কৃষি দফতরের মাইকে প্রচার আর লিফলেট বিলিই সার! আমন ধান তোলা শুরু হতেই জমিতে পড়ে থাকা অবশিষ্ট খড় (প্রচলিত কথায় ‘নাড়া’) পোড়ানো শুরু হয়ে গিয়েছে হুগলি জেলায়। এই প্রবণতা বজায় থাকলে পরিবেশে মারাত্মক দূষণের আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা। নাড়া পোড়ানো বন্ধে যথারীতি প্রচারে জোর দেওয়ার কথা বলেছে কৃষি দফতর।
দিন চার ধরে গোঘাটের পশ্চিমপাড়া, সুবীরচক, সাতবেরিয়া, শ্যামবাজার, কর্ণপুর, শান্তিপুর ইত্যাদি এলাকায় খেতে ব্যাপক নাড়া পোড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। নাড়া পোড়ানো শুরু হয়েছে পুরশুড়া, তারকেশ্বরেও। আরামবাগে সবে ধান কাটা শুরু হয়েছে। সেখানেও নাড়া না পুড়িয়ে উপায় নেই বলে জানিয়েছেন চাষিদের অনেকে।
গোঘাটের শান্তিপুর মৌজায় রবিবার একাধিক কৃষককে নাড়া পোড়াতে দেখা গেল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁদের কেউ কেউ বললেন, এ বার দফায় দফায় প্লাবনে ধান রোয়ার কাজে দেরি হয়েছে। তাই, ধান তোলার সময়ও কিছুটা পিছিয়েছে। এখন আলু বসানোর জন্য চটজলদি জমি পরিষ্কার করতে হবে। তাই যন্ত্রে (কম্বাইন হার্ভেস্টার) ধান কাটার পরে অবশিষ্ট খড় তুলে ফেলার ঝক্কি এড়াতে পুড়িয়ে ফেলাই সঠিক মনে করছেন তাঁরা। জমি পরিষ্কার করতে শ্রমিকের খরচও বাঁচছে। তাঁদের দাবি, কৃষি দফতর নাড়া পোড়ানো বন্ধে প্রচার করলেও সহজে এবং দ্রুত জমি পরিষ্কারের রাস্তা বাতলাতে পারেনি।
আরমবাগের সালেপুরের চাষি বিদ্যাপতি বাড়ুইয়ের অভিযোগ, ‘‘খড় গুটিয়ে নিতে বছর খানেক আগে এক ধরনের রোলার দেখানো হলেও তার প্রয়োগের ব্যবস্থা হয়নি। গো-পালন প্রায় উঠে যাওয়ায় গো-খাদ্য হিসাবে খড় মজুত করার চাহিদাও নেই। এ দিকে, আলুতে ভাল ফলন পেতে ১৫ অঘ্রাণের মধ্যে আলু বসানো জরুরি।’’ তাঁর বক্তব্য, নাড়া পোড়ানো বন্ধ করতে চাষিদের বিকল্প পথ দেখাক কৃষি দফতর।
জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, নাড়া পোড়ালে পরিবেশ ও জমির কী কী ক্ষতি হয়, তা নিয়ে ধারাবাহিক প্রচার চালানো হচ্ছে। নাড়া সরাতে না পারলে জমির এক কোণে জড়ো করে রাখার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। যাতে তা থেকে ভাল সার হয় এবং জমি ও পরিবেশের ক্ষতি এড়ানো যায়। নাড়া পোড়ানো বন্ধে সাধারণ মানুষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে কৃষি দফতরের তরফে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)