বুধবার আমতা ২ ব্লকের খড়িয়পে জেলা কৃষি দফতরের উদ্যোগে চাষিদের নিয়ে কর্মশালা। —নিজস্ব চিত্র।
আর দিন দশ-পনেরো পর থেকেই শুরু হবে আমন ধান কাটা। কিন্তু ধান কাটার পরে জমিতে পড়ে থাকা গাছের অবশিষ্ট অংশ (নাড়া) যাতে না পোড়ানো হয়, সে জন্য প্রচার শুরু হয়েছে দুই জেলাতেই (হাওড়া ও হুগলি)।
চাষিদের অনেকেই যন্ত্রে (কম্বাইনড্ হার্ভেস্টার) ধান কাটার পরে ‘নাড়া’ পুড়িয়ে দেন। রাতে বা ভোরে শিশির ভেজা সেই খড় পোড়া ধোঁয়া দূষণ ছড়ায়। পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা আরমবাগের একটি সংগঠনের সম্পাদক মঙ্গল সাউয়ের মতে, ‘‘কৃষি দফতরের তরফে প্রচার করা হলেও দোষী চাষিদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ না করাতেই নাড়া পোড়ানোয় লাগাম পরানো যাচ্ছে না।’’ প্রসঙ্গত নাড়া পোড়ানোয় আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
নাড়া পোড়ানোর কথা স্বীকার করে হুগলির অনেক চাষির যুক্তি, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি, খুব বেশি হলে শেষ সপ্তাহ আলু লাগানোর উপযুক্ত সময়। তাই ধান তুলেই তড়িঘড়ি জমি পরিষ্কার করতে নাড়া পুড়িয়ে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। এ বারেও তা হতে পারে বলে তাঁদের কথায় জানা যাচ্ছে। তাঁরা বলছেন, এ বার দুর্যোগের কারণে ধান কাটার সময় অনেকটাই পিছিয়েছে। ধান পাওয়ার আশাও কম। এই পরিস্থিতিতে আলুর ভাল ফলন পেতে গেলে দ্রুত নাড়া পুড়িয়ে জমি সাফাই করে অন্তত নভেম্বর মাসের শেষেই আলু লাগানোর চেষ্টা করবেন চাষিরা। চাষে দেরি হলে নাবিধসা রোগে আলু নষ্ট হবে।
হুগলি জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নাড়া পোড়ানো বন্ধে বছরভর প্রচার চলে। চলতি মাসে টানা প্রচার চলবে। সর্বত্র মিটিং হচ্ছে, লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। জমিতে না পুড়িয়ে নাড়া জড়ো করে জমির এক কোণে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নাড়া পোড়ানো নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’’ তাঁর দাবি, আগের থেকে চাষিরা অনেক সচেতনও হয়েছেন। নাড়া পোড়ালে পরিবেশ বা জমির কী ক্ষতি হয়, তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় মানুষ এবং পঞ্চায়েতগুলির সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছে।
হাওড়ার বহু চাষি আমন ধান কাটার পরে সেই জমিতে বোরো চাষ করেন। এখানেও নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা রয়ে গিয়েছে। বুধবার ছিল 'ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো প্রতিরোধী দিবস’। এই দিনটিকেই জেলা কৃষি দফতর বেছে নেয় চাষিদের সচেতন করার জন্য। প্রায় প্রতি ব্লকেই চাষিদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। নাড়া না পুড়িয়ে কী ভাবে ফসলের অবশিষ্টাংশ ফের চাষের কাজেই ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়। জেলা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, চাষিদের বলা হয়েছে, নাড়া না পুড়িয়ে সেগুলি তুলে জমির ধারে গর্ত করে ফেলে রাখতে। ইউরিয়া এবং গোবর মিশিয়ে তা দিয়ে জৈব সার তৈরি করলে তা বোরো চাষে কাজে লাগবে।
জেলায় সম্প্রতি প্লাবিত হয়েছিল উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লক। এ দিন এই দুই ব্লকেও সচেতনতা শিবির হয়। যদিও এই দুই ব্লকের অনেক চাষিই জানিয়েছেন, এ বছর তাঁদের আর নাড়া পোড়ানোর দরকার হবে না। কারণ, বন্যায় আমন ধানের গাছ এবং গোড়া পচে মাটিতে মিশে গিয়েছে। সেই জমিতেই তাঁরা বোরো ধান চাষ করবেন।
নাড়া পোড়ার ক্ষতি
নাড়া পোড়ানো হলে জমিতে এক ইঞ্চি গভীরতা পর্যন্ত মাটিতে থাকা কেঁচো ও উপকারী জীবাণু ধ্বংস হয়।
মাটি শক্ত হয়ে পরবর্তী চাষে ফসল কম পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ধোঁয়া, ছাই-কণার সঙ্গে কার্বন-ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার-ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি নানা ক্ষতিকারক গ্যাস উৎপন্ন হয়। পরিবেশের পক্ষে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ওই সব গ্যাস মানুষের শরীরে ঢুকে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে।
(সূত্র: কৃষি দফতর)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy