E-Paper

বহু কোটির বাস টার্মিনাস রাত নামলেই দুষ্কৃতীদের ‘মুক্তাঞ্চল’

স্থানীয়দের অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূলের একাংশের মদতে বাস, ট্রাক, লরি চালকদের কাছ থেকে পার্কিং ফি আদায়ের নামে চলে অবাধ তোলাবাজি ও ছিনতাই। অন্ধকার হলে টার্মিনাসে বসে মদের আসর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৯
An image of Bus Terminus

ভগ্নদশা: সাঁতরাগাছি বাস টার্মিনাসে ভেঙে ফেলা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। —নিজস্ব চিত্র।

কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছিল দূরপাল্লার বাস টার্মিনাস। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে সেটি তৈরি করা, তা পূরণ হয়নি গত এক দশকেও। উল্টে অভিযোগ, গোটা বাস টার্মিনাস এখন হয়ে উঠেছে দুষ্কৃতীদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। বাস ও ট্রাকচালকদের অভিযোগ, রাত নামলেই তোলাবাজদের দাপটে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হয় তাঁদের। একই অভিযোগ তুলছেন এলাকার বাসিন্দারাও। তাঁদের বক্তব্য, স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার মদতে দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মঙ্গলবারই ওই বাস টার্মিনাসে ভেহিক্‌ল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস (ভিএলটিডি) বসানো ঘিরে শাসকদলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমালে এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। যা এই অভিযোগকেই কার্যত মান্যতা দিয়েছে।

১০ বছর আগে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সাঁতরাগাছি স্টেশনের পাশে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের জমিতে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছিল সাঁতরাগাছি বাস টার্মিনাস। ঠিক ছিল, কলকাতার বাবুঘাট থেকে ছাড়া সমস্ত দূরপাল্লার বাস এখানে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে ওই টার্মিনাসে হাওড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের অস্থায়ী শাখা অফিস রয়েছে। সেখান থেকে চালকদের লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষা-সহ গাড়ি পরীক্ষা করে তার শংসাপত্র দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বর্তমানে ফাঁকা টার্মিনাসটি হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রাক, বাস, লরির বেআইনি পার্কিংস্থল। এই টার্মিনাসের এক দিকে রয়েছে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, পাশাপাশি আছে হাওড়া সিটি পুলিশের উপ-নগরপাল (দক্ষিণ)-এর অফিস এবং কোনা ট্র্যাফিক গার্ডের কার্যালয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূলের একাংশের মদতে বাস, ট্রাক, লরি চালকদের কাছ থেকে পার্কিং ফি আদায়ের নামে চলে অবাধ তোলাবাজি ও ছিনতাই। অন্ধকার হলে টার্মিনাসে বসে মদের আসর। ওই দুষ্কৃতীদের দখলে চলে গিয়েছে সরকারি শৌচাগারও। আরও অভিযোগ, টার্মিনাসের দক্ষিণ দিকের চানখান পাড়া থেকে আসা দুষ্কৃতীরাই গোটা ঘটনায় জড়িত।

চানখান পাড়ার এক বাসিন্দা মহম্মদ রিয়াজ় বলেন, ‘‘তৃণমূলের স্থানীয় ওয়ার্ড সভাপতি শেখ হাবিবের মদতে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা বাস টার্মিনাসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তোলাবাজি চালাচ্ছে।’’ টার্মিনাসের এক চা বিক্রেতার কথায়, ‘‘ওই পাড়ার ছেলেদের ভয়ে সন্ধ্যার আগেই দোকান বন্ধ করে দিই। যাতে এই দৌরাত্ম্যের প্রমাণ না থাকে তাই টার্মিনাসের সব সিসি ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছে ওরা।’’

যদিও দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন শেখ হাবিব। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত মিথ্যা রটনা। আমি এ সবের কিছুই জানি না। আমাদের দলের কোনও ছেলে এই ধরনের ঘটনায় জড়িত নয়।’’

মঙ্গলবার সাঁতরাগাছি বাস টার্মিনাসে তৃণমূলের দু’দলের গোলমাল চলাকালীন টিপু সুলতান নামে এক যুবকের পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। সেই ঘটনায় খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে পুলিশ শেখ কালাম ওরফে বুধুয়া নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। সে ওয়ার্ড সভাপতির ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, টার্মিনাসের গা-ঘেঁষে হাওড়া সিটি পুলিশের উপ-নগরপাল (দক্ষিণ)-এর অফিস এবং কোনা ট্র্যাফিক গার্ডের কার্যালয় থাকা সত্ত্বেও সেখানে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য এই মাত্রায় পৌঁছয় কী ভাবে?

এ বিষয়ে উপ-নগরপাল (দক্ষিণ) প্রতীক্ষা ঝারখারিয়ার সঙ্গে তাঁর অফিসে দেখা করতে গেলে তিনি দেখা করেননি। পরে মেসেজের উত্তরে উপ-নগরপাল জানান, মঙ্গলবারের ঘটনায় দু’টি মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তাঁর অফিস লাগোয়া বাস টার্মিনাসে দুষ্কৃতী-রাজ নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Miscreants Bus Terminus Santragachi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy