Advertisement
E-Paper

Serampore: মাধ্যমিকে ছেলের সাফল্যে লড়াই জিতলেন মা’ও

ছেলের স্বপ্ন সফল করতে চেষ্টার কসুর করেন না পূর্ণিমা। তিনি ভাল গান করেন। নাচও জানেন। ছেলে যখন ছোট, রোজগারের জন্য নানা জায়গায় গান গেয়েছেন।

মায়ের সঙ্গে সৌম্যজিৎ।

মায়ের সঙ্গে সৌম্যজিৎ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২২ ০৬:১০
Share
Save

ছেলের মার্কশিট বলছে, প্রায় ৯০ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে সে। তবে, ছেলের সঙ্গেই সকলের অলক্ষ্যে যেন লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করে গিয়েছেন মা’ও!

ছেলে সৌম্যজিৎকে নিয়ে হুগলির রিষড়ার পঞ্চাননতলায় ভাড়া থাকেন পূর্ণিমা ভট্টাচার্য। শ্রীরামপুরের মাহেশ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক দিয়ে সৌম্যজিৎ পেয়েছে ৬১৩। স্কুলের সর্বাধিক নম্বর তারই ঝুলিতে। অথচ দু’বছরের করোনা পর্বে অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব হয়নি তার। স্মার্টফোনই যে ছিল না! বিজ্ঞান এবং অঙ্কের এক জন গৃহশিক্ষক ছিলেন। তিনি অল্প বেতনে পড়িয়েছেন। বাকি বিষয় নিজেকেই পড়তে হয়েছে। তবে, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সহায় হয়েছেন।

সৌম্যজিতের কথায়, ‘‘ওঁরা অত্যন্ত ভাল ভাবে পড়া বুঝিয়েছেন। সেই জন্য অসুবিধা হয়নি। না হলে এত ভাল নম্বর হয় না।’’ সৌম্যজিতের সর্বাধিক নম্বর ভুগোলে— ৯৫। জীবন বিজ্ঞানে ৯৪, অঙ্ক এবং ভৌতবিজ্ঞানে ৯০। মাহেশ উচ্চ বিদ্যালয়েই বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়েছে সে। সৌম্যজিৎ চায়, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবে। সম্প্রতি এক জন স্মার্টফোন দিয়েছেন তাকে।

ছেলের স্বপ্ন সফল করতে চেষ্টার কসুর করেন না পূর্ণিমা। তিনি ভাল গান করেন। নাচও জানেন। ছেলে যখন ছোট, রোজগারের জন্য নানা জায়গায় গান গেয়েছেন। তবে, সংসার সুখের হয়নি। বছর কয়েক আগে ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়ে আসেন। পেট চালাতে নাচ-গান শিখিয়েছেন। এ সবের মধ্যেই লকডাউনের সময় তাঁর পা ভাঙে। স্নায়ুর সমস্যা হয়। পুরো লকডাউন কার্যত বিছানায় শুয়ে কাটাতে হয়। সংসার চালাতে ঘরের জিনিস বেচতে হয়েছে। তবে, হাল ছাড়েননি। একটু ভাল হয়ে চায়ের দোকান দিয়েছেন। সঙ্গে রুটি-তরকারি, মাংস, ডিমসেদ্ধ, অমলেট প্রভৃতি বেচেন। এই ভাবে যখন একটু একটু করে গুছিয়ে উঠছেন, কয়েক মাস আগে তাঁর পক্স, বাঁ চোখে স্ট্রোক হয়। এখন রোদে তাকাতে কষ্ট হয়। চিকিৎসক সকালে বেরোতে বারণ করেছেন। তাই, বিকেলে একবেলা দোকান খোলেন।

পূর্ণিমার কথায়, ‘‘ঘরভাড়া আর ছেলের টিউশনের খরচ জোগাড়ের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব। জানি খুব কঠিন, তবে, হাল ছাড়ব না। সেই দিনের দিকে তাকিয়ে আছি, যে দিন ছেলে একটা চাকরি পাবে।’’ স্কুলের টিচার ইন-চার্জ পরিমল কোলের কথায়, ‘‘সৌম্যজিৎ মেধাবী তো বটেই, অত্যন্ত বাধ্য ছেলে। ওকে যথাসম্ভব সাহায্য আমরা করব।’’ প্রতিকূলতার বেড়া ডিঙিয়ে সফল হওয়া ছেলের পড়াশোনায় যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে স্কুলের প্রাক্তনী সংসদও।

স্কুলের শতবর্ষ চলছে। অনেকেই বলছেন, গোড়া থেকেই সমস্যার আঁধার পেরিয়ে এই স্কুলের বহুপড়ুয়া প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতাই বহন করছেকৃতী সৌম্যজিৎ।

Madhyamik 2022 Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy