Advertisement
০১ মে ২০২৪
SSc recruitment scam

‘দলের যুব সংগঠনের পদে বসেই দাপট বাড়ে শান্তনুর’

গত জানুয়ারি মাসে কুন্তল ইডি-র হাতে গ্রেফতার হন। তারপরই নিয়োগ দুর্নীতিতে শান্তনুর নাম সামনে আসে। স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে শান্তনু থাকেন শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের বারুইপাড়ায়।

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রকাশ পাল
বলাগড় শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৩
Share: Save:

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে কুন্তল ঘোষের পরে হুগলির আরও এক যুবনেতা গ্রেফতার হলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার হওয়া শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলি জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ। ঘটনাচক্রে, বলাগড়ে কুন্তলের বাড়ির সঙ্গে শান্তনুর বাড়ির দূরত্ব মাত্র কয়েক কিলোমিটারের। শান্তনুর গ্রেফতারের খবর ছড়াতেই বলাগড়ের বিভিন্ন জায়গায় চর্চা শুরু হয। এর জেরে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়ল।

গত জানুয়ারি মাসে কুন্তল ইডি-র হাতে গ্রেফতার হন। তারপরই নিয়োগ দুর্নীতিতে শান্তনুর নাম সামনে আসে। স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে শান্তনু থাকেন শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের বারুইপাড়ায়। গত ২০ জানুয়ারি এই বাড়িতে ইডি-র আধিকারিকরা হানা দেন। বেশ কয়েক ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি তাঁরা নিয়ে যান। তারপর একাধিক বার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকেরা শান্তনুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলা রাজনীতিতে শান্তনুর উত্থান তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই। তার আগে তিনি বলাগড় ব্লকে ছাত্র রাজনীতি করেছেন। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ছাত্র রাজনীতি করার সময়ই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শান্তনুর আলাপ। অভিষেকের নেতৃত্বে ‘যুবা তৃণমূল’ গঠনের পর শান্তনুই তার প্রথম জেলা সভাপতি হন। ‘যুবা তৃণমূল’ যুবর সঙ্গে মিশে গেলে শান্তনু জেলার কার্যকরী সভাপতি হন। ২০১৪ সালে জেলা যুব সভাপতি হন। তখন থেকেই জেলায় শাসক দলের রাজনীতিতে তাঁর দাপট তুঙ্গে উঠতে থাকে বলে দাবি করেছেন জেলা নেতাদের একাংশ। বলাগড়ের বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতিও হন শান্তনু। ২০১৯-এ জেলার যুব সভাপতি পদ থেকে তাঁকে সরায় দল। রাজ্যের যুব সহ-সভাপতি করা হয়।

শুরুতে জিরাট বাস স্ট্যান্ডের কাছে মোবাইলের দোকান ছিল শান্তনুর। একটি গাড়িও ভাড়া দিতেন। বাবা জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের কর্মী ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে শান্তনু সেই চাকরি পান। প্রথম কর্মস্থল খানাকুল। তার পরে বাড়ির কাছে সোমরাবাজার। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারকেশ্বর থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটে জিতে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বনে যান শান্তনু।

তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তনু নিয়মিত অফিসে যেতেন না। তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে দলেও নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। কয়েক মাস আগে বহু টাকা খরচ করে বাড়ির কাছে অসম লিঙ্ক রোডের ধারে একটি রেস্তরাঁ তৈরি করেন। স্ত্রীর নামে একটি শাড়ির বুটিক রয়েছে। তবে, তেমন চলে না। বাড়িতে তিনটি গাড়ি দেখা যেত শান্তনুর। তবে তার মধ্যে সাদা রঙের একটি দামি গাড়ি ইদানীং দেখা যাচ্ছিল না। গাড়িটি অবশ্য তাঁর নামে নয় বলে খবর। তিনি সাধারণত একটি সাদা স্করপিয়ো চাপতেন। সঙ্গে দেহরক্ষী থাকতেন।

গত বিধানসভা ভোটের সময় শান্তনুর বিরুদ্ধে বিজেপি-ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের অন্দরে। শান্তনু অবশ্য কখনও তা স্বীকার করেননি। তৃণমূলের বলাগড় ব্লকের কার্যকরী সভাপতি তপন দাসের দাবি, ''২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে আমাদের দলের সঙ্গে শান্তনুর কার্যত কোনও সম্পর্ক নেই। জেলা পরিষদেই শুধু ছিলেন। উনি গ্রেফতার হওয়ায় দলের কোনও ক্ষতি হবে না। বরং দল চাপমুক্ত হবে।’’'

আগে একাধিকবার আনন্দবাজারের কাছে শান্তনু দাবি করেছেন, দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই। তবে, কাছাকাছি থাকা এবং একসঙ্গে রাজনীতি করার সূত্রে কুন্তলকে তিনি চিনতেন। দুর্নীতিতে তাঁর নাম জড়ানোর পরে জেলা পরিষদের তৃণমূলের সদস্য অনিন্দিতা মণ্ডল দফতরে শান্তনুর ঘরে তালা লাগিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন।

বলাগড়ের বাসিন্দা দলের দুই যুবনেতা গ্রেফতার হওয়ায় জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ অস্বস্তি বৃদ্ধির কথা মানলেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না তৃণমূলের হুগলি-শ্রীরামপুর জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিচারাধীন বিষয়। তবে, তৃণমূল দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেয় না। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কিছু করে থাকলে তৃণমূলের দায় নেই। পঞ্চায়েত ভোটে এর কোনও প্রভাব পড়ারও ব্যাপার নেই।’’' বিজেপি নেতা স্বপন পালের প্রতিক্রিয়া, ''দুর্নীতিতে তৃণমূলের ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। মানুষকে যে ভাবে ওদের নেতারা ঠকিয়েছেন, উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।’’'

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Santanu Banerjee ED SSC recruitment scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE