গত কয়েক বছর ধরেই ধুঁকছে ‘পশ্চিমের শেফিল্ড’ বলে পরিচিত হাওড়ার শিল্প কারখানাগুলি। ফলে, বিশ্বকর্মা পুজোয় সেই জৌলুস বা আড়ম্বর, কোনওটাই আর নেই। তবে, তা সত্ত্বেও এই পুজো উপলক্ষে শহরে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসাহ কমেনি। অভিযোগ, এই সুযোগেই বাঁকড়া এলাকায় এক দল ব্যবসায়ী অবাধে বিক্রি করছেন নিষিদ্ধ চিনা মাঞ্জা। যে মাঞ্জায় গলা কেটে বুধবারই রহড়ায় মৃত্যু হয়েছে এক প্রাক্তন সেনাকর্মীর। এ ছাড়া, বিভিন্ন সময়ে কলকাতা ও হাওড়া মিলিয়ে অন্তত ২০-২৫ জন গুরুতর জখম হয়েছেন। একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগে চিনা মাঞ্জা নিষিদ্ধ করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তার পরেও বাঁকড়ায় দেখা গেল, হাওড়া-আমতা রোডের দু’ধারে ঘুড়ির দোকানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ওই মাঞ্জা। পুলিশের অবশ্য দাবি, তাদের কাছে এমন অভিযোগ আসেনি।
বিভিন্ন সময়ে মা উড়ালপুলে চিনা মাঞ্জায় আহত হয়েছেন একাধিক মোটরবাইক আরোহী। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। প্রথমে কলকাতা পুলিশ বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু চিনা মাঞ্জায় অঘটনের সংখ্যা বাড়তে থাকায় শেষে পুলিশ ও প্রশাসন নড়ে বসে। মা উড়ালপুলের যে অংশে এমন ঘটনা ঘটছিল, সেখানে বাতিস্তম্ভের সঙ্গে স্টিলের তার দিয়ে নেট তৈরি করা হয়। পাশাপাশি, চিনা মাঞ্জা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ পদক্ষেপ করা হয়।
কিন্তু জেলাগুলিতে চিনা মাঞ্জা নিয়ে পুলিশি কড়াকড়ি তেমন না থাকায় তা বিক্রিতে রাশ টানা যায়নি বলে অভিযোগ। গত কয়েক বছরে হাওড়ায় এই নিষিদ্ধ মাঞ্জার কারণে জখম হয়েছেন একাধিক বাইক আরোহী। সপ্তাহ দুয়েক আগে বাঁকড়াতেই চিনা মাঞ্জায় মারাত্মক ভাবে গলা কেটে গিয়েছিল এক যুবকের। অভিযোগ, তার পরেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার তৎপরতা চোখে পড়েনি পুলিশের তরফে।
ওই এলাকার এক দোকানদার বলেন, ‘‘ক্রেতারা চিনা মাঞ্জা চান বলে রাখতে হয়। না হলে আমরা সুতোর মাঞ্জাই বেশি বিক্রি করি।’’
কিন্তু এত কড়াকড়ির পরেও এই মাঞ্জা দোকানে আসছে কী ভাবে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, ‘‘এই মাঞ্জা আসে কলকাতার মেটিয়াবুরুজ, খিদিরপুর থেকে। জলপথে নাজিরগঞ্জে এসে সেখান থেকে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। মেটিয়াবুরুজে এক হাজার ফুট মাঞ্জার দাম নেয় দেড় হাজার টাকা। আমরা সেটাই আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করি।’’
তা হলে কি পুলিশি নজরদারি কিছুই নেই? হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বাঁকড়ায় তল্লাশি চালিয়ে চিনা মাঞ্জা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই এই মাঞ্জা বিক্রি হচ্ছে, এমন অভিযোগ কেউ করেননি। তা-ও আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)