Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪
Jewellery shop dacoity

‘যা করার করে নে’! বন্দুক উঁচিয়ে হাওড়ার সোনার দোকান লুট ডাকাতদলের, সরাসরি চ্যালেঞ্জ পুলিশকে

সাধারণত, ডাকাতি বা চুরির ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডাকাত বা চোর সর্বাগ্রে নিজের মুখ ঢাকেন। যাতে, সিসিটিভিতে পরিচয় না বোঝা যায়। কিন্তু হাওড়ার ক্ষেত্রে ঘটল সম্পূর্ণ উল্টো ব্যাপার।

মুখ ঢাকার বালাই নেই, বন্দুক উঁচিয়ে চলছে ডাকাতি।

মুখ ঢাকার বালাই নেই, বন্দুক উঁচিয়ে চলছে ডাকাতি। — ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৪ ১৯:৫৬
Share: Save:

এমন দৃশ্য কি দেখেছে বাংলা? মুখ খোলা অবস্থায় বন্দুক উঁচিয়ে হুমকি। তার পর সিসিটিভির পরোয়া না করে সর্বস্ব লুট করে বাইক নিয়ে শহরের অলিগলিতে মিশে যাওয়া। যেন কিছুই হয়নি! আর যাওয়ার আগে মালিককে হুমকি, ‘যা করার আছে, করে নে!’ তাহলে কি সরাসরি পুলিশকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বসল ডোমজুড়ে সোনার দোকানের ডাকাতরা? এত সাহস পেল কোথায়?

হাওড়ার ডোমজুড়ের সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় সাড়া পড়ে গিয়েছে এলাকায়। বিগত দিনে সোনার দোকানে ডাকাতির যতগুলি ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটিতেই ডাকাতদের মুখ ছিল ঢাকা। কেউ মাথার হেলমেট পর্যন্ত খোলেননি। আবার যাঁরা হেলমেট খুলেছিলেন, তাঁদের মুখ ছিল ঢাকা। এমন কি দু’দিন আগে পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের সোনার দোকানে ডাকাতির ক্ষেত্রেও ডাকাতেরা এসেছিল মুখ ঢেকেই। সে দিক থেকে বড়সড় ব্যতিক্রম হাওড়ার ডোমজুড়।

পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ খদ্দের সেজে ওই দোকানে ঢুকেছিলেন দুই যুবক। কিনবেন জানিয়ে গয়না দেখছিলেন। সেই সময় দোকানে প্রবেশ আরও দু’জনের। এর পর স্বমূর্তি ধারণ করেন যুবকেরা। হাতে উঠে আসে বন্দুক। কিন্তু মুখ ঢাকার কোনও প্রয়াসই নেই! বন্দুক উঁচিয়ে দোকানের মালিককে শাসানির ছবি পুরোটাই ধরা পড়েছে দোকানে লাগানো সিসিটিভিতে। পিঠের ব্যাগে যাবতীয় গয়নাগাটি ভরে তাঁরা পালিয়ে যায় নির্বিঘ্নেই। অথচ, ওই দোকানের অনতিদূরে ডোমজুড় থানা। স্থানীয় লোকজনের দাবি, যে সময় দোকানে ডাকাতি চলছে তখন নাকি দোকানের সামনে দিয়ে গিয়েছে পুলিশের ভ্যানও। কিন্তু বাইরে কিছুই টের পাওয়া যায়নি যে, ভিতরে চলছে ওই কাণ্ড! স্থানীয়রা বলছেন, ওই সোনার দোকানের মূল প্রবেশদ্বারটি কাচের। যাতে কাচ দিয়ে দোকানের ভিতর স্পষ্ট দেখা না যায় সে জন্য পাতলা ফিল্ম সাঁটা ছিল। ফলে ভিতরে কী চলছে, তা ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি বাইরের কেউ।

ভিতরে তখন ধুন্ধুমারকাণ্ড। দোকানের মালিক লুটপাটে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে বন্দুকের কুঁদো দিয়ে মারা হয়। মাথা ফেটে যায়। সেই দৃশ্য দেখার পর আর কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এক রাউন্ড গুলিও চলে বলে দাবি দোকানের কর্মীদের। জানা গিয়েছে, যাওয়ার আগে পুলিশকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ডাকাতদলের এক সদস্য মালিককে বলে যান, ‘‘জো উখারনা হ্যায়, উখার লে’’! (বাংলায় তর্জমা করলে, যা করার করে নাও) কিন্তু এতটা বেপরোয়া ভাব কোথা থেকে এল? সাধারণত, ডাকাতি বা চুরির ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডাকাত বা চোর সর্বাগ্রে নিজের মুখ ঢাকেন। যাতে, সিসিটিভিতে পরিচয় না বোঝা যায়। কিন্তু হাওড়ার ক্ষেত্রে ঘটল সম্পূর্ণ উল্টো ব্যাপার। যা ডাকাতদলের বেপরোয়া মানসিকতারই প্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে।

ডাকাতি সেরে যে ভাবে ডাকাতদলটি যে ভাবে ডোমজুড় থানার আগে বারুইপাড়ার সরু রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়, তা দেখে পুলিশের অনুমান, বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকায় রেকি করেছে ডাকাতেরা। তাই, ডাকাতি করে পালানোর সময় কোন রাস্তা ধরলে তা হবে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ, সেই ছকও আগে থেকেই তৈরি করা ছিল। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে যে বাইক ডাকাতেরা ব্যবহার করেছিল, তারও সন্ধান করতে শুরু করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই বাইকগুলি আদতে কয়েক শো কিলোমিটার দূরের কারও। অনুমান, ডাকাতেরা জাল নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে পুলিশের চোখে ধুলো দিতে চেয়েছিল।

ডাকাতি সেরে আবার বাইক নিয়ে শহরের অলিগলি ধরে চম্পট দেয় ডাকাতদলটি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ভিনরাজ্যের কোনও গ্যাং এই কাজের সঙ্গে জড়িত। আর সেই কারণেই, মুখ ঢাকার প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করেনি ডাকাতদলটি। নিজেদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলছিল ডাকাতেরা। সেই থেকে পুলিশ মনে করছে, ডাকাতদলটি বিহার বা ঝাড়খণ্ডের হতে পারে। যদিও এখনও পর্যন্ত তাঁদের হদিস নেই পুলিশের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Gold Ornaments Loot dacoity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE