E-Paper

এক মাস এলাকা ডুবে হাঁটুজলে, দায় ঠেলাঠেলি হাওড়া পুরসভা ও রেলের

কোনও বিচ্ছিন্ন চিত্র নয়। সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনেরবাইরের এই দৃশ্য এবং জনতার দুর্ভোগ ফি বর্ষায় কার্যত সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৫ ০৯:৩১
জল-পথ: সাঁতরাগাছি আন্ডারপাসের সামনে জমা জল পেরিয়ে চলছে যাতায়াত। বুধবার।

জল-পথ: সাঁতরাগাছি আন্ডারপাসের সামনে জমা জল পেরিয়ে চলছে যাতায়াত। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ছ’বছরের অসুস্থ শিশুপুত্রকে নিয়ে কলকাতার হাসপাতালে আসার জন্য বুধবার মেদিনীপুর লোকালে সাঁতরাগাছি স্টেশনে পৌঁছেছিলেন অনুপ মাইতি ও সুর্পণা মাইতি। কিন্তু, স্টেশন থেকে বেরিয়েই হতবাক তাঁরা। সামনের রাস্তা থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ভূগর্ভস্থপথ— পুরো এলাকা ডুবে হাঁটু সমান জলে। ট্যাক্সি করে কলকাতায় যাওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় ওই দম্পতি ভেবেছিলেন, ভূগর্ভস্থপথ দিয়ে ও পারে গিয়ে কলকাতামুখী বাস ধরবেন। কিন্তু, তাঁদের সেই চেষ্টা আর ফলপ্রসূ হয়নি। বাধ্য হয়ে এক ট্যাক্সিচালককে ৫০০ টাকায় রাজি করিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন ওই দম্পতি।

কোনও বিচ্ছিন্ন চিত্র নয়। সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের বাইরের এই দৃশ্য এবং জনতার দুর্ভোগ ফি বর্ষায় কার্যত সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের বাইরের চত্বর এবং ভূগর্ভস্থপথ জলমগ্ন হয়ে থাকলেও চোখ বুজে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল এবং হাওড়া পুরসভা। রেলযাত্রীদের অভিযোগ, দুর্ভোগ কমানোর পন্থা খোঁজা তো দূর, উল্টে কেন্দ্র ও রাজ্যের এই দু’টি সংস্থা পরস্পরকে দোষারোপ করেই হাত ধুয়ে ফেলছে।

দিনের পর দিন জল জমে থাকার জন্য ভোগান্তির কারণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এক দিকে হাওড়া পুরসভার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্ত পুকুর গত কয়েক বছরে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। অন্য দিকে, সাঁতরাগাছি স্টেশনের পাশের একাধিক ঝিল, নর্দমা বুজিয়ে বাড়ানো হচ্ছে স্টেশনের পরিসর। আর এই দুইয়ের মাঝখানে পড়ে ভুগছেন ৪৭নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও রেলযাত্রীরা।’’

সাঁতরাগাছি স্টেশন চত্বরের এই পরিস্থিতি প্রসঙ্গে হাওড়া পুরসভার নিকাশি দফতরের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘গত ৪ মে রেল, রেলেরই সংস্থা ইরকন এবং কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে উড়ালপুল নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে যৌথ পরিদর্শনে আমরা দেখিয়েছিলাম, রেল কী ভাবে স্টেশনের পাশের দু’টি ঝিল এবং কয়েকটি নিকাশি নালা বুজিয়ে দিয়েছে। যার জন্য সমস্ত জল এসে জমা হচ্ছে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ভূগর্ভস্থপথ ও সাঁতরাগাছি স্টেশন রোডে।’’

যদিও এই দুর্ভোগের দায় নিতে চাননি দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। সংস্থার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওমপ্রকাশ চরণ বলেন, ‘‘যে জায়গায় জল জমছে, সেটি হাওড়া পুরসভার অধীনে। তাই, জমা জল বার করার দায়িত্বও তাদের। পুরসভার নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক না থাকার কারণেই এই পরিস্থিতি।’’ স্টেশন সম্প্রসারণ করতে গিয়ে রেল পাশের দু’টি খাল এবং দু’টি নিকাশি নালা বুজিয়ে দিয়েছে বলে যে অভিযোগ করেছে পুরসভা, সেই প্রসঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ওই কর্তা বলেন, ‘‘রেল কী কী বুজিয়েছে, সেই ব্যাপারে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা মন্ত্রককে জানাব।’’

এই চাপান-উতোরের মাঝে পড়ে আখেরে হয়রানি পোহাচ্ছেন সাধারণ নাগরিক এবং রেলযাত্রীরা। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, জল-যন্ত্রণা এড়াতে ঠিক কী করছে রেল বা পুরসভা? সে ব্যাপারে অবশ্য কোনও তরফেই সদুত্তর মেলেনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Santragachi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy