E-Paper

ঘুসুড়ির কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে আহত ছয়, বাদ গেল শ্রমিকের পা

সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে চলা ওই কারখানায় এ দিন বাতিল হয়ে যাওয়া একটি পেট্রল ট্যাঙ্কার গ্যাস কাটার দিয়ে কাটা হচ্ছিল। তখনই ওইভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৬:৪৪
A Photograph of the accident

মর্মান্তিক: এই ছাঁট লোহার কারখানাতেই বিস্ফোরণের জেরে আহত হন ছয় শ্রমিক। শুক্রবার, হাওড়ায়।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

বুধবার তখন সকাল প্রায় সাড়ে ৮টা। আচমকাই ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল উত্তর হাওড়ার ঘুসুড়ির গুহ রোড সংলগ্ন এলাকা। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেল আকাশ। ফাটল ধরল আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালে। ভেঙে পড়ল জানলার কাচ। বাসিন্দারা আতঙ্কে দৌড়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলেন।

ঘটনার উৎসস্থল, গুহ রোড সংলগ্ন ঘুসুড়ির কৃষ্ণতরণ নস্কর লেনের ঘন বসতিপূর্ণ এলাকার একটি লোহার ছাঁট কাটাইয়ের কারখানা। অভিযোগ, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে চলা ওই কারখানায় এ দিন বাতিল হয়ে যাওয়া একটি পেট্রল ট্যাঙ্কার গ্যাস কাটার দিয়ে কাটা হচ্ছিল। তখনই ওইভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। যার জেরে গুরুতর ভাবে জখম হন কর্মরত ছ’জন শ্রমিক। যাঁদের মধ্যে এক জনের বাঁ পা বাদ গিয়েছে। আর এক জন শ্রমিকের ডান হাত এতটাই জখম হয়েছে যে, সেটিও বাদ দিতে হতে পারে বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুহ রোডের আশপাশে বিভিন্ন কারখানায় দিনের পর দিনগ্যাস কাটার দিয়ে লোহার ছাঁট কাটাইয়ের কাজ চলছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের কোনও অনুমতি ছাড়াই এই ব্যবসা চালানো হচ্ছে। অথচ, কোনও অজানা কারণে আজ পর্যন্ত পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এ দিন ওই কারখানার অন্য শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অন্যান্য দিনের মতো এ দিন সকালেও গ্যাস কাটার দিয়েএকটি বাতিল পেট্রল ট্যাঙ্কার কাটাইয়ের কাজ চলছিল। ১০-১২ জন শ্রমিক সেই কাজ করছিলেন। হঠাৎই গ্যাস কাটারের ফুলকি থেকে পেট্রল ট্যাঙ্কারে জমে থাকা গ্যাসে আগুন লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে কান ফাটানো শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছ’জন আহত হন।

আহতদের মধ্যে দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকি চার জনকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন পিন্টু সিংহ (২৬), পঙ্কজ রাই (২৫), রামকুমার যাদব (২৪) ও হরিকিশোর যাদব (৫০)। এঁদের মধ্যে রামকুমারের বাঁ পা বাদ গিয়েছে। পঙ্কজের ডান হাতে গুরুতর আঘাত রয়েছে। সেই হাতটি বাদ যেতে পারে। বাকি দু’জনের আঘাতও গুরুতর। তাঁরা সকলেই লিলুয়া ও মালিপাঁচঘরা থানা এলাকার বাসিন্দা।

এ দিন ঘটনার খবর পেয়েই ওই কারখানায় ছুটে যান দমকল, মালিপাঁচঘরা থানা ও হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ আধিকারিকেরা। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার সামনে এলাকার বাসিন্দারা ভিড় জমিয়েছেন। সকলের মুখেই আতঙ্কের ছাপ। কারখানার ভিতর থেকে তখনও পেট্রলের গন্ধ ভেসে আসছে। চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে লোহার টুকরো। বিস্ফোরণস্থল থেকে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করেছেন দমকলকর্মীরা।

সৌমেন ঘোষ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘প্রতিদিনই এই কারখানায় কোনও রকম নিয়ম না মেনে শ্রমিকদের দিয়ে পেট্রল ট্যাঙ্কার কাটাইয়ের কাজ করা হয়। সেই কাজ করতে গিয়ে কালীপুজোর সময়েও বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটেছিল। কিন্তু, তার পরেও কারখানা কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কী করে, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

এই প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (উত্তর) অনুপম সিংহ বলেন, ‘‘ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হচ্ছে। দমকল কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই কারখানাটি কী ভাবে চলছিল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Accident factory injured Howrah

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy