E-Paper

জমা জলে বন্দি হাওড়া শহর, চিন্তায় পুরসভা

কোথাও জল জমে রয়েছে এক সপ্তাহ, কোথাও এক মাস ধরে। বৃষ্টির জল আর নর্দমার কালো পাঁক-জল মিশে এক অবর্ণনীয় দুর্দশার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে কম করে ২৫টি ওয়ার্ডে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫ ০৬:০৬
জমা জলে দাঁড়িয়েই চলছে রান্না। মঙ্গলবার, হাওড়ার সালকিয়ার ঘোষপাড়ায়।

জমা জলে দাঁড়িয়েই চলছে রান্না। মঙ্গলবার, হাওড়ার সালকিয়ার ঘোষপাড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

হাওড়ার বেলগাছিয়া সেতুর কাছে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ঘোষপাড়ার বাসিন্দা, ৭০ বছরের অমিয় দে। বৃষ্টির পরে গোটা এলাকা তখন প্রায় দু’ফুট জলের নীচে। গলির ভিতরে ঢুকতে রাজি নয় অ্যাম্বুল্যান্স, টোটোও। শেষে অ্যাম্বুল্যান্সের স্ট্রেচারে চাপিয়ে, জল ঠেলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন পরিবারের লোকজন।

এই চিত্র শুধু উত্তর হাওড়ার ঘোষপাড়ার নয়। গত কয়েক সপ্তাহের দফায় দফায় বৃষ্টিতে এমনই হাল হয়েছে হাওড়া পুর এলাকার উত্তর থেকে দক্ষিণের। কোথাও জল জমে রয়েছে এক সপ্তাহ, কোথাও এক মাস ধরে। বৃষ্টির জল আর নর্দমার কালো পাঁক-জল মিশে এক অবর্ণনীয় দুর্দশার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে কম করে ২৫টি ওয়ার্ডে।

তাই আবহাওয়া দফতরের খবর অনুযায়ী, ফের অতি বৃষ্টির ভ্রুকুটিতে আতঙ্কে খোদ পুরসভা। কারণ, পুরকর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, সমস্ত নিকাশি পাইপলাইন, নর্দমা, খাল-বিল, পুকুর জমা জলে অবরুদ্ধ। পাম্প করে জল ফেলার জায়গাও কার্যত আর অবশিষ্ট নেই। কারণ, পাম্প করে অন্যত্র জল ফেললে দেখা যাচ্ছে, তা ‘ব্যাক ফ্লো’ করে ফিরে আসছে একই জায়গায়। জমা জলের দোসর ভাঙাচোরা, গর্তে ভরা ভয়াবহ রাস্তা। উত্তর হাওড়ার সালকিয়া, জে এন মুখার্জি রোড, নস্করপাড়া, মহীনাথ পোড়েল লেন-সহ একাধিক রাস্তার এমন হাল হয়েছে যে, নিত্য দিন মোটরবাইক, টোটো, সাইকেল উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। বর্ষার বিদায় নিতে এখনও ঢের দেরি। তারই মধ্যে ভাঙা রাস্তা, জমা জলে হাওড়া শহর যেন হয়ে উঠেছে আস্ত একটা খণ্ডহর।

ছ’নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়ায় দীর্ঘ কয়েক দশকের বাসিন্দা সুবীর বাগ এক হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘গত ৩০ বছর ধরে বর্ষার সময়ে এই জমা জলের যন্ত্রণায় ভুগছি। কিন্তু কোনও পুর বোর্ডই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। আমার মনে হয়, হাওড়ার এই নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করতে গেলে রাজ্য সরকারের উচিত, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের মতো একটি নিজস্ব পরিকল্পনা তৈরি করা।’’ সুবীর জানান, জমা জলের জন্য এলাকার বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ কারখানা বিক্রি করে চলেও গিয়েছেন।

গত ৪৮ ঘণ্টায় তেমন ভাবে মুষলধারে বৃষ্টি না হলেও মঙ্গলবারও জলে ভাসছে উত্তর হাওড়ার কামিনী স্কুল লেন, হনুমান কুলি লাইন, মহীনাথ পোড়েল লেন, নবীন ঘোষ লেন। জল জমেছে মধ্য হাওড়ার ডুমুরজলার আশপাশের এলাকাতেও। এই এলাকার শৈলেন মান্না সরণি, এইচআইটি কোয়ার্টার্সের ভিতরের রাস্তাও চলে গিয়েছে জলের তলায়। মধ্য হাওড়ার শিবপুরে নবান্নের কাছে ছোট ভট্টাচার্য পাড়াতেও জল জমে রয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। একই অবস্থা কদমতলা পাওয়ার হাউস এলাকারও। এ দিকে, দক্ষিণ হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকাও জলমগ্ন। জলে ডুবে রয়েছে ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর-সহ দক্ষিণ হাওড়ার বেশ কিছু এলাকা। অন্য দিকে, জমা জল এক সপ্তাহ পরেও নামেনি বেলগাছিয়া, টিকিয়াপাড়া এলাকায়।

জল বার করা যাচ্ছে না কেন? হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘‘সব জায়গা থেকেই জমা জল পাম্প করে বার করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু গঙ্গার জলস্তর সব সময়ে উঁচুতে থাকায় এবং কিছু নিকাশি নালার সংস্কার নাহওয়ায় ক্রমাগত ভারী বৃষ্টিতে জমা জল পাম্প করে বার করলেও তা ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। পাম্প করা জল ফের ব্যাক ফ্লো করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে যাচ্ছে। তাই জমা জল বেরোতে অনেকটা সময় লাগছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Heavy Rain Howrah Municipal Corporation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy