E-Paper

সরস্বতীতে কাঠামো পড়ে, গঙ্গায় ভাসছে ফুলমালা

বৈদ্যবাটী পুরসভায় গঙ্গার মুখার্জি ঘাট সাফ হলেও ছাতুগঞ্জ ও ত্রিশক্তি ঘাটে তা হয়নি। ছাতুগঞ্জে যন্ত্রের সাহায্য কাঠামো তোলা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:০৫
শ্রীরামপুর পুরসভার কুমোরপাড়া ঘাটে এভাবে কাঠামোর খড় ফেলে দেওয়া হচ্ছে গঙ্গায়।

শ্রীরামপুর পুরসভার কুমোরপাড়া ঘাটে এভাবে কাঠামোর খড় ফেলে দেওয়া হচ্ছে গঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র।

কোথাও সচেতনতা, কোথাও নয়। প্রতিমা বিসর্জনের পরে কোথাও জলাশয় সাফসুতরো। কোথাও জলাশয়ের বুকে উৎসবের ক্ষত!

সরস্বতী যে নদী, ডানকুনির কালীপুরে, চণ্ডীতলা ২ ব্লকের নৈটি পোল এলাকায় তাকে দেখে বোঝা দুষ্কর। দুই জায়গা মিলিয়ে একশোর কাছাকাছি প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। বুধবারেও ডাঁই হয়ে পড়ে কাঠামো। চণ্ডীতলা নিরঞ্জন কমিটির সদস্য তথা হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়ের যথারীতি আশ্বাস, দ্রুত কাঠামো তোলা হবে।

বৈদ্যবাটী পুরসভায় গঙ্গার মুখার্জি ঘাট সাফ হলেও ছাতুগঞ্জ ও ত্রিশক্তি ঘাটে তা হয়নি। ছাতুগঞ্জে যন্ত্রের সাহায্য কাঠামো তোলা হচ্ছে। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, কাঠামো তোলা হলেও প্রতিমার অন্যান্য সামগ্রী সহ খড় গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দূষণ অব্যাহত। পুরসভার স্যানিটারি ইনস্পেক্টর কৃষ্ণেন্দু কুন্ডুর দাবি, ‘‘কাঠামো তুলে খড় আলাদা করে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে পাঠানো হচ্ছে।’’

শ্রীরামপুরের বিভিন্ন ঘাটে প্রায় ছ’শো প্রতিমা বিসর্জন হয় বলে পুর কর্তৃপক্ষ জানান। তার মধ্যে রায়ঘাটেই দু’শোর বেশি। বুধবার রায়ঘাটে কাঠামো তুলতে ব্যস্ত এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘খড় সহ কাঠামো তোলা সম্ভব নয়। খড় কেটে গঙ্গায় ফেলে দিচ্ছি। ভেসে যাবে।’’ স্থানীয় পুরসদস্য তথা পুর পারিষদ সন্তোষ সিংহের দাবি, ‘‘নব্বই শতাংশ কাঠামোই তোলা হয়ে গিয়েছে। খড়-সহই তোলা হয়েছে। দু’একটি ক্ষেত্রে বিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে।’’ কুমোরপাড়া ঘাটেও কাঠামো থেকে গিয়েছে।

সচেতনতায় কোন্নগর এ বারও এগিয়ে। লোকনাথ ঘাটে পাম্পের সাহায্যে গঙ্গার জল তুলে হোস পাইপের মাধ্যমে প্রতিমা গলিয়ে ফেলা হয়েছে। সেই জল শোধিত হয়ে গঙ্গায় ফিরেছে। পুরপ্রধান স্বপন দাস জানান, এ ভাবে ১১টি প্রতিমার বিসর্জন হয়েছে। অন্যান্য উপকরণ পুনর্ব্যবহার করা হবে। পুরসভার বিভিন্ন ঘাটে শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। দ্রুত কাঠামো তোলা হয়েছে। শ্রীরামপুরের নেতাজি মোড় সর্বজনীন গত বছর হোস পাইপের সাহায্যে জল দিয়ে মণ্ডপেই প্রতিমা গলানোর ব্যবস্থা করেছিল। এ বার এই শহরে কোনও পুজোই সেই পথে হাঁটেনি।

চুঁচুড়া ও চন্দননগরের গঙ্গা থেকে দ্রুত কাঠামো তোলা হয়েছে। চুঁচুড়ার পুরপ্রধান অমিত রায় বলেন, ‘‘গঙ্গাকে দূষণমুক্ত রাখতে পুজো কমিটিগুলিও সহযোগিতা করেছে।’’ উত্তরপাড়ার ৯০ শতাংশ প্রতিমা দোলতলা ঘাটে ভাসান দেওয়া হয়। কাঠামো দড়ি দিয়ে পাড়ে বেঁধে রাখতে এ বারও একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘সব কাঠামো তোলা হয়েছে। মালা সহ অন্যান্য উপকরণ জলে ফেলতেই দেওয়া হয় না।’’ গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে এ বারেও হাইড্রা দিয়ে প্রতিমা গঙ্গায় নামানো হয়েছে। দ্রুত তোলাও হয়েছে। বলাগড় ফেরিঘাটও সাফ।

আরামবাগ শহরের পোলট্রি পুকুর, কাজল ডাক্তারের পুকুরের দখল নিয়েছে কাঠামো, ফুলমালা, শোলার অলঙ্কার। তালপুকুর ঘাট তুলনায় পরিষ্কার। পুরপ্রধান সমীর ভান্ডারীর দাবি, ‘‘অধিকাংশ ঘাট পরিষ্কার হয়েছে। ফুলমালা ইত্যাদি বর্জ্য দফায় দফায় সরানো হবে।’’ দ্বারকেশ্বর ও দামোদর নদ, মুণ্ডেশ্বরী নদী থেকে কাঠামো পুলিশের তদরকিতে তোলা বা বেঁধে রাখা হলেও অন্যান্য সামগ্রী ভেসে যায়। পান্ডুয়ার বিভিন্ন পুকুরে কাঠামো, ফুলমালা ভাসমান ছিল বুধবারও। বিডিও সেবন্তী বিশ্বাসের দাবি, ‘‘পুজোর আগে সমন্বয় বৈঠকে প্রত্যেক পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নিরঞ্জনের পরেই পুকুর পরিষ্কার করতে হবে। সেই কাজ চলছে।’’

পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিসর্জনে মারাত্মক জলদূষণ ঘটে। কোন্নগর, চন্দননগর, চুঁচুড়া, বলাগড়ের মতো কিছু জায়গায় সচেতনতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু অনেক জায়গায় এই ছবি হতাশাব্যঞ্জক। গঙ্গা সহ অন্যান্য নদনদী বা জলাশয় বাঁচাতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিসর্জন বা ভাসানের সঙ্গে সঙ্গেই সাফাই জরুরি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy