Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Drinking water

drinking water: গঙ্গার জল এত ঘোলা, আগে দেখিনি কখনও

রবিবার থেকে গঙ্গাপাড়ের বেশ কিছু পুর এলাকায় ট্যাপকল খুলতেই ঘোলা জল বেরিয়েছে

পুরসভার গাড়ি থেকে পানীয় জল নিচ্ছেন চাঁপদানির বাসিন্দারা।

পুরসভার গাড়ি থেকে পানীয় জল নিচ্ছেন চাঁপদানির বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র।

অনিমেষ চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৩৮
Share: Save:

দু’দশকের উপরে জল সরবরাহ ব্যবস্থার কাজে যুক্ত ছিলাম। বর্ষাকালে গঙ্গার জলে অস্বচ্ছতার মাত্রা বাড়ে। কিন্তু এতটা তীব্র আগে হয়নি। রবিবার থেকে গঙ্গাপাড়ের বেশ কিছু পুর এলাকায় ট্যাপকল খুলতেই যে হারে ঘোলা জল বেরিয়েছে, তা আগে দেখিনি। আমার মনে হয়, বন্যাই এ জন্য দায়ী।

কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় সাধারণত গঙ্গার জল পরিস্রুত করেই খাওয়ার জল হিসেবে সরবরাহ করা হয়। গঙ্গার জল যেখান থেকে তোলা হয়, সেই জায়গায় (ইনটেক পয়েন্ট) জলের অস্বচ্ছতার মাত্রা (টারবিডিটি লেভেল) সাধারণ সময়ে ৬০ থেকে ১৫০ এনটিইউ (নেফলোমেট্রিক টারবিডিটি ইউনিট) থাকে। বর্ষাকালে এবং ভরা কোটালে এর মাত্রা ২৫০ এনটিইউ পর্যন্ত হয়।

টারবিডিটি অর্থাৎ জলে ভাসমান বা দ্রবীভূত ময়লাকে থিতানোর জন্য ফটকিরি বা ‘প্যাক’ (পলি অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড) মেশানো হয়। এর পরিমাণ ৬০ মিলিয়ন গ্যালন জলধারণ ক্ষমতাযুক্ত জলপ্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোগ্রাম। ব্যাকটিরিয়া মারার জন্য ওই জলে প্রতি ঘণ্টায় ১২-১৪ কিলোগ্রাম ক্লোরিন মেশানো হয়। এ ভাবে পরিশোধনের পরেও ক্লোরিন মেশাতে হয় (পোস্ট ক্লোরিন)। এমন ভাবে তা মেশাতে হয়, যাতে সরবরাহের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ, ট্যাপকল থেকে জল পড়ার সময় লিটার প্রতি ০.২ মিলিগ্রাম ক্লোরিন থাকে। কেএমডিএ-র শ্রীরামপুর প্রকল্পের জলধারণ ক্ষমতা ২০ মিলিয়ন গ্যালন। বাঁশবেড়িয়ার জলপ্রকল্পটি ১৫ মিলিয়ন গ্যালনের।

গঙ্গার জল কিছুটা সাদাটে। সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে অজয়, ময়ূরাক্ষী নদীর জল কাটোয়া, নবদ্বীপ ইত্যাদি স্থানে গঙ্গায় এসে পড়ে। তাতে গঙ্গার জলের অস্বচ্ছতার মাত্রা ১৪০০-১৫০০ এনটিইউ হয়ে যায়। বীরভূমের লাল মাটির জন্য ওই দুই নদীর জল কিছুটা লালচে। পথঘাট, মাঠ ধুয়ে জল নদীতে আসায় অস্বচ্ছতার মাত্রা আরও বেড়েছে। ফলে, গঙ্গার জলেও সেই প্রভাব পড়েছে। সর্বোচ্চ পরিমাণে ‘প্যাক’ মিশিয়েও সেই অস্বচ্ছতা কমানো যায়নি। সেই কারণেই, ঘোলা জল বেরিয়েছে।

ওই কারণেই কেএমডিএ-র তরফে বিভিন্ন পুরসভার মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করা হয়, তাঁরা যাতে ওই জল না খান। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই সঠিক। এ জন্য অবশ্য বহু মানুষের অসুবিধা হয়েছে। সেই কারণে যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যা সমাধান করা বাঞ্ছনীয়। সমস্যা সমাধানে কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়াররা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভবিষ্যতে চেষ্টা করতে হবে যাতে এই সমস্ত নদীর ঘোলা জল গঙ্গায় না মেশে। তাতেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে বলে আমার ধারণা।

(লেখক কেএমডিএ-র জল সরবরাহ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এগ্‌জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drinking water KMDA flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE