E-Paper

ধরপাকড়ে জোর, তবু টোটোর দাপট অব্যাহত

উত্তরপাড়ার এক টোটোচালক বলেন, ‘‘রুটি-রুজির টানে অনেকেই টোটো চালাচ্ছেন। বহু চালক আছেন, যাঁদের গাড়ি কেনার ক্ষমতা নেই। এক শ্রেণির টোটোমালিক তাঁদের হাতে নিজের টোটো তুলে দিচ্ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২৩
-

আধিপত্য: ১) টোটোর দাপটে জেরবার উলুবেড়িয়া শহর। ছবি: সুব্রত জানা

টোটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে সব জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। এর পরেই টোটো ছাড়াও বেআইনি অটো এবং-মোটরভ্যানের বিরুদ্ধেও হুগলিতে অভিযান শুরু করেছে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। চলছে ধরপাকড়। তবে, হুগলি, হাওড়া— দুই জেলাতেই টোটো-সমস্যার সার্বিক যন্ত্রণার উপশম হয়নি। ব্যতিক্রম আরামবাগ। ওই নির্দেশিকার আগেই হুগলির ওই শহরে টোটোর দৌরাত্ম্য রুখতে ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। সুফলও মিলছে।

হুগলি জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘অতিমারির পরে বেআইনি যানের সংখ্যা বেড়েছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট একটা কারণ। তবে, অনেকেই আছেন, যাঁরা বেশি সংখ্যক টোটো কিনে ভাড়া খাটাচ্ছেন। সেই সব টোটো চিহ্নিত করা হচ্ছে।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা জানান, নির্দেশিকা অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।

হুগলি শিল্পাঞ্চলের অলিগলি থেকে রাজ্য সড়কে টোটোর অবাধ বিচরণ অব্যাহত। উত্তরপাড়া থেকে চুঁচুড়ায় টোটোর চাপে জিটি রোডের নাভিশ্বাস উঠছে! কোথাও টোটো উঠে পড়ে জাতীয় সড়কেও। চুঁচুড়ায় ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের কাজের জন্য রাস্তা বেহাল। তার উপর শয়ে-শয়ে টোটোর নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরায় দুর্ঘটনা লেগেই আছে। স্কুল যাওয়ার পথে নাকাল হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। ব্যাটারি বাঁচাতে বহু টোটো আলো জ্বালায় না। ফলে, সন্ধের পরে কার্যত ভ্যাবাচ্যাকা খেতে হয় পথচারী বা অন্য গাড়িচালককে। চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর, চাঁপদানি, শ্রীরামপুরও টোটোর চাপে অতিষ্ঠ। শ্রীরামপুর স্টেশন সংলগ্ন মার্কেটে পুজোর কেনাকাটা শুরু হয়েছে। এই রাস্তাতেও অবাধে চলছে টোটো। যানজট হচ্ছে।

উত্তরপাড়ার এক টোটোচালক বলেন, ‘‘রুটি-রুজির টানে অনেকেই টোটো চালাচ্ছেন। বহু চালক আছেন, যাঁদের গাড়ি কেনার ক্ষমতা নেই। এক শ্রেণির টোটোমালিক তাঁদের হাতে নিজের টোটো তুলে দিচ্ছেন। একটা কেন, দু’টো-চারটে টোটো রয়েছে, এমন মালিকও রয়েছেন।’’ পান্ডুয়ার কালনা রোড মোড়, তেলিপাড়া, হাসপাতাল চত্বরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টোটোর জেরে যানজট অব্যাহত। মগরা মোড়, বাঁশবেড়িয়া কলবাজারেরও একই অবস্থা।
সমস্যা মোকাবিলায় আরামবাগ মহকুমা প্রশাসন, পুলিশ এবং পুরসভা অবশ্য অগস্টের গোড়া থেকেই তৎপর হয়েছে। এখানে পঞ্চায়েত এলাকার টোটো শহরে ঢুকতে পারছে না। গ্রামীণ এলাকায় ঢুকছে না শহরর টোটো। জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে টোটাতে ‘রিজার্ভ’ লিখতে হচ্ছে। যাত্রী নামিয়ে খালি টোটো নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। শহরে যে শ’পাঁচেক টোটো চলে, তাদেরও যানজটপ্রবণ বাস স্ট্যান্ড থেকে গৌরহাটি মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিমি রাজ্য সড়কে চলা নিষেধ। নিষেধাজ্ঞা না মানলে জরিমানা এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রচারও চলছে। এই ব্যবস্থা কার্যকর হওযায় শহরে যানজট উধাও। স্বস্তিতে মানুষ। পুলিশ, প্রশাসন ও পুরসভার যৌথ নজরদারিও চলছে।

তৃণমূলের টোটো সংগঠনের আরামবাগ শহর সভাপতি শেখ সফিকুল আলম বলেন, ‘‘গ্রামেও টোটো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরিবহণ দফতর ও পুলিশের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পঞ্চায়েতপিছু ৫০টি টোটোকে পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। সরকারি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করা অনেকেই টোটো কিনে ব্যবসা করছেন। বেকারদের রুটি-রুজি বজায় রাখতে তা নিয়ে কড়া পদক্ষেপের দাবি করা হয়েছে।’’

হুগলিতে বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় ইঞ্জিনভ্যানেরও দাপট রয়েছে। ইঞ্জিনভ্যানের ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হয় বলে অভিযোগ। এলে আলো, হর্ন, আয়না— কিছুরই বালাই নেই। শনিবার হাওড়ায় মুম্বই রোডে কম সংখ্যায় হলেও টোটোর দেখা মিলেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chinsurah sankrail

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy