সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে নিজের ছবির ক্যাপশনে শ্বেতা খাতুন ওরফে শ্বেতা খান ওরফে মহসিনা বেগম ওরফে ফুলটুসি লিখেছিলেন, ‘‘চারোঁ তরফ হ্যায় মেরে হি চর্চে।’’ গত শুক্রবার থেকে হাওড়ার এই মহিলাকে নিয়ে সত্যিই চর্চার শেষ নেই। উঠে আসছে তাঁকে ঘিরে একের পর এক অভিযোগ। অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছেন শ্বেতার প্রাক্তন স্বামীও। শুরু হয়েছে তাঁর শাসকদলের সঙ্গে যোগ নিয়ে শোরগোল। তবে এখনও ছেলে আরিয়ান খানকে নিয়ে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে শ্বেতা। পাকড়াওয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
সোদপুরের এক তরুণীকে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় পাঁচ মাস আটকে রেখে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে শ্বেতা এবং তাঁর পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ। তরুণীর পরিবারের দাবি, তাঁকে দিয়ে পর্ন ভিডিয়ো বানানোর চেষ্টা করেছিলেন হাওড়ার বাঁকড়ার ওই মা-ছেলে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকে শ্বেতা বা আরিয়ানের কোনও খোঁজ মেলেনি। মঙ্গলবার তাঁদের বাঁকড়ার ফ্ল্যাটের পিছন দিক থেকে একগোছা মাথার চুল উদ্ধার করেছে পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, ওই চুল সোদপুরের নির্যাতিতার। কারণ, তাঁকে নির্যাতনের সময় মাথার চুল কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে তরুণীর পরিবার।
অন্য দিকে, পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে শ্বেতার বিভিন্ন ‘কীর্তি’র কথা উঠে আসছে। অভিযোগ, দাগি অপরাধীদের সঙ্গে ছিল তাঁর ওঠাবসা। শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি দখল করতে গুন্ডা ভাড়া করেছিলেন তিনি। শ্বেতার উপস্থিতিতেই সেই গুন্ডারা গুলি চালায় বলে অভিযোগ। সেটা ২০১৫ সালের ঘটনা। তখন আগ্নেয়াস্ত্র-সমেত গ্রেফতার হয়েছিলেন বাঁকড়ার যুবতী।
এখানেই শেষ নয়। বাঁকড়া ফকিরপাড়া এলাকার পাশে জমাদার পাড়া। সেখানকার এক প্রান্তিক পরিবারের গৃহকর্তা নুর আলম জানান, ২০২৩ সালে তাঁর স্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসার কারণে টাকার প্রয়োজন হয়েছিল তাঁর। ‘বড়লোক’ বলে চিনতেন শ্বেতাকে। তাঁর কাছে দু’লক্ষ টাকা ধার চেয়েছিলেন। পেয়েও যান। নুর বলেন, ‘‘১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে সেই টাকার অঙ্ক ধার দেওয়া হচ্ছে বলে লেখা থাকলেও তাতে আরও এক লক্ষ টাকা সুদ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এক বছর পরে ফেরত দিলে সুদে-আসলে তা ফেরত দেওয়ার কথাও উল্লেখ থাকে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সম্পূর্ণ টাকা শোধ করতে পারিনি বলে বসতবাড়িতে গুন্ডাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন উনি। তারা বাড়িতে তালা মেরে দিয়ে দখল করতে গিয়েছিল। বাধা দিলে স্ত্রীকে মারধর করে ওরা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তখন শ্বেতা হুমকি দিয়ে বলেন যে, ওঁকে নাকি বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছি! স্থানীয়েরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। টাকা ধার দেওয়ার নামে ছল করে বাড়িটাই লিখিয়ে নিয়েছিলেন উনি!’’
ভোটার কার্ড এবং অন্যান্য পরিচয়পত্রে শ্বেতার নাম মহসিনা বেগম। তবে এলাকায় তাঁর পরিচিতি ফুলটুসি নামে। সেই ‘ফুলটুসি’র কথা বলতে গিয়ে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘অপরাধীদের সঙ্গে ওর ওঠাবসা ছিল।’’ এলাকার মানুষজন জানাচ্ছেন, এমন মহিলা তাঁদের এলাকায় থাকুন, সেটা চাইছেন না তাঁরা। বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘বাঁকড়ার নাম খারাপ করেছেন শ্বেতা খান। প্রয়োজনে ওঁর বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর করে প্রশাসনের কাছে দেওয়া হবে, যাতে ওই এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয় এই পরিবারকে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, ফুলটুসির সঙ্গে ওড়িশার এক ব্যবসায়ীর যোগ পাওয়া গিয়েছে। ওড়িশায় গিয়ে অশ্লীল ভিডিয়ো বানিয়েছেন তিনি। সোদপুরকাণ্ডে অভিযুক্ত ছেলে আরিয়ান এবং মা শ্বেতা খান সম্পর্কে একের পর এক কুকীর্তির নতুন তথ্য উঠে আসছে বাঁকড়া এলাকা থেকে।