের চরে পাঁচিল দেওয়া হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত জানা
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৩
Share: Save:

পাঁচিল উঠছে দামোদরের চরে! শোনা যাচ্ছে, সেই চর বিক্রিবাট্টা হয়ে গিয়েছে। তাতে সরাসরি নাম জড়িয়েছে শাসকদলের নেতার।

দামোদর থেকে বেআইনি ভাবে বালি ও মাটি বিক্রির অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। এ বার কয়েক ধাপ এগিয়ে হাওড়ার শ্যামপুর-২ ব্লকের বাড়গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দামোদরের চর বিক্রির অভিযোগ উঠল। তাতেই জড়িয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ দীপক দাসের নাম। দীপক অভিযোগ মানেননি।

দামোদর নদ ও হুগলি নদীর সংযোগস্থলে গড়চুমুক পর্যটন কেন্দ্র। লাগোয়া শ্যামপুর-গড়চুমুক রাস্তায় দামোদারের উপরে সেতু রয়েছে। তার পাশেই ওই কাণ্ড নিয়ে এলাকায় শোরগোল চলছে। প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠছে। হইচই শুরু হতেই অবশ্য প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। এফআইআর করা হয়েছে।

বিএলএলআরও (শ্যামপুর ২) অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি যদিও সেচ দফতরের অধীনে, তবে খবর পেয়ে দফতরের কর্মীদের পরিদর্শনে পাঠিয়েছিলাম। যতটা জানা যাচ্ছে, ওটি দামোদরের চর। যিনি দখল করে পাঁচিল দিচ্ছেন, তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। পাঁচিল ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে। কথা না শুনলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ হাওড়া জেলা সেচ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে আসতেই পুলিশে এফআইআর করা হয়েছে। পাঁচিল ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনুসন্ধান চলছে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরটি দীর্ঘ দিন স্থানীয় মণ্ডল পরিবারের দখলে ছিল। ওই পরিবারের সদস্য, পেশায় শিক্ষক পরিমল মণ্ডলের বক্তব্য, পূর্বপুরুষেরা চর দখল করেছিলেন। বর্তমানে বেদখল হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দীপক দাসকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। দীপক কী করেছেন, তাঁদের জানা নেই।

ওই জমিতেই পাঁচিল গাঁথা হচ্ছে। সেই ছবি সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যিনি পাঁচিল দিচ্ছেন, সেই মুসিয়ার রহমান মোল্লা ওরফে সাহেব বলেন, ‘‘দীপক দাসের থেকে ওই জায়গা কিনেছি।’’ এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও ক্ষোভ কম নেই। এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘যে ভাবে দামোদরের চর দখল হয়ে যাচ্ছে, যেখান সেখান থেকে মাটি কাটা হচ্ছে, বালি তোলা হচ্ছে— আগামী দিনে পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। এই সব অনিয়ম-বেনিয়মে শাসকদলের নেতারা জড়িত থাকায় ভয়ে মুখ খুলতে পারি না।’’

শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, অনেকটা অংশে মাটি ফেলা হয়েছে। নদের দিকে লম্বা পাঁচিল উঠছে। পাশে ইট ফেলা রয়েছে। কয়েক দিন ধরে কাজ বন্ধ বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল।

পরিমল তাঁকে চরের জমি বিক্রি বা মুসিয়ার তাঁর থেকে সেই জমি কেনার কথা বললেও দীপক সে কথা মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘দামোদরের চর কেনাবেচার সঙ্গে আমি কোনও ভাবেই জড়িত নই। পরিমল মণ্ডল ও তাঁর ভাইয়েরা চর দীর্ঘ দিন দখল করেছিলেন। পরে তাঁরা চরটি মুসিয়ারকে বিক্রি করেন।’’ তাঁর সংযোজন, চরে অসামাজিক কাজ চলছিল। গাঁজার ঠেক বসত। পরিমলদের থেকে চর কিনেও মুসিয়ার দখল নিতে পারছিলেন না। তখন এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসাবে বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়। তিনি পুলিশকে বলে গাঁজার ঠেক তুলে দেন। দীপকের কথায়, ‘‘চর কেনাবেচা নিয়ে যা করেছেন, পরিমল ও মুসিয়ার রহমান মোল্লা।’’

চর কেনাবেচার বিষয়টি যে তিনি জানতেন, দীপকের কথাতেই স্পষ্ট। সে ক্ষেত্রে কোনও ব্যবস্থা নেননি কেন? প্রশাসনকেই বা জানাননি কেন? সদুত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shyampur Tmc Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE