E-Paper

দুর্যোগে আনাজ নষ্ট, বাজার চড়ার আশঙ্কা

চাষিরা মনে করছেন, যে পরিমাণ আনাজ মজুত আছে, তাতে আগামী তিন-চার দিন বাজারে দামের বিশেষ হেরফের হবে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:২৮
ধানের জমি জলের তলায়। খানাকুলের পোল এলাকায়।

ধানের জমি জলের তলায়। খানাকুলের পোল এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।

টানা বৃষ্টি এবং ডিভিসি-র ছাড়া জলে খেত ডুবে যাওয়ায় হাওড়া ও হুগলিতে আনাজ চাষ ক্ষতির মুখে। কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ধান চাষও।

বর্ষার মরসুমের শুরুতে বৃষ্টির অভাব আমন চাষিকে চিন্তায় ফেলেছিল। নিম্নচাপের বৃষ্টি তাঁদের বেশিরভাগের মুখে হাসি ফোটালেও কিছু ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তাও আছে। কিন্তু আনাজের দফারফার আশঙ্কা সর্বত্র। বিশেষত দামোদর-মুণ্ডেশ্বরীর পাড়ের নিচু জমিতে মাচার ঝিঙে, পটল, উচ্ছে, লাউ ইত্যাদি নষ্ট হচ্ছে। ধনেখালি থেকে চাঁপাডাঙা পর্যন্ত দামোদরের পাড়ের নিচু জমির চাষ ভাল রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীতে জেগে থাকা পলি মাটিতেও আনাজ হয়। এখন তা জলে ভরে।

চাষিরা মনে করছেন, যে পরিমাণ আনাজ মজুত আছে, তাতে আগামী তিন-চার দিন বাজারে দামের বিশেষ হেরফের হবে না। তাঁদের আশঙ্কা, এর পরে আনাজের জোগান কমবে। বাড়বে দাম। প্রভাব পড়বে মধ্যবিত্তের পকেটে।

টানা বৃষ্টিতে আরামবাগ মহকুমার মাঠঘাট জলে ভরে ছিলই। তার উপরে ডিভিসি-র ছাড়া জলে দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরীর বাঁধ বা পাড় উপচে ভাসিয়েছে খেত। খানাকুল ১ ও ২ ব্লকের ২৪টি পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা চাষিদের। একই উদ্বেগ কৃষি দফতরেরও। ওই দুই ব্লকের অধিকাংশ জমিতে বুধবার দু’ফুটের উপরে জল ছিল। খানাকুল-২ ব্লকের ধান্যগোড়ি, কাগনান, রাজাহাটি, নতিবপুর, পলাশপাই, রঞ্জিতবাটী, খানাকুল ১ ব্লকের পোল, অরুন্ডা, বালিপুর, ঠাকুরানিচক ইত্যাদি এলাকার চাষিদের অভিযোগ, জমি থেকে জল নামছে ধীর গতিতে। আনাজের পাশাপাশি কিছু জমির আউস এবং আমন ধানও (এখানে ধান চাষ কম হয়) জলে ডুবে পচতে শুরু করেছে। ঠাকুরানিচকের চাষি বিমল মাইতি বলেন, ‘‘আউস ধান প্রায় কাটার মুখে ছিল। আমন সবে ফলতে শুরু করেছিল। সব নষ্ট।’’

দামোদরের জলস্তর বেড়ে জাঙ্গিপাড়ার রসিদপুর পঞ্চায়েতের আকনা এবং সেনপুরে ধানের জমিতে জল দাঁড়িয়েছে। তারকেশ্বরের সাহাচক, চাঁপাডাঙায় ধানজমি আংশিক প্লাবিত। ধনেখালি থেকে সিঙ্গুরের বিস্তীর্ণ অংশে প্রচুর আনাজ হয়। বৃষ্টিতে এখানে আনাজ চাষিরা সর্বনাশ দেখছেন। ধনেখালির চাষি কাশীনাথ পাত্র বলেন, ‘‘আনাজের গোড়ায় জল বসলেই হলুদ হয়ে যাবে। গাছের গোড়া পচবে, ফসল খসে যাবে।’’ এ বার গরমেও বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি প্রভৃতি শীতের আনাজের জোগান ভাল মিলেছে। কাশীনাথ বলেন, ‘‘ওই সব আনাজের বেশিটাই গ্রিন শেডে হয়েছে। টানা বৃষ্টি তারও ক্ষতি করেছে।’’

যদিও জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রিয়লাল মৃধা বলেন, ‘‘এখনই ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা যাবে না। সবে জল ঢুকছে। জল দ্রুত বেরিয়ে গেলে ফসল বাঁচানো সম্ভব।’’ কৃষি দফতর সূত্রে খবর, খানাকুল ১ ও ২ এবং তারকেশ্বরে দামোদরের বাঁধের ভিতরে বিভিন্ন আনাজের জমি জলমগ্ন হয়েছে। খানাকুলের দুই ব্লকে আনাজ পুরো নষ্ট। টানা ডুবে থাকা ধান নষ্টের আশঙ্কা। পরিস্থিতি অনুযায়ী বন্যা পরবর্তী কৃষি ভাবনা নিয়ে চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

হাওড়ার আমতা ২ ব্লকে ১৩৪৪ হেক্টর জমির ফসল, ১৩৪ হেক্টর পুকুরের মাছ নষ্ট হয়েছে। মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণের জল বেড়ে এই ব্লকের ‘দ্বীপাঞ্চল’ ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা পঞ্চায়েত জলমগ্ন। দামোদরের ধারের নপাড়া, গাজিপুর, কুশবেড়িয়া-তাজপুর, ঝামটিয়া, অমরাগড়ি পঞ্চায়েতের নিচু এলাকা ডিভিসি-র জলে প্লাবিত। এই সব কারণে ফসল ও মাছের ক্ষতি হয়েছে বলে আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল জানান। ডিভিসি-র ছাড়া জলে উদয়নারায়ণপুরে কুর্চি শিবপুর, আর ডি এ পঞ্চায়েত পুরোপুরি এবং সিংটি ও হরিশপুর পঞ্চায়েত আংশিক প্লাবিত। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুলেখা পাঁজা বলেন, ‘‘ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে। হিসাব চলছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chinsurah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy