Advertisement
E-Paper

BJP: স্কুলে পরীক্ষা, উল্টো দিকেই মাইক বাজিয়ে সভা বিজেপির

ছাত্রী বা অভিভাবকরা সমস্যার কথা বললেও স্কুল-কর্তৃপক্ষ মাইক বাজানো নিয়ে থানায় কোনও অভিযোগ করেননি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সুশান্ত সরকার ও প্রকাশ পালজিরাট

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২২ ০৮:০৫
স্কুলের সামনের মাঠে বিজেপির সভামঞ্চ। স্কুলের সামনেও টাঙানো হয়েছে মাইক (ডান দিকে)।

স্কুলের সামনের মাঠে বিজেপির সভামঞ্চ। স্কুলের সামনেও টাঙানো হয়েছে মাইক (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

ছোট ছোট ছাত্রীরা তখনও জানত না, স্কুলে পরীক্ষা দিতে এসে কী ‘অত্যাচার’ সহ্য করতে হবে!

বুধবার সকাল ১১টা। জিরাটের আশুতোষ স্মৃতিমন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হল। বেলা ৩টে ৩৫ মিনিট পর্যন্ত কয়েক দফায় বিভিন্ন ক্লাসের পরীক্ষা চলল।সকাল থেকে স্কুলের উল্টো দিকে সমানে বাজল মাইক। সৌজন্যে— বিজেপি। মঞ্চ বেঁধে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন পালনকরছিল তারা। পুলিশের অনুরোধ কার্যত কানে তোলেননি উদ্যোক্তারা। স্কুলের জানলা বন্ধ করেও রেহাই পায়নি পরীক্ষার্থীরা।

সভার উদ্যোক্তাদের চৈতন্যোদয় যখন হল, পরীক্ষা শেষ হতে তখন আধ ঘণ্টা বাকি। সভামঞ্চে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আসার পরে মাইক বন্ধ হয়। মঞ্চে সুকান্ত বলেন, ‘‘স্কুলে পরীক্ষা চলাকালীন আমরা মাইক বন্ধ রাখি, এটাই আমাদের সংস্কৃতি।’’ শুনে আশপাশের বাসিন্দারা বিস্মিত হয়েছেন। পদ্ম-শিবিরের এই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’র সমালোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে।

দশম শ্রেণির এক পরীক্ষার্থী বলে, ‘‘স্কুলে জোরে মাইকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। পরীক্ষায় অসুবিধা হচ্ছিল।’’ অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘আড়াইটে থেকে তিনটে পর্যন্ত বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়েছি মাইকের আওয়াজের মধ্যেই। ৩টে ৫ মিনিট থেকে ৩টে ৩৫ মিনিট পর্যন্তসংস্কৃত পরীক্ষা ছিল। তখন মাইকের আওয়াজ পাইনি।’’

অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক মুকুল পলতা বলেন, ‘‘মাইক বন্ধ রাখলে ভাল হত। এতে মেয়েদের পরীক্ষা খারাপ হবে। স্কুল-কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।’’ একই বক্তব্য অন্য অনেক অভিভাবকেরও।

স্কুল এবং সভামঞ্চের মধ্যে ব্যবধান ছিল একফালি একটি রাস্তার। রাস্তাজুড়ে লাগানো মাইক বাজছিল সকাল থেকেই। বেলা ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাইকে শ্যামাপ্রসাদের জীবন নিয়ে বলছেন স্থানীয় বিজেপি নেতারা। স্কুলের জানলা বন্ধ। মোটরবাইক-মিছিল করে বেলা ৩টে নাগাদ সুকান্ত, স্থানীয় সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, দলের হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তুষার মজুমদাররা আসেন।সুকান্ত আসার পরে মাইক বন্ধ হয়। সুকান্ত-লকেটরা খালি গলায় বক্তব্য পেশ করেন।

তুষারের দাবি, পরীক্ষার কথা জেনেই তিনি মাইক বন্ধের নির্দেশ দেন। তবে, বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হওয়ায় বিরোধীদের দুষে দলের জিরাট মণ্ডল সভাপতি বেচু নায়েকের বক্তব্য, ‘‘সুকান্তবাবু আসার আগে পর্যন্ত মাইক বেজেছে, এটা ঠিক। তবে, তাতে পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা হয়নি। বিরোধীরা মিথ্যা রটাচ্ছে।’’

বিদ্যালয় সূত্রের খবর, মাইকের আওয়াজ স্কুলের ভিতরেও জোরে শোনা যাচ্ছিল। ছাত্রীদের মনোসংযোগে ব্যাঘাত যাতে না ঘটে, সে জন্য ক্লাসঘরের জানলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেও একই কথা বলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি, যা তিনি মঞ্চে বলেছিলেন।

তৃণমূল শিক্ষা সেলের বলাগড় ব্লক সভাপতি তপন দাসের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির সংস্কৃতি কেমন, জিরাটবাসী দেখলেন। স্কুল-কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সরকারি দফতরে অভিযোগ করা।’’ জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ গোপাল রায় বলেন, ‘‘বিজেপির কাছে এটাই প্রত্যাশিত। ছাত্রীদের পরীক্ষার ক্ষতি করেশেষে সুকান্ত মজুমদারের মতো একজন অধ্যাপককে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হল।’’

ছাত্রী বা অভিভাবকরা সমস্যার কথা বললেও স্কুল-কর্তৃপক্ষ মাইক বাজানো নিয়ে থানায় কোনও অভিযোগ করেননি বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রধান শিক্ষিকা শিবানী বারিক পাল বলেন, ‘‘এ নিয়ে মন্তব্য করব না। তবে, পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হয়েছে।’’ হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরীক্ষা চলায় পুলিশের তরফে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের মাইক বন্ধের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। শেষ দিকে মাইক বন্ধ হয়।’’

BJP Jirat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy