E-Paper

‘সংখ্যালঘুদের বাড়িভাড়া নয়’, বিতর্ক লিফলেটে

হুগলির ব্যান্ডেলের কেওটায় দু’নম্বর নেতাজি পার্ক এলাকায় শনিবার একাধিক বিদ্যুতের খুঁটিতে ওই লিফলেট দেখা যায়। তাতে লেখা, ‘পাড়ায় কোনও মুসলিম পরিবার অথবা বার ডান্সারকে (পানশালার নতর্কী) বাড়ি ভাড়া এবং জমি বিক্রি করা যাবে না।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৪০
সংখ্যালঘু পরিবারকে ঘরভাড়া না দেওয়ার পোস্টার পড়েছে ব্যান্ডেলে।

সংখ্যালঘু পরিবারকে ঘরভাড়া না দেওয়ার পোস্টার পড়েছে ব্যান্ডেলে। —নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি-শাসিত রাজ্যে নয়, এ রাজ্যেরই এক পাড়ায় লিফলেটে জারি হয়েছে ‘আদেশ’— সেখানে ঘর ভাড়া নিতে পারবে না কোনও সংখ্যালঘু পরিবার! ভাড়া নিতে পারবেন না পানশালার নর্তকীও। লিফলেট রয়েছে স্থানীয় ক্লাবের নামে। ওই ক্লাব কর্তৃপক্ষ পোস্টার সাঁটার দায় নিতে চাননি। চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। ক্লাবকে লিফলেট খুলতে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

হুগলির ব্যান্ডেলের কেওটায় দু’নম্বর নেতাজি পার্ক এলাকায় শনিবার একাধিক বিদ্যুতের খুঁটিতে ওই লিফলেট দেখা যায়। তাতে লেখা, ‘পাড়ায় কোনও মুসলিম পরিবার অথবা বার ডান্সারকে (পানশালার নতর্কী) বাড়ি ভাড়া এবং জমি বিক্রি করা যাবে না। যদি ভাড়া থাকে, তবে এক মাসের মধ্যে উঠে যেতে হবে’। নীচে লেখা— ‘আদেশানুসারে বিদ্যাসাগর ক্লাব’।

ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্থানীয় সংখ্যালঘুরা। এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘তিন দশক আগে এখানে বাড়ি করেছি। আশপাশে হিন্দুদের পাশাপাশি কিছু খ্রিস্টান পরিবারও রয়েছে। সমস্যা হয়নি। কিন্তু এমন পোস্টারে ভয় তো হবেই!’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, রাতের অন্ধকারে ওই লিফলেট সাঁটা হয়। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাধব দাসের দাবি, ‘‘এখানে হিন্দু-মুসলিম এক সঙ্গে বসবাস করেন। কাউকে নিয়ে কারও কোনও সমস্যা নেই। ক্লাবকে বদনাম করতে কেউ এমন করেছে। আমরা পুলিশের কাছে তদন্তের দাবি জানাব।’’

ঘটনা জেনেই ব্যান্ডেল পঞ্চায়েতকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন মহকুমাশাসক (সদর) স্মিতা সান্যাল শুক্ল। পঞ্চায়েত প্রধান ইন্দু পাসোয়ান বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট ক্লাবকে চিঠি দিয়ে দ্রুত লিফলেট খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগে লিফলেট খুলুক, তার পরে পদক্ষেপ করা হবে।’’

এলাকাটিতে বিজেপির কিছুুটা প্রভাব হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট ৭৯ নম্বর বুথে বিজেপিই এগিয়ে ছিল। তার আগে, বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির চেয়ে তৃণমূল সামান্য ভোটের ব্যবধানে জেতে। চুঁচুড়া-মগরা ব্লক তৃণমূল সভাপতি তাপস চক্রবর্তী ওই লিফলেট দেওয়ার পিছনে বিজেপির হাত দেখছেন। তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এলাকায় থাকতে গেলে, আইন-কানুন মেনে চলতে হবে। এ ভাবে ফতোয়া জারি করলে, সকলকে এগিয়ে এসে দোষীদের খুঁজে বের করতে হবে।’’ ওই লিফলেট সাঁটার পিছনে দলের কারও জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘এমনটা হওয়া উচিত নয়। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’’ চুঁচুড়ার প্রবীণ সিপিএম নেতা সমীর মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল যে ভাবে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে, এটা তার ফল।’’

এলাকার এক সংখ্যালঘু মহিলা বলেন, ‘‘চারদিকে যা চলছে! সবাইকে বলতাম, এখানে সে সব নেই। এখন আর বলতে পারব?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

leaflet Controversy Bandel

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy